রচনা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার
[ সংকেত : ভূমিকা; প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা;বন্যার ক্ষয়ক্ষতি;১৯৮৮ ও ১৯৯৮ এর বন্যা; বন্যার উপকার;বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ; বন্যার কারণ; বন্য সমস্যা সমাধানের উপায় ও প্রতিকার;বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি;উপসংহার ]
রচনা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার
বাংলাদেশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ এবং কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র্য বেকারত্ব, ক্ষুদা , অপুষ্টি, স্বাভাবিক মৃত্যুর অনিশ্চয়তা হিমালয়ে অদূরে অবস্থিত বাংলাদেশের বৈশিষ্ট, তেমনি প্রাকৃতিক দিক থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা এই বিজ্ঞানের যুগেও আমাদের আতঙ্কিত করে রাখে। বাংলাদেশের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। নদী-নালা-খালবিল জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ নদী গুলো কোমল থেকে ও মাঝে মাঝে কঠোর রূপ ধারণ করে। যা দেখে আমরা দিশেহারা হয়ে যায। জীবন হয় স্থব্দ, জীবনযাত্রা ব্যাহত, নদ-নদীর কুলে উপচে পড়া পানিতে অবিরল বর্ষণে আমাদের জনজীবন বিপর্যস্ত করে দেয়। ধ্বংসের প্রলয়নৃত্য করে যেন বন্যা। প্রতিবছরই জুলাই-সেপ্টেম্বরে পযন্ত এ আশঙ্কা আমরা প্রতিনিয়ত ভীত থাকি। তাই বন্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এটি আমাদের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা :
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর মধ্যে অন্যতম একটি দুর্যোগ হলো বন্যা। বন্যার স্বরূপ- সাধারণত জৈষ্ঠ মাস থেকে তীব্র ভাদ্র মাসের মধ্য বন্যা দেখা দেয়। এ সময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। নদ-নদীর উৎস মুখে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং হিমালয়ে অধিক বরফ গলায় বাংলাদেশের বন্যা দেখা দেয়। বঙ্গোপসাগরে অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণে। উত্তর থেকে দক্ষিণে ভূমি কম- বেশি হয় ঢালু নেমে গেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদী এবং বঙ্গপুত্র নদের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি বন্যার অন্যতম কারণ। এ নদ-নদীর অবস্থান বাংলাদেশের বাইরে হলেও বাংলাদেশের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় সবশেষে ঠিকানা বঙ্গোপসাগর। তাই সমুদ্র তট থেকে মাত্র ৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত আমাদের দেশের নদীর পলিবহন ক্ষমতা কম। সে কারণে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে নদ-নদীগুলো ধারণ করতে পারে না। তখন দু-কূল ছাপিয়ে জনপদে জীবন সংহারক মূর্তি বেশে বন্যার আগমন হয়। মানুষ জমি ভরাট করে বাড়িঘর করছে ফলে বাড়িতে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই। যে বন্যা ছিল আগে স্বাভাবিক সেই বন্যা আমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা হয়েছে নিষ্ঠুর, নির্মম, অস্বাভাবিক এবং একেবারে নিয়ন্ত্রনহীন।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি: প্রতি বছর কোন কোন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। রাস্তাঘাট নষ্ট হয় স্রোতে ভেসে যায়। পশুপাখি মারা যায়। লোকজনের কাচা বাড়ি ঘর ভেঙে যায়। লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে রেল লাইন অথবা স্কুল কলেজে আশ্রয় নিতে হয়। খোলা আকাশের নিচে অবর্বণীয় দুঃখ কষ্টে দিনাতিপাত করে। এ ছাড়া রোগে-শোকে, অর্ধাহারে বিভিন্ন শিবিরে লোক মারা যায়।
এ দেশে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয়। ১৯৫৪, '৬৭, '৬৮, '৭৪, '৮৭, '৮৮, '৮৯, '৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিলো। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার প্রকোপ আরো বেশি পানি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা মানুষ তার অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর করতে পারে বন্যায় মানুষের সুন্দর সাজানো জীবনের প্রতি হুমকি স্বরূপ একটি চাষ করা মৎস্য ফসলের অপূরণীয় ক্ষতি হয় খাদ্য কার্ডের ঘাটতি দেখা দেয়।
আরো পড়ুন: মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা।
১৯৮৮ ও ১৯৯৮ এর বন্যা : গত দুই দশকের মধ্যে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ এর সালের বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ১৯৮৮ সালের বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে যা মারাত্মক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে , ১৯৮৮সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ তলিয়ে যায় কয়েক ফুট পানির নিচে। এ বন্যায় দেশের অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।
বন্যার উপকার : বন্যা মানুষের জীবনে অভিশাপ হলেও কখনো কখনো আর্শিবাদ হতে পারে। বন্যার ফলে পলি জমে জমি উর্বর হয়ে ওঠে। তাতে ফসল ভাল জন্মে। দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি হয় এবং বন্যা ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, ভূমিধস, খরা, ঘূর্ণিঝড়, তীব্র ঝড়, সুনামি, ভূমিকম্প এবং টর্নেডো ইত্যাদি।
বন্যার কারণ : বাংলাদেশের যেসব কারণে বন্যা সংগঠিত হয় তা হলো :
অতিবৃষ্টি: মৌসুমী বায়ু প্রবাহের ফলে কখনো কখনো এ দেশে অধিক বৃষ্টিপাত হয়, ফলে বন্যা দেখা।
নদীর নাব্যতা হ্রাস : নদ-নদীতে পলি জমির পানির নিষ্কাশনের ক্ষমতা কমে গেছে। তাই নদ-নদীর উৎপত্তি স্থলে পানির প্রবাহ বৃষ্টি হলে এদেশে বন্যা দেখা যায়।
হঠাৎ করে পানি ছাড়া : নদ নদীর উজানের দেশে বাঁধ দেওয়া, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে বাঁধ খুলে দেওয়ার ফলে পানির হঠাৎ করে বাঁধ থেকে বেশি প্রবাহের ফলে আমাদের দেশে বন্যা দেখা যায়।
অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ : যত্রতত্র নাস্তা নির্মাণ এবং ব্রিজ-কালভার্টের ফলে পানি সরে যেতে পারে না তাই বন্যা দেখা দেয়।
উজান দেশে নদীতে বাঁধ দেওয়া : ৫৪ টি নদী ভারত থেকে এসে আমাদের দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ভারত পদ্মা নদীর উপরে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখে এবং বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়। এই কারণেই পদ্মার শাখা নদীগুলো শুখিয়ে গেছে। আবার বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে তখন এই নদীগুলোর পানির ধারণ ক্ষমতা থাকে না, ফলে বন্যা হয়।
আরো পড়ুন: করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা বা covid 19
বন্য সমস্যা সমাধানের উপায় ও প্রতিকার : বন্যায় ব্যাপক জামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেসব মৌলিক কারণে এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে তা অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নয়তো জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন নিম্নলিখিত উপায় গুলো গ্রহণ করতে হবে।
নদ-নদী ড্রেজিং : নদ-নদীর ড্রেজিং- এর মাধ্যমে পলি সরিয়ে নদ-নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে পানি প্রচুর সমুদ্র চলে যেতে পারে।
বাঁধ নির্মাণ : বিভিন্ন নদ-নদীর বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যাতে উপচানো পানি তীর ছেড়ে কুলে প্রবেশ করতে না পারে।
রাস্তাঘাট নির্মাণে সর্তকতা অবলম্বন : যত্রতত্র রাস্তা ঘাট ব্রিজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে মনে রাখতে হবে যাতে পানি প্রবাহ বাধা না হয়।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি : পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছপালা লাগাতে হবে যাতে আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে। বৃক্ষ পরোক্ষভাবে বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রেণে সাহায্য করে থাকে। বৃক্ষ নিধন রোধ করতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে হবে। যাতে সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য বৃক্ষরোপন করে। যার ফলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটা কমতে পারে।
উপসংহার : আজকের যুগে চাঁদে মানুষের পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়েছে। কেবল তাই নয় সেখানে বসবাস করার ব্যবস্থা মানুষ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যস্ত। এই রহস্যময়ী প্রকৃতির অবগুন্ঠন উন্মোচিত হয়ে গেছে মানুষের কাছে যে ধরা দিয়েছে প্রকৃতি প্রেমিকা হিসেবে, বিনাশী হিসেবে নয়। প্রকৃতির গোপন রহস্য মানুষের কাছে অজানা নয়। তাই প্রকৃতি আজ কল্যাণী তবে কেন আমরা বসে থাকবো? প্রকৃতিকে হাতের মুঠোয় এনে আমাদের ওই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হবে। আমাদের শ্রম উদ্ভাবন শক্তি দিয়ে বুদ্ধির সংযোগ ঘটিয়ে বন্যার অশুভ শক্তিকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প রচনা। নবম -দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্ৰেণী ।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ২০ পয়েন্ট
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url