ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লিখুন

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের ফলে নানা ধরণের অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। ঐতিহাসিক স্থান সমূহ যেমন : খান জাহান আলী (রঃ) এর মাজার , মহাস্থান গড় , দীঘি,  এক গম্বুজ , দশ গম্বুজ মসজিদ , ষাট গম্বুজ মসজিদ , ঘোড়া দীঘি , বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, পাগল পীরের মাজার , কটকা সমুদ্র সৈকত, মংলা বন্দর, আরো অনেক। ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের ফলে পাঠ্য বইয়ে পড়ার পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। যা প্রত্যাহিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই , নিচে দেখুন কিভাবে আপনি আপনার বন্ধুকে ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লিখবেন।

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি। 

নিচে ২ টি চিঠি উপস্থাপন করা হলো।

প্রিয় আদনান ইসলাম সামি ,

বেশ কিছুদিন তোমার কোনো খবর জানিনা। আশা করি ভালোই আছো। আমি কলেজ / স্কুল থেকে সোনারগাঁও বনভোজন করতে গিয়েছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ ঈশা খাঁর রাজধানী সোনারগাঁও দেখা, বাংলার গৌরব ঈশা খাঁ'র অমর কীর্তি সোনারগাঁও। এর প্রাচীন স্থাপত্য, প্রাকৃতিক শোভা নয়ন জুড়ানো ভাবমূর্তি যা বাস্তবে না দেখলে কখনো বোঝানো যাবে না।

সকাল দশটায় আমরা সোনারগাঁও -এ পৌছালাম। ছায়া ঢাকা,পাখি ডাকা শান্তির নীড় যেনো কোনো বিধবার মতো হয়ে রয়েছে। রাস্তার পাশে ভগ্নপ্রায় দ্বি-তল ভবন। সামনেই একটা পুকুর। পুকুরের পাশে রয়েছে লিচু গাছের সারি। খাটের পাশেই ঘোড়ার পিঠে রয়েছে বীরযোদ্ধা। ভয় পেয়েছো! না, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এ তো পাথরে গড়া। সেই পুকুরেই আছে স্বচ্ছ জল। হয়তো একদিন চাঁদনী রাতে প্রকৃতি প্রেমিক-প্রেমিকা এসে বলতো ঘাটে। একটু এগিয়ে যেতে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায়  স্থাপিত বাংলার লোকশিল্প ও কারুশিল্প জাদুঘর। এখান থেকে শুরু ঈশাখাঁর রাজধানী রাস্তার দু'পাশে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যর নিদর্শন দালানকোঠা। সপ্তদশ শতকে সোনার গাঁ ছিলো জলবেষ্টিত, আজ বর্তমান মূল শহরের পেছন দিয়ে ক্ষীণ স্রোতধারার নদী বর্তমান। তা ছাড়া রয়েছে ইতিহাস খ্যাত গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের মাজার। 

উত্থান-পতনের ধারায় কোথায় হারিয়ে যাবে ঐতিহ্য কিন্তু মানব হৃদয়ে চিরদিন থাকবে অমলিন। তাই তুমি ও সময় পেলে দেখে যাবে এ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিবর্ণ দালানকোঠা ইতিহাসের নিদর্শন। এমনসময় খাওয়ার তারা এল। খেতে আবার বাসে চড়ে ঘরে ফিরে এলাম। শেষ হলো আমাদের ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন ও বনভোজন।

আমি ভালোই আছি, তোমার বাড়ির সকলকে সালাম ও সেন্হ দিবে। আজ আর নয়। উত্তররের প্রতীক্ষায় থাকলাম।

                                                ডাকটিকিট 

প্রেরক

  • নাম : আদনান ইসলাম সামি।
  • ঠিকানা : মোহাম্দপুর,ঢাকা।

প্রাপক 

  • নাম: জাহিদুল ইসলাম সুমন।
  • ঠিকানা : বরিশাল সদর,বরিশাল। 

ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি

আল মুনতাসির ফাহিম ,

তোমার চিঠি পেলাম। তুমি পাড়াগাঁর অনুল্লেখিত কোন ঐতিহাসিক স্থানের সন্ধান জানা থাকে তার বিবরণ লিখে পাঠাতে বলেছিলে। এগুলা নাকি কি তোমার ইতিহাস স্যারের নির্দেশ। হ্যা, আমাদের এলাকায় আছে এমন একটি স্থান। সেটা হল মহাম্মদপুর রাজা সীতারামের রাজধানী। তখন ছিল মোঘল শাসনামল। আজিমুশশান তখন ঢাকার সুবেদার। এ অবস্থায় দক্ষিণ বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণাকারী রাজা সীতারামের নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর যুদ্ধ বাঁধে। যুদ্ধে নাটোরের রাজা রামজীবন এবং তার কূটনীতিবিদ বিশ্বাসঘাতকতায় সীতারাম এর পত্তন হয় এবং তিনি বন্দী হয়ে মুর্শিদকুলি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। 

মহাম্মদপুর ছিল স্বাধীনচেতা বিদ্রোহী নরপতি সীতারামের প্রধান রাজধানী এখন থেকে দশ- বারো মাইল দূরে ভূষণা নগরে (বর্তমান ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানা ) তার দ্বিতীয় রাজধানী গড়ে ওঠে। উভয রাজধানী এখন ধ্বংসপ্রায় তথাপিও মহাম্মদপুর বিশাল দ্বি-তল ভবন সমূহ এখনও স্মৃতি বহন করছে। এর কোনোটা বা কাচারি বাড়ি, কোনোটা সেনাদের যোগ্য কোষাগার, কোনটা আন্ডারগ্রাউন্ড ধনাগার, কোনোটা অতিথিশালা ইত্যাদি। বিল্ডিং গুলো নানা ধরনের নকশা খোদিত। এ ছাড়া মেটে গড় নামক বিশাল গড়ের সাহায্যে মহাম্মদপুর এলাকা ছিল সুরক্ষিত। রাজধানী কে কেন্দ্র করে আশেপাশে গড়ে উঠেছিল শ্যামনগর, গোপালনগর, রাধানগর, রামনগর, সখু  সাগর ইত্যাদি। রাজধানীর দিঘিগুলো এখনো তার জনহিতকর কার্যাদির সাক্ষী হয়ে আছে। 

আদতে স্বচক্ষে এসব না দেখলে সৌন্দর্য ও ইতিহাস পুরোপুরি অনুধাবন করা সম্ভব নয়। আশা করি তুমি একসময় তোমার ইতিহাসের স্যার কে নিয়ে আমাদের সৌন্দর্য ও ইতিহাস পুরোপুরি নিতে বেড়াতে আসবে। হয়তো বা আমার বর্ণনার চেয়েও উনি অনেক কিছু আজ এ পর্যন্তই। আমার শুভেচ্ছা রইলো। তোমার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

                                                ডাকটিকিট

প্রেরক

  • নাম : আল মুনতাসির ফাহিম।
  • ঠিকানা : বরিশাল মেডিকেল কলেজ , বরিশাল।

প্রাপক

  • নাম : ফাহিম ইসলাম।
  • ঠিকানা : গুলশান,ঢাকা।
আরো পড়ুন: বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে তোমার বন্ধুর নিকট একটি পত্র লিখ

আমাদের কথা, কিভাবে আপনি আপনার বন্ধুকে ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লিখবেন তা উপরে ২ টি গুরুত্বপূর্ণ চিঠির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হলো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url