5000 টাকায় ল্যাপটপ : কম দামে ল্যাপটপ কেনার উপায়
5000 টাকায় ল্যাপটপ: বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে ল্যাপটপ অপরিহার্য ডিভাইস হিসেবে দেখা হয়। যদি আপনি ছাত্র হন, অথবা ফ্রিল্যান্সার হতে চান, বা সাধারণ ব্যবহারকারী হতে চান, একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপ কেনার ইচ্ছা আমাদের সকলেরই থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের বেশি টাকা খরচ করে ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য নেই। এজন্য আমরা অনেকেই চাই “5000 টাকায় ল্যাপটপ ” কেনার, তাই আমরা যারা 5000 টাকায় ল্যাপটপ কিনতে চাই আপনারা সম্পূর্ণ এই ব্লগ পোস্ট পড়ুন এখানে আলোচনা করব কিভাবে এতো কম দামে এই মূল্যে 5000 টাকায় ল্যাপটপ পেতে পারেন এবং কোন উপায়ে আপনি সাশ্রয়ী দামে ল্যাপটপ কিনতে পারেন।
5000 টাকায় ল্যাপটপ পাওয়ার বর্তমান বাস্তবতা
একটি নতুন ল্যাপটপ সাধারণত 25,000 থেকে 50,000 টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তাহলে, 5000 টাকায় নতুন ল্যাপটপ পাওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তবে আপনি তবে 5000 টাকা দিয়ে পুরাতন ল্যাপটপ পেতে পারেন, এর জন্য কিছু বিকল্প নিচে রয়েছে :
১. নবায়িত (Refurbished) ল্যাপটপ:
নবায়িত বা নবায়ন ল্যাপটপগুলো এমন ডিভাইস যেগুলি পুরোনো হলেও, প্রস্তুতকারক বা ল্যাপটপ বিক্রেতা তা পুনরায় মেরামত ও সচল করে বিক্রি করে থাকে। বাংলাদেশে এমন কিছু নির্দিষ্ট দোকান এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে নবায়িত ল্যাপটপ সস্তায় কেনা সম্ভব। এই মাধ্যম ব্যবহার করে আপনি 5000 টাকায় ল্যাপটপ পেতে পারেন। আপনি যদি কম বাজেটে ভালো কনফিগারেশনের ল্যাপটপ খুঁজছেন। তবে, কম বাজেটের ল্যাপটপ গুলো কেনার পূর্বে অবশ্যই তা ভালো ভাবে চেক করে কিনতে হবে।
২. সেকেন্ড-হ্যান্ড (Second-hand) ল্যাপটপ:
বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং শহরের লোকাল দোকানগুলিতে প্রতিদিন সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনা-বেচা হয়ে থাকে। যদিও ল্যাপটপ গুলো পুরোনো মডেলের , তবে আপনার অনলাইন সম্পর্কিত বা ইন্টেরনেট ব্রাউজিং সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাজের জন্য এই ল্যাপটপগুলো দিয়ে কাজ গুলো করতে পারেন। এই 5000 টাকায় ল্যাপটপ গুলো কিনতে আপনি ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, বিক্রয়, এবং অন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং কি ও ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
৩. মোবাইল থেকে ল্যাপটপের বিকল্প:
সাধারণত আপনারা যারা ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ডকুমেন্ট এডিটিংয়ের কাজ করেন, তাদের জন্য কিছু এন্ড্রয়েড বা অন্যান্য মোবাইল ডিভাইস, যা কীবোর্ড এবং স্ক্রিনের মাধ্যমে কাজ করে, ল্যাপটপ ছাড়াও করা যায় । 5000 টাকার মধ্যে কিছু ট্যাবলেট বা স্মার্ট ডিভাইস রয়েছে যেগুলি কম মূল্যের ল্যাপটপের চাইতে অধিক ভালো।
5000 টাকায় ল্যাপটপ কেনার সময় যা বিবেচনা করবেন
একটি ল্যাপটপ কেনার সময় ল্যাপটপের বিশেষ কিছু ডিভাইসের দিকে খেয়াল রাখা উচিত, বিশেষ করে যদি এটি সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ হয়।
১. ল্যাপটপের অবস্থা (Condition):
পুরাতন ল্যাপটপ কেনার পূর্বে ল্যাপটপটি কতদিন ব্যবহৃত হয়েছে এবং এর ভেতরে কোনো বড় ধরনের সমস্যা আছে কিনা তা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: ল্যাপটপ স্ক্রিন, কীবোর্ড, এবং বডির অবস্থা ভালোভাবে চেক করুন।
২. প্রসেসর এবং RAM:
প্রসেসর এবং RAM একটি ল্যাপটপের কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করে। পুরোনো ল্যাপটপের মডেলগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত কম স্পেসিফিকেশন থাকতে পারে, তবে সাধারণ কাজের জন্য মিনিমাম ২ GB থেকে ৪ GB RAM এবং ইন্টেল Core i3 বা সমমানের প্রসেসর যথেষ্ট।
৩. ব্যাটারির অবস্থা:
ল্যাপটপের কাজ করার ক্ষেত্রে ল্যাপটপের ব্যাটারি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপের ক্ষেত্রে। ব্যাটারির আয়ু কতটুকু বাকি আছে এবং এটি কতক্ষণ চলবে তা যাচাই করুন।
৪.স্টোরেজ স্পেস (HDD/SSD):
ডকুমেন্ট এবং অনন্য তথ্য ল্যাপটপে রাখার ক্ষেত্রে ল্যাপটপের স্টোরেজ স্পেসও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাধারণত ২৫০ GB থেকে ৫০০ GB হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়। তবে ল্যাপটপে SSD-যুক্ত ল্যাপটপগুলো দ্রুত কাজ করে, তাই সম্ভব হলে SSD মডেল নিন।
৫. ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন পলিসি:
সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কিছু লোকাল বিক্রেতা সীমিত সময়ের জন্য ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকেন। এবং সেই সাথে রিটার্ন পলিসি আছে কিনা তা যাচাই করুন।
কোথায় পাবেন 5000 টাকায় ল্যাপটপ ?
এখন প্রশ্ন আসে, কোথায় সস্তায় ল্যাপটপ পাওয়া যাবে? নিচে কিছু নির্দিষ্ট জায়গা এবং প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করা হলো যেখানে আপনি এরকম দামে ল্যাপটপ কিনতে পারেন:
১. অনলাইন মার্কেটপ্লেস:
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ পাওয়া যায় 5000 টাকা থেকে শুরু করে 50,000 টাকায় ও ল্যাপটপ যায়। উদাহরণস্বরূপ:
- Bikroy.com: এটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় অনলাইন ক্লাসিফায়েড সাইট যেখানে নতুন এবং পুরানো পণ্য কেনাবেচা হয়। এখানে 5000 টাকায় সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব।
- Ekhanei.com: এটি আরেকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে সাশ্রয়ী দামে সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ পাওয়া যায়। এখনও অনেক ল্যাপটপ বিক্রেতা 5000 টাকায় ল্যাপটপ বিক্র্রি করে থাকেন। এবং প্র্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন।
২.ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এবং গ্রুপ:
বর্তমানে অনেক ফেসবুক গ্রুপ এবং ফেসবুক মার্কেটপ্লেসেও অনেক ফাসেবুক ব্যবহারকারী সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনা-বেচা করেন। গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে অল্প দামে আপনি সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় ল্যাপটপটি খুঁজে পেতে পারেন।
৩. লোকাল দোকান:
লোকাল ইলেকট্রনিক্স দোকানগুলোতে মাঝে মাঝে পুরোনো ল্যাপটপ পাওয়া যায়। যেমন: ঢাকার মালিবাগ, নিউমার্কেট, অথবা গুলশান এলাকায় এমন অনেক দোকান রয়েছে যেখানে এই ধরনের ল্যাপটপ বিক্রি হয়। এবং 5000 টাকায় ল্যাপটপ ও বিক্রি হয়। এছাড়াও কম্পিউটার মার্কেটগুলোতে পুরানো ল্যাপটপের দোকান রয়েছে।
5000 টাকায় সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার সুবিধা এবং অসুবিধা
সুবিধা:
১. মূল্য সাশ্রয়: পুরোনো ল্যাপটপ কেনার অন্যতম বড় সুবিধা হলো কম মূল্যে পাওয়া।
২. বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ পাওয়া: আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং মডেলের মধ্যে বেছে নিতে পারেন, যা নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কম হতে পারে।
অসুবিধা:
সীমিত ওয়ারেন্টি: পুরোনো ল্যাপটপে নতুন পণ্যের মতো ওয়ারেন্টি পাওয়া যায় না।
পুনরায় মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে: কিছু ল্যাপটপের ক্ষেত্রে মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে, যা আপনার জন্য অতিরিক্ত খরচের কারণ হতে পারে।
অ্যাডভান্সড ফিচারের অভাব : পুরোনো মডেলগুলিতে আধুনিক সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার ফিচার থাকতে নাও পারে।
নিরাপদে সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার জন্য টিপস:
বিশ্বস্ত বিক্রেতা থেকে কিনুন: অনলাইনে কেনার ক্ষেত্রে, বিশ্বস্ত এবং অধিক রিভিউ-যুক্ত বিক্রেতা থেকে ল্যাপটপ কিনুন।
কাগজপত্র দেখুন: ল্যাপটপের সাথে বিল বা ল্যাপটপ টি কখন ক্র্রয় করা হয়েছে তা সম্বব হলে দেখুন।
ক্যাশ-অন-ডেলিভারি বেছে নিন : অনলাইনে ল্যাপটপ কেনার সময় সুরক্ষার জন্য ক্যাশ-অন-ডেলিভারি অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন, যেখানে আপনি পণ্য পরীক্ষা করে তারপর টাকা পরিশোধ করবেন।
5000 টাকায় ল্যাপটপের বিকল্প সমাধান
যদি আপনি 5000 টাকার মধ্যে ল্যাপটপ খুঁজে না পান, তবে কিছু বিকল্প ডিভাইস হিসাবে অনন্য ডিভাইস গুলো দেখতে পারেন। যেমন:
ট্যাবলেট: বর্তমানে কিছু কম মূল্যের ট্যাবলেট রয়েছে যা ল্যাপটপের মতো ব্যবহৃত হতে পারে, বিশেষত যদি কীবোর্ড অ্যাড-অন ব্যবহার করা হয়। এগুলো লেখালেখি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, এবং ভিডিও কলের জন্য খুব ভালো।
মোবাইল ফোন: আজকের অনেক স্মার্টফোন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সেগুলি অনেকটা ল্যাপটপের মতোই কাজ করতে পারে। আপনি মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ কীবোর্ড সংযুক্ত করে ডকুমেন্ট এডিটিং বা ইমেল লেখার মতো কাজ করতে পারেন।
উপসংহার :
5000 টাকায় ল্যাপটপ পাওয়া কঠিন, তবে কিছু ভালো মানের সেকেন্ড-হ্যান্ড ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব। অনলাইনে বা লোকাল মার্কেটপ্লসে। অনলাইনে বা লোকাল মার্কেটপ্লেস থেকে কেনার সময়, ল্যাপটপের অবস্থা, ব্যাটারি, এবং ওয়ারেন্টি যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। কম দামে ভালো ল্যাপটপ পাওয়ার জন্য সেকেন্ড-হ্যান্ড বা ল্যাপটপ খুজুন। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে ল্যাপটপ কিনতে পারলে, এটি আপনার বাজেটের মধ্যে থেকে আপনার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম। তবে, দীর্ঘমেয়াদী কাজের জন্য হলে নতুন ল্যাপটপ কেনাই যুক্তিযুক্ত।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url