লাহোর প্রস্তাব কি ? এবং লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য

লাহোর প্রস্তাব কি এবং লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য ভারত এর শাসনতান্তিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক ঘটনা। যে প্রস্তাবের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। নিচে লাহোর প্রস্তাব কি ? এবং লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য বিস্তারিত জানুন।

লাহোর প্রস্তাব কি ? এবং লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য

লাহোর প্রস্তাব কি ?

শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ মে  লাহোর অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ সম্মেলনে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবি জানিয়ে প্রস্তাব পেশ করে তাই ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। 

লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য

লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য: লাহোর প্রস্তাবের মূলধারা বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় : 

১. স্বায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন অঙ্গরাজ্য: লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে মুসলমানদের জন্য সকল স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে তাদের সকল প্রদেশ জাউঙ্গা রাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও স্বাধীন। 

২. মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ: লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এতে বলা হয় যে লাহোর প্রস্তাবে যে সকল বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো পরবর্তীতে দেশের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনার মৌলিক নীতি গৃহীত হবে। 

৩. মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন: লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও  পূর্ব অঞ্চলে মুসলমানদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠনের কথা বলা হয়। 

৪. সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ:  লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে নতুন ভাবে গঠিত রাষ্ট্রসমূহের বাইরে ভারতের অন্যান্য জায়গায় যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু থাকবে, সেখানে মুসলমানদের সাথে পরামর্শক্রমে তাদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক প্রশাসনিক ও অন্যান্য অধিকার এবং সার্থক সংবিধানের সংরক্ষণ করতে হবে। 

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য : ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে , এতে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নেতার সাথে ঘোষণা করে যে  ১৯৩৫ সালের আইনে যে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা করা হয়েছে তা ভারতের উদ্ভূত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অসঙ্গত ও অকার্যকর।  তাই ভারতীয় মুসলমানগণের নিকট  ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য। 

৬. সংখ্যালঘুদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত।: আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই প্রস্তাবে বলা হয় নতুন ভাবে গঠিত অঙ্গরাজ্য সমূহ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও শান্ত অধিকার রক্ষা করার জন্য ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান এ বিভিন্ন রকম রক্ষাকবচ উল্লেখ থাকতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। । 

৭. মুসলিম সম্মতি সম্বলিত সংবিধান: ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে বলা হয় যে, প্রণীত সমস্ত সাংবাদিক পরিকল্পনা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে নতুবা মুসলমানগন অসন্তুষ্ট হবে। আর, ভবিষ্যতে যে সংবিধান রচিত হবে তাতে অবশ্যই মুসলমানদের অনুমোদন ও সম্মতি থাকতে হবে।  তা না হলে কোন সংশোধিত পরিকল্পনা মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। 

৮. মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর সীমানা পরিবর্তন: ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা জন্য প্রয়োজন সীমানার পরিবর্তনের কথা বলা হয়।  

৯.  লাহোর প্রস্তাবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে -এতে বলা হয় যে ভারতে মুসলমানদের সম্মতি ছাড়া কোন শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনার কার্যকরী হবে না। এটি প্রয়োজন সীমানার পুনঃবিন্যাস সাধন ও বুলবুলি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো সমন্বয় সাধন সহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। 

১০. অঞ্চল  হিসেবে চিহ্নিত করন:  লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে ভৈগোলিক  অবস্থান অনুযায়ী পাশাপাশি সংলগ্ন সন্নিহিত সংস্থাসমূহকে হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। 

উপসংহার:  পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় লাহোর প্রস্তাব এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।  ভারতীয় মুসলমানগন বিভিন্ন সময় হিন্দুদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে উপলব্ধি করতে সচেষ্ট হন যে, পৃথক আবাসভূমি ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই মুসলমানদের এই চিন্তাধারার ফলশ্রুতি হচ্ছে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।

লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য/গুরুত্ব /ফলাফল 

ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব কে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্টিত গোটা ভারতীয় অধিবেশনে মুসলিমলীগ মুসলমানদের জন্য পৃথক পৃথক আবাসভূমিরআবেদন জানিয়ে এ.কে.ফজলুল হক এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। যা হলো ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। নিচে লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য ও গুরত্ব তুলে দোর হলো :

লাহোর প্রস্তাবে উপমহাদেশে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের বইগুলি গুরুত্ব ভাষাগত ও  কৃষ্টির  পার্থক্য দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবের ফলে ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনের গতিধারাই নতুন প্রভাব সৃষ্টি হয়। 

মুসলিম লীগ পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।  কংগ্রেস পাকিস্তান আন্দোলন তথা ভারত বিভক্তির বিরোধিতা করতে থাকে ফলে ভারতের সর্বোচ্চ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয় এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেখা যায়। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয় কংগ্রেস ও ব্রিটিশ সরকার অনুধাবন করতে পারেন যে ভারত বিভক্তির ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।  লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী বিভক্তি এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম নেয়। 

উপসংহার:  লাহোর প্রস্তাব বৃটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে মুসলিম স্বার্থ রক্ষা একটি অবিস্মরণীয় দলিল এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার না হলে অখণ্ড  ভারতের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ত সম্ভব হতো না।  

আরো পড়ুন : আয় করুন লাখ টাকা অনলাইনে আর্টিকেল লিখে জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

সার্চ ট্যাগ

  • লাহোর প্রস্তাব কি
  • লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য
  • লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন
  • লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য
  • লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url