মুক্তিযুদ্ধের কয়টি সেক্টর গঠন করা হয় ও সেক্টর গুলো কি কি ?

মুজিবনগর সরকার ১১ টি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরে বাংলাদেশকে গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যেক সেক্টরে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করে। যদিও ১০ নম্বর সেক্টরে তেমন কোনো স্থায়ী কমান্ডার ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের নেতৃত্বে প্রত্যেকটি সেক্টরে নিয়োজিত যোদ্ধারা তাদের জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের কয়টি সেক্টর গঠন করা হয় ও সেক্টর গুলো কি কি ?

ভূমিকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে ই.পি.আর, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী সমন্বয় মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে। কিন্তু অতর্কিত আক্রমণের মুখে যে স্বতঃস্পুর্ত প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল সুপরিকল্পীত ছিল না এবং কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল না। তাই ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ চলছিলো স্বতঃস্পুর্ত ও বিক্ষিপ্তভাবে। এরপর পেশাদার সৈন্যদের নিয়ে নিয়মিত স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী গঠিত হয়। 

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর সমূহ বর্ণনা : নিম্নে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক সংগঠনের বিবরণ দেওয়া হলো :

মুক্তিযুদ্ধে কয়টি সেক্টর গঠন করা হয় ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ও গুলো কি কি ?

১ নম্বর সেক্টর: চট্টগ্রাম , পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী (ফেনী যদি পর্যন্ত) ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। এরপর এ সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন (পরে মেজর) মোহাম্মদ রফিক। 

২ নম্বর সেক্টর: নোয়াখালী জেলা, আখাউড়া-ভৈরব রেল লাইন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা, ঢাকা জেলা ঢাকা এবং ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ, তারপর মুক্তিযুদ্ধের ২ সেক্টরের দায়িত্ব নেন মেজর এ.টি.এম হায়দার।

৩ নম্বর সেক্টর: আখাউড়া-ভৈরব রেল লাইন থেকে পূর্বদিকে কুমিল্লা জেলা, সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহাকুমা, ঢাকা জেলার কিছু অংশ এবং ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহাকুমা। মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে এ সেক্টরের কমান্ডার, পরে মেজর এ. এন. এম নুরুজ্জামান সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। 

৪ নম্বর সেক্টর: সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত। এই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সি. আর. দও। (এপ্রিল থেকে 16 ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ) 

৫ নম্বর সেক্টর: সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল, সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলি এ দায়িত্বে ছিলেন। 

৬ নম্বর সেক্টর: রংপুর জেলা এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা পর্যন্ত পরে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে রংপুর জেলার বঙ্গপুত্র নদীর তীরের ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে আনা হয়। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন উইং  কমান্ডার এম.কে বাশার। 

৭ নম্বর সেক্টর: দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল রাজশাহী পাবনা ও বগুড়া মেজর কাজী নুরুজ্জামান ছিলেন এ সেক্টরের কমান্ডার। 

৮ নম্বর সেক্টর: কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের অধিকাংশ এবং খুলনা জেলার দৌলতপুর, সাতক্ষীরায় সড়ক পর্যন্ত। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী আগস্ট মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে এ সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। পরে মেজর এম. এ মঞ্জুর এ সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

৯ নম্বর সেক্টর: দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা। মেজর  এম. এ জলিল ডিসেম্বর মাসের শুরু পর্যন্ত এ সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। ডিসেম্বরে চূড়ান্ত যুদ্ধের শেষ কয়দিন মেজর জয়নাল আবেদীনকে মুক্তিযুদ্ধের এ সেক্টর কমান্ডার এর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১০ নম্বর সেক্টর: নৌ কমান্ডো সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও নৌ-পথ। কমান্ডাররা বিভিন্ন সেক্টরে নির্দিষ্ট মিশনে নিয়োজিত থাকা কালে সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে কাজ করতেন। 

১১ নম্বর সেক্টর: কিশোরগঞ্জ মহাকুমা বাদে ময়মনসিং জেলা এবং টাঙ্গাইল জেলা। মেজর আবু তাহের এ মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। নভেম্বর মাসে তিনি গুরুতর ভাবে আহত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম, হামিদুল্লাহ এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এ বাংলাদেশকে মোট ১১ সেক্টরে ভাগ করে। যাতে আমাদের শত্রুরা কোনো ভাবেই আমাদের সীমানার মধ্যে পৈছাতে না পারে। এবং পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধের কৌশল ও বুদ্ধিমাত্রার মাধ্যমে তাদের সর্বোচ জবাব দেওয়া সম্বব হয়। যার ফলে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধের আগে দেশকে ১১ সেক্টরে বিভক্ত করে। এবং আমরা পাই আমাদের এই স্বাধীনতা।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url