একার্থক পরিকল্পনা ও স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য

প্রকৃতি অনুযায়ী পরিকল্পনা কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ১. একার্থক ২. স্থায়ী পরিকল্পনা।একার্থক পরিকল্পনা ও স্থায়ী পরিকল্পনার পার্থক্য। প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রহণ করা হলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে একার্থক পরিকল্পনা ও স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

একার্থক পরিকল্পনা ও স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য

যে পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানেই নতুন কোন পরিকল্পনা গ্রহণ বা নতুন কোন অবস্থার সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত একবার গৃহীত হয় বারবার ব্যবহৃত হয় তাকে স্থায়ী পরিকল্পনা বলে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কিছু না কিছু পৌনঃপুনিক সমস্যা দেখা যায়। তাই প্রায় প্রতিষ্ঠানেই কিছু কিছু স্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী পরিকল্পনা কে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস পেয়েছেন। যার পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো :

একার্থক পরিকল্পনা ও স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য

বিশেষ দ্রষ্টব্য : যে, ১মে  একার্থক পরিকল্পনা এবং ২য় তে স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হয়েছে। যেমন : ১ম সংজ্ঞা টি খেয়াল করুন।

সংজ্ঞা:

  • বিশেষ কোনো পরিস্থিতি বিশেষ কোনো সমস্যা মোকাবেলার জন্য যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাকে একার্থক পরিকল্পনা বলে।
  • পৌনঃপুনিক সমস্যার সমাধান বা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে পরিকল্পনা বারে বারে ব্যবহৃত হয় তাকে স্থায়ী পরিকল্পনা বলে। 

পরিকল্পনার কার্যকাল:

  • একার্থক পরিকল্পনা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে লক্ষ্য অর্জনের স্বল্পকালের জন্য প্রণীত হয়।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা একবার প্রণীত হওয়ার পর পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদের কার্যকারী হয়।

পরিকল্পনার সমাপ্তি:

  • উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে গেলেই এ ধরনের পরিকল্পনা পরিসমাপ্তি ঘটে।
  • নতুন কোন পরিকল্পনা বা পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরিকল্পনা বারবার ব্যবহৃত হয়। 

প্রকারভেদ :

  • একার্থক পরিকল্পনা চার ধরণের হয় যেমন প্রদান কর্মসূচী , খন্ড পরিকল্পনা ,বিশেষ কর্মসূচি ও ব্যাপক পরিকল্পনা। 
  • এরূপ পরিকল্পনা তিন ধরনের হয় যথা নীতি,প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি।

ব্যয় :

  • ব্যয় বিশেষ বিশেষ অবস্থায় বার বার এরূপ পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হয় বলে এতে ব্যয় এর পরিমাণ অধিক হয়। 
  • স্থায়ী পরিকল্পনা পুনঃপুন  ব্যবহৃত হয় বলে এতে ব্যয়ের পরিমাণ কম হয়।

সতর্কতাঃ

  • একার্থক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা বেশি সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে না।

নমনীয়তা :

  • একার্থক পরিকল্পনা বিভিন্ন সময়ে বারবার গ্রহণ করার ফলে এতে নমনীয়তার সুযোগ বেশি থাকে।
  • দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনার পর এটি ব্যবহৃত ও দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হওয়ায় এতে নমনীয়তার সুযোগ কম থাকে।

ব্যর্থ ক্ষেত্র :

  • বিশেষ ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্রে একার্থক পরিকল্পনা ব্যবহৃত হয়।
  • প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে এরূপ পরিকল্পনা ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

কার্যভার বৃদ্ধি :

  • একার্থক পরিকল্পনা বারবার প্রনয়ণ করতে হয় বলেই নির্বাহীর  অধিক সময় ব্যয় হয় এতে তার কার্যকর বৃদ্ধি পায়।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা বারবার প্রয়োগ করতে হয় না বলে ব্যবস্থাপকের কার্যভার লাঘব হয়।

তদারকি :

  • একার্থক পরিকল্পনা বারবার তদারক করতে হয়।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা বারবার তদারক করার প্রয়োজন হয় না।

বাস্তবায়নে সমস্যা :

  • একার্থক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্বাহীকে অধিক সর্তকতা অবলম্বন করতে হয় কারণ এর বাস্তবায়ন অধঃস্তন অধিক ভুল করে।
  • বারবার একই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় বলে নির্বাহীকে কর্ম সতর্ক হলেও চলে। কাজ করতে অধঃস্তন/ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

একঘেয়ামি :

  • প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা কর্মীদের কাজের একঘেয়েমি দূর হয়।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা বারবার ব্যবহার করার ফলে কর্মীদের মধ্যে একটি একঘেয়ামি ভাব  সৃষ্টি হয়।

বৈচিত্রতা :

  • এক্ষেত্রে নতুন নতুন অবস্থায় নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা এতে বৈচিত্রতার সুযোগ থাকে।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয় বলে এতে বৈচিত্রতার সুযোগ কম থাকে।

প্রণয়ন সময় :

  • প্রণয়ন সময় পরিকল্পনায় নির্বাহীকে অধঃস্থন এর পরিচালনা জন্য কম সময় দিতে হয়।
  • স্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন বেশি সময় লাগে।

পরিশেষে বলা যায় যে, একার্থক পরিকল্পনা ও  স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে।  স্থায়ী পরিকল্পনা সার্বিক বিচারে অধিক ফলপ্রদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষ একার্থক পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই।

আরো পড়ুন : ক্রেতা ও ভোক্তা কি ? ক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে পার্থক্য দেখে নিন। 

উপসংহার: উপরোক্ত সংজ্ঞা ও আলোচনার আলোকে বলা যাই যে , পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কার্যাবলীর সম্পাদনের জন্য বার বার ব্যবহার করা হয় তাকে স্থায়ী পরিকল্পনা বলে। এই পরিকল্পনা একবার গ্রহণ করা হলে নতুন পরিকল্পনা না করা পর্যন্ত নতুন অবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বার বার ব্যবহৃত হয় যা একার্থক পরিকল্পনা ও স্থায়ী পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য উপস্থাপিত হয়েছে।। একবার গৃহীত হয়ে বার বার ব্যবহৃত হয় বলে পরিকল্পনা ব্যয় অনেক কম হয় এবং পরিকল্পনা তৈরির ঝামেলা থেকে প্রতিষ্ঠান রক্ষা পায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url