৬ দফা গুলো কি কি ও ৬ দফা আন্দোলন গুলো সম্পর্কে জেনে নিন
৬ দফা গুলো কি কি ? বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে তথা বাঙ্গালীর সংগ্রামের ইতিহাসে ৬ দফা গুলো এই বাংলাদেশ সৃষ্টির অন্যতম দাবি। যে ৬ দফা দাবি গুলো উত্থাপন করা না হলে হয়তো আমরা আমাদের এই বাংলাদেশ পেতাম না। নিচে ৬ দফা গুলো কি কি? ও ৬ দফার সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো।
৬-দফা কি ?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ৬-দফা কর্মসূচি ভূমিকা অনন্য এবং অসাধারণ। এই কর্মসূচী ভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা লাভ করে। ৬-দফা ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ৬-দফাতে পাকিস্তানকে চাওয়া হয়নি যা, চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করতে।
৬ দফা আন্দোলন - ৬ দফা গুলো কি কি ?
নিচে ৬ দফা গুলো কি কি দেখুন - দি ডেইলি লার্ন
৬ দফা গুলো কি কি: তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নিম্নলিখিত ৬ দফা দাবি গুলো উপস্থাপন করেন:
১ম দফা: শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি: পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র। এর ভিত্তি হবে লাহোর প্রস্তাব। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান এ উভয় আঞ্চলকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশসমূহ পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির। প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আইনসভা হবে সার্বভৌম।
২য় দফা: কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার হতে থাকবে দেশ রক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয় অঙ্গরাজ্য সমূহ এর হাতে থাকবে।
৩য় দফা: মুদ্রা ও অর্থ ব্যবস্থা: এ দফায় দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিকল্প দুটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
- স্বতন্ত্র মুদ্রা ব্যবস্থা: দেশের দু'অঞ্চলের জন্য সহজে বিনিময়যোগ্য দুটি মুদ্রা ব্যবস্থা চালু থাকবে। এ ব্যবস্থায় মুদ্রার লেনদেন হিসাব রাখার জন্য অঞ্চলে দুটি স্বতন্ত্র স্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রা ও ব্যাংক পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে।
- একই মুদ্রা ব্যবস্থা: দু'অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে তবে শাসনতন্ত্র এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে এক অঞ্চল থেকে মুদ্রা ও মূলধন অঞ্চলে পাচার হতে না পারে। এ ব্যবস্থায় পাকিস্তানের একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। এবং অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে।
৪র্থ দফা: রাজস্ব, কর ও শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা: সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ও কর কর ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশের সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেল তহবিলে জমা হবে। শাসনতন্ত্রে এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাংক সমূহের বিধান থাকবে।
৫ম দফা: বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য: বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রদেশগুলোর হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকবে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্যের ব্যাপারে প্রদেশগুলো যুক্তিযুক্ত হারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মিটাবে।
৬ষ্ঠ দফা: প্রতিরক্ষা: আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে প্রদেশগুলোকে নিজস্ব অতীতের অধীনে আধা-সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনা বাহিনী গঠন ও পরিচালনা করার ক্ষমতা দেওয়া হবে। ১৯৬৬ সালের ১৩ ই মার্চ আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফা কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ছিল মূলত পূর্ব-পাকিস্তানবাসী বাঙ্গালীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবী। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে বাঁচার দাবি।
পরিশেষে, পড়ুন ৬ দফা গুলো কি কি এই সম্পর্কে কিছু কথা
সার্বভৌম ও স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে এই ৬ দফা দাবির ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাকিস্তান বিভক্তি থেকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এর মূল পতিপাদ্য এবং উৎস ছিলো এই ৬ দফা গুলো। আর এই জন্যই বলা হয় বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য ৬ দফা আন্দোলন ছিলো অন্যতম।
এই পর্বে স্বাধীন বাংলার ইতিহাস ৬ দফা গুলো কি কি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ৬ দফা গুলো কি কি এই পোস্ট পড়ে আশা করি আপনারা ৬ দফা গুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এবং আপনার বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে শেয়ার করুন ৬ দফা গুলো কি কি এই ইতিহাস। এমন শিক্ষণীয় সব তথ্যের জন্য ফলো করুন দি ডেইলি লার্ন।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url