দ্বি জাতি তত্ত্ব কি ? ও দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো
দ্বি জাতি তত্ত্ব হলো মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষিত ' হিন্দু - মুসলমান দুটি পৃথক জাতী ' এ দ্বি-জাতি তত্ত্ব বা নীতির ভিত্তিতে জিন্নাহ মুসলমানদের যে পৃথক জাতিসত্তার দাবি করে তাই দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত বা যাকে দ্বি-জাতি তত্ত্ব বলে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষিত দ্বিজাতি তত্ত্বই পাকিস্তানের মূল্য ভিত্তি। 'এক জাতি -এক রাষ্ট্র' এ মতবাদ বিষ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করতে থাকে।
দ্বি জাতি তত্ত্ব কি ও দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো
দ্বি জাতি তত্ত্ব : ১৯৩৭ সালে ভারত স্বায়ত্তশাসন কার্যকর হলেও মুসলমানরা উপেক্ষিত হতে থাকে। এমন অবস্থায় ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতি ভাষণে মুসলমান ও হিন্দুদের জাতিসত্তা সম্পর্কে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেন তাই দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত।
দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা : ভারতবর্ষে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ১৯৩৭ সালের নির্বাচন এ পরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে কংগ্রেস এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে মুসলিম লীগের মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। কংগ্রেসের শাসনাধীন প্রদেশ সূমহ মুসলমাদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চলতে থাকে। এর ফলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এরূপ পরিস্তিথিতে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার এই দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন। তিনি ধর্মীয় দিক কে প্রাধান্য দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানকে দুটি পৃথক জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এ ভাষণে জিন্নাহ বলেন, 'যে কোন আন্তর্জাতিক মানদন্ডে মুসলমানরা একটি জাতি। তাই তাদের একটি পৃথক আবাসভূমি প্রয়োজন, প্রয়োজন একটি ভূখণ্ডের এবং একটা রাষ্ট্রের। জিন্নাহ তিনি তার দ্বিজাতি তত্ত্বের পক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি পেশ করেন-
১. ভারত শুদু একটি দেশ নয় একটি উপমহাদেশ।
২. যে ভিত্তিতে এ মহাদেশে হিন্দুরা ও একটি জাতি , সে ভিত্তিতে মুসলমানরাও একটি জাতি।
৩. মুসলমানদের ভাষা , শিল্পকলা , সাহিত্য ,ও তাদের নৈতিক বিধান ,আচার ব্যবহার, ইতিহাস হিন্দুদের থেকে ভিন্ন।
৪. হিন্দু-মুসলিম জনগণঅনুপেরনা লাভ করে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে। অতএব আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা আমরা একটি জাতি জিন্নাহর দ্বিজাতি।
জিন্নার এ তত্ত্বই দ্বিজাতি তত্ত্ব।
তিনি আরো বলেন, আমরা দৃঢ় ভাবে মনে করি জাতিসত্তার যেকোনো সংখ্যা বিচারে ভারতের হিন্দু মুসলমান দুটি ভিন্ন প্রজাতি। ভারতের ১০ কোটি মুসলমানের রয়েছে নিজস্ব স্বতন্ত্র, সংস্কৃতি, সভ্যতা, রীতিনীতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য এবং অভিন্ন জীবন পদ্ধতি। " এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর যে হিন্দু-মুসলমান ইতিহাসের স্বতন্ত্র উৎসাহ অনুপ্রেরণা লাভ করে থাকে তাদের মহাকাব্য ভিন্ন তাদের বীর সেনানী গণতন্ত্র এবং যে কোন বিষয়ে ভিন্ন একজনের কাছে যা পবিত্র অন্যজনের কাছে তা হাস্যকর।" " তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে ইচ্ছা পোষণ করি। "
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের মুসলমানরা একটি পৃথক জাতি। এটি দ্বিজাতি তত্ত্বের একটি মূল বক্তব্য। এ দ্বিজাতি তত্ত্বই হলো ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মূল ভিত্তি। এদিক থেকে বিবেচনা করলে দ্বি জাতি তত্ত্বের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী।
আরো পড়ুন : লাহোর প্রস্তাব ও লাহোর প্রস্তাব এর বৈশিষ্ট ও তাৎপৰ্য জেনে নিন
আমাদের কথা, তৎকালীন মুসলিম লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম এবং হিন্দু আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলো। যেহুতো , মুসলিম একটি জাতি হিন্দু আরেকটা জাতি তারা একসাথে না আলাদা আলাদা থাকবে কোনো জাতি অন্য জাতির ধর্ম নিয়ে কিছু বলতে পারবে না এবং জাতি হিসাবে কারো সাথে করো সংস্কতি , সাহিত্য , নৈতিক বিধান নিয়ে ঝামেলা হবে না মূলত এটাই ছিল জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব এই পর্বে দ্বি জাতি তত্ত্ব কি ও দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো যার মূল বিষয় বস্তু তুলে ধরা হয়েছে।
অসম্ভব ভালো লাগলো