প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনা উদাহরণ সহ - ২০২৪
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনা উদাহরণ সহ - ২০২৪ পোস্টে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আমাদের চলমান জীবনে নানা সমস্যা পরিকীর্ণ ঘটনাবলী নিয়ে রচিত হয় প্রতিবেদন। প্রতিবেদন লেখার নিয়ম কি? এর ইংরেজি শব্দ 'Report'। যারা রিপোর্ট তৈরি করেন, তাদের বলা হয় রিপোর্টার প্রতিবেদক। আর এই 'Report' শব্দটি এসেছে ফরাসি "Repportes" শব্দ থেকে। "Repporters" শব্দ ফরাসি দেশের কয়েকটি সমজাতীয় বাক্যের অনুসংযোগকরণ কে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হতো বলে জানা যায়। তবে বর্তমান 'Report ' শব্দটির আভিধানিক অর্থ সমাচার বিবরণী বা বিবৃতি প্রদান বা অভিযোগ জ্ঞাপন। আশা করি প্রতিবেদন লেখার নিয়ম কি? তা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন। তাই বলা যায়, কোন ঘটনা বা বক্তব্য নিয়ে বর্ণনা দানই প্রতিবেদন। প্রতিবেদকের সংগৃহীত কোন বিষয়ের উপর তথ্য, উপাত্ত, সিদ্ধান্ত, ফলাফল ইত্যাদি যে কোনো একটি বা কয়েকটি যথাযথ অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পেশ বা ডাকিলে করার নামই প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: অধ্যাপক মাইক হ্যাচ বলেন, "প্রতিবেদন হল একটি সুসংগঠিত বিবৃতি, যা কোনো বক্তব্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনা বিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণের পর তৈরি করা হয়।" তাই বলা হয়, লেখক প্রত্যক্ষভাবে, পরীক্ষিত, বিশ্লেষিত, পর্যালোচিত ও নিরপেক্ষতা ঘটনা বিবরণী তৈরি করে থাকেন। সংবাদ প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের কোন নিজস্ব মতামত থাকবে না। কিন্তু প্রতিবেদন লেখার সময় নিজস্ব মতামত বা সুপারিশ থাকতে পারে। তবে এ মতামত যেন আবেগের জোয়ারে ভেসে না যায়। পক্ষপাতমূলক, আক্রমণাত্মক, প্রতিহিংসামূলক, ঈর্ষান্বিত বা কারা দ্বারা প্ররোচিত অথবা ভীত হয়ে প্রতিবেদন পেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। "
এখানে পড়ুন : এই পর্বের ১ম অংশে প্রতিবেদন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়া হয়েছে। নিচের অংশে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম / protibedon lekhar niyom ও নমুনা উদাহরণ সহ উপস্থাপন করা হয়েছে।
Peter Little -এর মতে , এর মধ্যে "প্রতিবেদন হলো একটি বিবরণী, যাতে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত কোন কিছু বিবরণ থাকে এবং সুপারিশ ও উপসংহার এর সাথে যুক্ত হয়। "
প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান সমাজব্যবস্থায় আইন-আদালতে প্রতিবেদনের প্রয়োজন প্রতিবেদন এর বিকল্প নেই। কেননা-
- কোন সংস্থার কার্যাবলী কে সহজ করে, যে-কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ, সংগঠন, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ, ফলাফল নিরূপণ সমন্বয় সাধন ইত্যাদি কাজে দরকার।
- কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয়কে সরেজমিনে তদন্ত করে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ ফল প্রকাশ করা হয়। তাই ওই বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য অবগত হওয়া যায়।
- কোন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে প্রতিবেদন মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
উপরে বর্ণিত নানা বিষয়ে আলোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রতিবেদন একটি স্থায়ী বস্তুনিষ্ঠ প্রামাণ্য দলিল এবং এ থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও প্রতিবেদন তৈরির সময় লক্ষণীয় দিক:
প্রতিবেদন রচনার অনুসরণীয় বৈশিষ্ট্য গুন্ বা লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই এসব বৈশিষ্ট্য প্রতিবেদন থাকতে হবে। নতুবা প্রতিবেদন হবে। নিচে প্রতিবেদন লেখার নিয়মের কিছু লক্ষণীয় দিক আলোচনা করা হলো:
১. সুনির্দিষ্ট কাঠামো : প্রতিবেদন প্রণয়নকালে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো আঙ্গিক অনুসরণ করতে হবে। এতে সাধারণত শিরোনাম, প্রাপকের নাম ও ঠিকানা সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জি, স্বাক্ষর,তারিখ ইত্যাদি থাকবে।
২. সঠিক তথ্য : প্রতিবেদন হবে বস্তুনিষ্ঠ। নিরপেক্ষভাবে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে রচিত হতে হবে।
৩. পূর্ণাঙ্গতা সম্পূর্ণতা : প্রতিবেদন হবে সম্পূর্ণ। যাতে বিষয় বা ঘটনা সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ ধারণা সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়।
৪. সংক্ষিপ্ততা : দীর্ঘ ও বাহুল্য বক্তব্য পরিহার করতে হবে। অতিকথন বর্জন করতে হবে।
৫. সুস্পষ্টতা : বক্তব্য স্পষ্ট। কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা যাবে না।
৬.সহজ ভাষা : অহেতুক জটিল শব্দ বা বাক্য প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বার্থক শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। এতে জটিলতা এবং সমস্যা বাড়ে। প্রতিবেদন দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে।
৭. সময়ানুক্রমিক বর্ণনা : সময়ে ক্রমানুসারে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা দিতে হবে।
৮. নকশা ও চিত্র প্রধান : প্রতিবেদনকে আকর্ষণীয়, বস্তুনিষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য, বোধগম্য করার জন্য নকশা ও চিত্র দেওয়া যেতে পারে।
৯. অতীতকালের ব্যবহার : কোন ঘটনা ঘটে গেছে। তাই অতীতকাল ব্যবহার করা হয়।
১০. উপস্থাপনা ও পরিবেশন পদ্ধতি : প্রতিবেদনের উপস্থাপনা হবে আকর্ষণীয়। এর বক্তব্য সুন্দর, প্ৰাঞ্জল ও সাবলীল ভাষায় পরিবেশিত হতে হবে।
১১. প্রতিবেদনের আকার : প্রতিবেদনের আকার নির্ভর করে এর বিষয়ের উপর এবং গুরুত্ব অনুসারে এক পৃষ্ঠা থেকে শতাধিক কিংবা তার বেশি পৃষ্ঠার হতে পারে। বড় প্রতিবেদন পুস্তুককারে প্রকাশ করা হয়।
১২. সুপারিশ বা মতামত : প্রতিবেদনে মতামত বা সুপারিশ থাকবে। তবে তা নিরপেক্ষভাবে দিতে হবে। যাতে কর্তৃপক্ষ সঠিক যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এর প্রকারভেদ :
প্রতিবেদন নানা প্রকার হয়ে থাকে। বিষয়ের বৈচিত্র্য অনুসারে প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখা যায়। যথা: ১. রীতিসিদ্ধ প্রতিবেদন , ২. রীতি বিরুদ্ধ প্রতিবেদন , ৩. নিয়মিত প্রতিবেদন , ৪. সামরিক প্রতিবেদন , ৫ বিশেষ প্রতিবেদন , ৬. নির্বাহী প্রতিবেদন , ৭. প্রার্থিত প্রতিবেদন , ৮. অপ্রার্থিত প্রতিবেদন , ৯. কোম্পানি প্রতিবেদন, ১০. আর্থিক প্রতিবেদন ইত্যাদি। এছাড়াও আরও রয়েছে সংগঠনের প্রতিবেদন, সরকারি প্রতিবেদন, সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রতিবেদন, পরিদর্শন প্রতিবেদন ইত্যাদি। অন্যদিকে বিবেচনায় প্রতিবেদনকে কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে যেমন : বার্ষিক প্রতিবেদন , ষান্মাসিক প্রতিবেদন , তৈমাসিক প্রতিবেদন , পাক্ষিক প্রতিবেদন , সাপ্তাহিক প্রতিবেদন ইত্যাদি।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম / protibedon lekhar niyom : প্রতিবেদন নিম্নোক্ত চারটি অংশে ভাগ করা যায়-
১. শিরোনাম অংশ ; ২. বিষয় বিবরণ ; ৩. মতামত বা সুপারিশ ; ৪. প্রতিবেদকের নাম
নমুনা-১
প্রতিবেদনের শিরোনাম :
সরেজমিনে তদন্তের স্থান :
প্রতিবেদন তৈরির সময় :
প্রতিবেদন তৈরির তারিখ :
প্রতিবেদক এর নাম ও ঠিকানা :
নাম :
থানা :
জেলা :
বিষয় :
স্মারক :
জনাব,
নমুনা-২
তারিখ,ঢাকা।
২৪ মার্চ ২০২.... খ্রিস্টাব্দ
প্রাপক
অধ্যক্ষ
'ক' সরকারি কলেজ ,ঢাকা।
প্রেরক,
'ক' সরকারি কলেজ , ঢাকা।
অধ্যাপক , 'ক' সরকারি কলেজ
...... ঢাকা।
সম্পর্কিত আরো পড়ুন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কিভাবে পরিপূর্ণ একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন।
নিচে একটি প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এবং এর পাশাপাশি কিভাবে একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন লিখবেন তার একটি প্রতিবেদন নমুনা নিচে দেওয়া হল:
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে 'পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন protibedon lekhar niyom।
তারিখ : ২ মে, ২০...খ্রি.
প্রাপক,
সচিব
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
প্রেরক,
'খ'
কাওরান বাজার,ঢাকা।
বিষয় :
স্মারক : পলি মু বাং /১১০/ক/২ মে, ২০...খ্রি.
জনাব,
পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে আলোকপাত করে নিম্নোক্ত প্রতিবেদনটি আপনার সদয় জ্ঞাতার্থে পেশ করছি :
পলিথিন মুক্ত বাংলাদেশ
পলিথিন আমাদের পরিবেশের চরম শত্রু। কালের প্রবাহে নিজেদের প্রয়োজনে পলিথিনের ব্যবহার সূত্রপাত হলেও তা মূলত সর্বাংশে ক্ষতি করে থাকে। সর্বোপরি পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ ক্রমাগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে গত ১ মার্চ ঢাকায় এবং ১ এপ্রিল সারাদেশে জনজীবন ও সুস্থ পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ এবং চটের ব্যাগ এর ব্যবহার কে উৎসাহিত করা হয়। নিষিদ্ধ করা সত্বেও বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ পলিথিনের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক :
১. সর্বক্ষেত্রে পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে/
২. যেসব কারখানা পলিথিন তৈরি হচ্ছে সেসব মালিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পলিথিনের পরিবর্তে অন্য সামগ্রী নিমার্ণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৩. বিকল্প হিসেবে বাজারে সস্তা কাপড় ও কাগজের ব্যাগ এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পলিথিন ব্যাগের ক্ষতিকর দিকগুলো উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজ গুলোতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানের প্রকাশ ও প্রচার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব কারখানা মালিকগণ এখনো পলিথিন ব্যাগ তৈরি করছেন এসব কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
'পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ, নিশ্চিত করার জন্য সরকার যেসব সময় উপযোগী অভিযান শুরু করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু এ ব্যাপারে আরো জোরালো এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
প্রতিবেদক-
নাম: 'ক'
ঠিকানা :....
প্রেরক,
নাম : 'খ'
থানা : তেজগাঁও
জেলা : ঢাকা।
প্রাপক,
সচিব
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সচিবালয় , ঢাকা।
এবং দেখুন আপনি কিভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন।
পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনায় কিভাবে আপনি কিভাবে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। প্রতিবেদন লেখার নিয়ম / protibedon lekhar niyom ও নমুনা বা প্রতিবেদন তৈরির নিয়ম এই পোস্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url