জন্ডিস এর লক্ষণ ও জন্ডিস হলে করনীয় | দি ডেইলি লার্ন

জন্ডিস এর লক্ষণ ও জন্ডিস হলে করনীয় : যকৃতের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্যাধি লক্ষণ হলো জন্ডিস বা কামলা। রক্তে অতিরিক্ত বিলুরুবিন জমা হইয়া পান্ডু রোগের সৃষ্টি হয়। বিলুরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.২ থেকে ০.০৮ মিলিগ্রাম। এ মাত্রা ২ মিলিগ্রামের উপরে উঠলে চোখের সাদা অংশ হলুদ রং হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় জিব্বার নিচের অংশও হলুদ হয়ে গিয়েছে। সর্বশেষে শরীরের চামড়াও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। 

যকৃতে পিত্ত তৈরি হয়। অতঃপর কিছু অংশ গলব্লাডার নামক পিত্তকোষে জমা হয় এবং পিত্তবাহী নলের ভিতর দিয়ে ডিওডিনামে আসে। আমিষ বা চর্বি জাতীয় খাদ্য কে হজম করতে সাহায্য করে। আবার গুরুপাক জাতীয় খাদ্যকে সহায়তা করার জন্য পিত্তকোষের কিছু পিত্ত ক্ষুদান্তে যায়। কোন কারণে পিত্ত নালি বন্ধ হইয়া গেলে উহা ক্ষুদান্তে পৌঁছাতে না পারলে ধীরে ধীরে রক্তে মিশ্রিত হয় এবং শরীরের বর্ণ তখন হলুদ রং ধারণ করে। এই অবস্থায় ডিওডিনামে ভুক্ত খাদ্যদ্রব্যর সহিত পিত্ত মিশ্রিত না হওয়ার ফলে চর্বি জাতীয় খাদ্য হজম করতে পারেনা। তখন মলের রং স্বাভাবিক না হয়ে মেটে রং ধারণ করে। এমনিভাবে নানা কারণে পিত্তরস রক্তের সহিত দেহে শোষিত হয়ে জন্ডিস রোগের সৃষ্টি করে।

জন্ডিস এর লক্ষণ ও জন্ডিস হলে করনীয়

স্বাস্থ্য টিপস সম্পর্কিত এবং ফ্রিল্যান্সিং, ইতিহাস এবং দৈনিক তথ্য জানতে পড়তে পারেন।

বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় ?

সাধারণত, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যখন ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার (mg/dL) বা তার বেশি বেড়ে যায় তখন জন্ডিস হয়।

জন্ডিসের লক্ষণ :

  • আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর, চোখ, বুক, পেট, হাতের তালু, ইত্যাদি হলুদ রং ধারণ করে। 
  • পেট হতে নাভি পর্যন্ত ব্যথা ও শরীরের তাপ থাকে। 
  • প্রসবের রং গরুর চনার মত হয়। 
  • জ্বর বমি বমি ভাব বমি হওয়া বদহজম খুদা না লাগা পেটে বায়ু সঞ্চয় লক্ষণ প্রকাশ পায়। 
  • কখনো বা কোষ্টবদ্ধতা দেখা দেয় ও আবার কখনো পাতলা পায়খানা হয়। 
  • ঘুম কম হয়। 
  • জন্ডিস বৃদ্ধি পাইলে গা চুলকায়, অনিদ্রা হয়, মুখে দুর্গন্ধ হয়। 
  • লিভারে ব্যাথা হয় এবং কখনো কখনো এ ব্যাথা বৃদ্ধি পায়। 
  • পিত্ত নির্গমনের পথে বাধা পেয়ে জন্ডিস হলে মলের রং মেটে হয়। 

জন্ডিস হলে করনীয় কি

  • গ্লুকোজের শরবত ও প্রচুর আখের রস খাওয়া ভালো। তবে জ্বর থাকলে রদবদল করতে হয়। 
  • দুষ্প্রাপ্য সব রকম খাদ্য মসলাযুক্ত খাদ্য না খাওয়া ভালো। 
  • রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম থাকতে হবে যতদিন রোগমুক্ত না হয়। 
  • অরুচি বা জ্বর না থাকলে ভিটামিন বি ক্যাপসুল ভিটামিন সি খাইতে দিতে হবে অন্য কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই। 
  • অ্যালকোহল আসক্তি রোগীদের জন্য এক বছর অ্যালকোহল না খাওয়া ভালো। 

জন্ডিস এর লক্ষণ দেখা দিলেনিচের ঔষধ খাওয়া বন্ধ রাখিবে (অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)

  • সিডেটিভ ( ঘুমানোর ঔষধ )
  • এন্টি অমিটিক (বমির ঔষধ ) 
  • প্যারাসিটামল 
  • কো ট্রাইমোক্সাজল 
  • টি বি বিরোধী ঔষধ।  

সাধারণত: চোখের রং সাদা স্থলে হলুদ এবং হাতের তালু হলুদ হইলে তাকে জন্ডিস রোগ বলা হয়। জন্ডিস রোগকে কারণ অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস : পিত্ত চলার পথে বাধা পেলে নিঃসরণ হতে পারে না। কিংবা ডিওডিনামে পৌঁছাতে পারে না। ফলে এটা আবার যকৃতে ফিরিয়া গেলে জন্ডিস রোগের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে সারা শরীর হলুদ রং ধারণ করে।

সম্পর্কিত পড়ুন: ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিভাবে অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস রোগ সৃষ্টি হয় :

  • পিত্তনলে বাধা পাইয়া : পিত্তকোষে পাথর হয়ে পিত্তনালির পথ বন্ধ হয়ে গেলে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি হয়। 
  • পিত্তনালীর ক্ষত সৃষ্টি হইয়া : পিত্তনালীর গায়ে ক্ষত হয়ে পিত্তনালীর পথ সরু হয়ে যায়। ফলে পিত্তরস ঐ সরু পথে যথাযথ ভাবে যেতে পারে না বলে জন্ডিস হয়। 
  • পিত্তনালীর বাহিরে চাপ সৃষ্টি হইলে : পিত্তনালীর ঘনত্ব বেড়ে গেলে পাথুরী লিভার বা পাকস্থলীতে টিউমার হয়ে পিত্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে পিত্তনালীর পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জন্ডিস রোগের উৎপত্তি হয়। হেপাটাইটিস সিরোসিস অফ লিভার, ক্যান্সার অফ লিভার প্রভিতি রোগে পিত্তনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

২. হেমোলাইটিক জন্ডিস (রক্তকণিকা ধ্বংসজনিত জন্ডিস) : ম্যালেরিয়া ব্ল্যাক ওয়াটার ফিভার প্রবৃত্তি রোগের লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হলে পিও বেশি সৃষ্টি অর্থাৎ বিলিরুবিনের রূপে সাধিত হয় এবং জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। লোহিত রক্তকণিকা বিনাস জনিত জন্ডিসের কারণ রক্তবাহী নলের অভ্যন্তরে লোহিত রক্তকণিকার অতিরিক্ত ভাংগন। বিনাশপ্রাপ্ত লোহিতার কণিকা থেকে যে অস্বাভাবিক পরিমাণ পিত্তক রঞ্জক প্রকৃতি এসে পড়ে যকৃতের কোষ তাদের নিয়ে পেড়ে ওঠে না এবং এর ফলে পানিতে অদ্রবণীয়  বিলিরুবিন রক্ত স্রোতে প্রবেশ করে এই বিলিরুবিন পানিতে অদ্রবণীয় বলে রক্তের ফিল্টার পার হতে পারে না এবং রোগীর প্রসাবে বিলুরুবিন রঞ্জক থাকে না। 

৩. ইনফেকটিভ জন্ডিস : একিউট ইনফেক্টিভ হেপাটাইটিস বা এপিডেমিক জন্ডিস বা ডিপাটে সেলুলার জন্ডিস নামে পরিচিত। অনেক জীবাণু বা ভাইরাস দ্বারা কিংবা কতগুলি ওষুধে লিভারের ওপর বিষক্রিয়ার ফলে পিত্তনালির পথ বন্ধ হয়ে গেলে এ জন্ডিস রোগের উৎপত্তি হয়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url