১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর | The Daily Learn
১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর এই পর্বে ১৯৭০ এর নির্বাচন ইতিহাস প্রথমবারের মতো বাঙ্গালির সামর্থ্য প্রদর্শন ও নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হলো নিচে পড়ুন।
ভূমিকা: ১৯৭০ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এক মাইলফলক। কেননা এ নির্বাচন এর মাধ্যমে বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো নিজেদের সম্মিলিত শক্তি প্রদর্শন করার ক্ষ মতা লাভ করে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৭০ এর নির্বাচন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ইতিহাসে এ নিবার্চন একটি অনন্য ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয়। যা ছিলো বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে এ নির্বাচনের প্রভাব অসামান্য। কেননা এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাঙ্গালি জাতি প্রথমবারের মতো নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা অর্জন করতে সামর্থ্য হয়। তবে হটাৎ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে দীর্ঘ পথ পরিক্রম ঘটনা,আন্দোলন ,সরকারি বেসরকারি উদ্দ্যোগ ও অনন্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭০ সালে ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে সংঘটিত হয় এই সাধারণ নির্বাচন। যার পিছনে মুখ্য পালন করেছিলো আওয়মী লীগ বিশেষত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের বলিষ্ট নেতৃত্ব ছিলো সর্বোপরি।
নিচে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর হলো-দি ডেইলি লার্ন
১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব: ১৯৭০ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে একমাত্র সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি নিম্নে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হলো :
১. বাঙালির জাতীয়তাবাদের পরিপূর্ণতা লাভ: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও রাজনৈতিক শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরিপূর্ণতা লাভ করে।
২. বাঙালি জাতির সংহতি: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের ফলে বাঙ্গালীদের মধ্যে রাজনৈতিক সংহতি দৃঢ়তর হয় এবং তারা নতুন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ওঠে।
৩. উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে। বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পথ দেখায়।
৪. রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ববাংলা রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীদের জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন।
৫. সংগ্রামী মনোভাব সৃষ্টি: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয় বাঙ্গলীদের মধ্যে সংগ্রামী মনোভাব জাগ্রত করে। আর এই মনোভাবের আপামর জনসাধারণ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস অর্জন করে।
৬. পাকিস্তানের মৃত্যুর বার্তাবাহক : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানের কোন আসন লাভ করেনি। তেমনই পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পিপিপি-ও পূর্ব পাকিস্তানের কোন আসন লাভ করতে সক্ষম হয়নি এতে। প্রতীয়মান হয় যে পাকিস্তানের এক অংশের জনগণ অপর অংশের জনগণকে সমর্থন করেনা। যা পাকিস্তান বিভক্তিকরণের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। এই কারণে অনেকে ১৯৬৯ সালের নির্বাচনকে পাকিস্তানের মৃত্যুর বার্তা বাহক হিসেবে মনে করেন।
৭. জাতির অনৈক্যর প্রকাশ: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে যে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে পাকিস্তানের কোন ভিত্তি নেই। নির্বাচনে জনসাধারণের প্রদত্ত রায় দ্বারা তাদের আদর্শগত বিচার-বিবেচনা গত বৈশিষ্ট ফুটে ওঠে।
৮. ছয়-দফার গুরুত্ব প্রকাশ : ১৯৬৬ সালে প্রণীত হয় ছয়-দফাকে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ব্যাপকভাবে ভোট দানের মাধ্যমে ছয় দফা কে স্বাগত জানায়।
৯. পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্বনাশ: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করলে পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব কমতে থাকে। তাই অসহযোগ আন্দোলনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের নির্দেশে পূর্ববাংলা পরিচালিত হতে থাকে।
১০. প্রথম সাধারণ নির্বাচন: ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্ব-শাসন ও আত্মপ্রতিষ্ঠার দাবী আদায় করতে সুযোগ পেয়েছিল।
১১. সংবিধান প্রণয়ন: একটি দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান প্রয়োজন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করেন।
১২. স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত হলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় জাগে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে।
উপসংহার: আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ নির্বাচনের ফলাফল পাকিস্তানের মৃত্যুবার্তা ঘোষণা করে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম লাভের পেছনে নির্বাচন এর ফলাফল হস্তান্তরের তালবাহানা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল।
আরো পড়ুন : ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি গুলো কি কি দেখে নিন ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url