ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা

নিয়মানুবর্তিতা রচনা সংকেত : ভূমিকা-নিয়মানুবর্তিতার বৈশিষ্ট্য-নিয়মানুবর্তিতা ভঙ্গ মানেই বিপর্যয় ও ধ্বংস-মানব জীবনে নিয়মানুবর্তিতা-জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা-ছাত্র জীবন ও জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা-নিয়মানুবর্তিতার তাৎপর্য-বিশ্বশান্তিতে নিয়মানুবর্তিতা-উপসংহার।

নিয়মানুবর্তিতা রচনা

ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা রচনা

ভূমিকা : বিশ্ব সৃষ্টির সবকিছুই নিয়মের অধীন। ঊর্ধ্বে নীআকাশ, নিম্নসাগর, পৃথিবী সর্বত্রই আমাদের নিয়মের রাজত্ব বিস্তৃত। কোথাও কোনো অনিয়ম বা শৃঙ্খলার নাম গন্ধ নেই। আকাশের সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র আমাদের এই পৃথিবী সবকিছুই বিশেষ নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে নিজ নিজ পথে আবর্তিত হচ্ছে। কোথাও সামান্যতম বিচ্যুতি ঘটছে না। সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ আবার গ্রহকে কেন্দ্র করে উপগ্রহ যুগ যুগান্তর ধরে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে ছুটে চলছে। গাছপালা পশুপাখি এমনকি আমাদের জীবন প্রবাহ চলছে নিয়মের খেলা বস্তুত এ নিয়মের মধ্যেই রয়েছে। বিশ্ব সৃষ্টির সৌন্দর্য ও অস্তিত্ব পৃথিবীর সকল কিছুই নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলছে। 

নিয়মানুবর্তিতার বৈশিষ্ট্য : বিশ্ব -সৃষ্টির জীবন প্রবাহের মাঝে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার বৈশিষ্ট্যে বর্তমান। সবকিছুই নিয়ম-শৃংখলার অধীন নিয়ম মেনে চলাই সবকিছুর বৈশিষ্ট্য। কেবল মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের ক্ষেত্রে নয় ক্ষুদ্র জাতি ক্ষুদ্র প্রাণীকুলের মধ্যে নিয়ম-শৃঙ্খলার রাজত্ব। ক্ষুদ্র পিপীলিকার দল আহার ও বাসস্থানের ক্ষেত্রের সুশৃংখল জীবন যাপন করে থাকে। প্রকৃতির বিকাশের পেছনেও রয়েছে অখন্ড নিয়মানুবর্তিতা। শৃঙ্খলা জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে। নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা এবং তা মেনে চলা উন্নত জীবনযাপন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কল্যাণের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। নিয়ম তাই প্রত্যেকের জন্য দৈনন্দিন জীবনে আবশ্যিক একটি বিষয়। 

আরও পড়ুন: শ্রমের মর্যাদা রচনা। 

নিয়মানুবর্তিতা ভঙ্গ মানেই বিপর্যয় ও ধ্বংস : নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললেই বিশ্বের বিধান। কেবল প্রকৃতি জগতেই নয় জীবনজগত নিয়ম শৃংখলা বিঘ্নিত হলে নানা বিপর্যয় অসম্ভবভাবী। এই জন্য ব্যক্তির কল্যাণে জাতির কল্যাণে দেশের প্রত্যেকের নিয়মানুবর্তিতা হওয়া কর্তব্য। নিয়ম-রীতি ভঙ্গের ফলে বিপর্যয় ঘটে থাকে, ইতিহাসে তার ভুরি ভুরি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করে থাকি আধুনিক সভ্যতার অনেক সমস্যাই নিয়ম-রীতি অগ্রাহ্য করার বিস্ময় পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। 

মানব জীবনে নিয়মানুবর্তিতা : শৃঙ্খলা মানব জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষের দেহ ক্ষয় হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ তার জীবনকে সুশৃংখলভাবে পরিচালনা করার জন্য যে নিয়ম সৃষ্টি করে তা অবিনশ্বর। মানুষ তার কল্যাণের জন্য বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা সমন্বয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সেগুলোকে নিয়মে পরিণত করে। ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সমগ্র মানবীয় জীবনযাত্রায় এ নিয়ম শৃঙ্খলা না থাকলে সমাজ জীবন ও বর্তমান সভ্যতা গড়ে উঠতো না। আমাদের চলাফেরায় কাজকর্মে আচার অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিয়ম ব্যবস্থা বিদ্যমান যার বাইরে আমরা যেতে পারি না। আমাদের ঘরে নিয়ম, বাইরে নিয়ম। নিয়মের কারণেই আজ আমরা সভ্য জগতের মানুষ। নিয়ামানুবর্তিতার জন্য প্রগতির সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যার অনিয়মে আমরা বিপন্ন হয়ে পড়ি। গ্রীন হাউজ ইফেক্ট এর ওজন-স্তরের ক্ষয়  বন উজাড়, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পানি স্তরের স্মৃতি প্রবৃত্তি বিপর্যয়ের দিকে তাকালে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। গতিমতাই জীবনের ধর্ম। জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাসস্থান এবং অনুকূল পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সম্মানিত ব্যবস্থাই হল সমাজ। সামাজিক জীবনে আমরা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী সবার সাথে মিলেমিশে একসাথে হয়ে আনন্দে বসবাস করছি এর পেছনে রয়েছে নিয়ম-শৃঙ্খলা। নিয়মের কারণে সমাজ একটি বিশেষ আকৃতি এবং আয়তনে প্রতিষ্টিত। রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়ম যে কত বড় একটি শর্ত বা উপাদান তা আধুনিক সুশৃংখল রাষ্ট্রগুলোর দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা। 

জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা : জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা অপরিহার্য। জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা না থাকলে দেশের সাধারণ মানুষও নিয়মানুবর্তিতা করবেনা এজন্য জাতীয় জীবনে যারা কান্ডারী তাদের ওই সকলের আগে নিয়মানুবর্তিতা মধ্যে আসতে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে রক্ষিত হচ্ছে না ফলে শেষ সকল দেশে উন্নয়ন তুরান্বিত হচ্ছে না। আমাদের বাংলাদেশে তার যোগ্য উদাহরণ অনেকেই মনে করেন। নিয়মানুবর্তিতার মধ্য থেকে সকল কাজ স্বাধীনভাবে করা যায় না। কিন্তু এ ধারণা সত্য নয়। বরং নিয়ম ভঙ্গ করে কোন কাজে সফলতা লাভ সম্ভব নয়। তা সকল ক্ষেত্রেই অন্যায় বলে বিবেচিত হবে। এবার স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ম ভঙ্গ করতে সাহায্য করে ব্যক্তি জীবনে যাতে তা না হয় সেজন্যই জীবনে নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করতে হবে।

ছাত্র জীবন ও জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা : জীবন মানে নিয়ম-শৃংখলার অধীন। এক সৌন্দর্যময় বিকাশ জীবনের সর্বস্তরেই তাই নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজন। বিদ্যালয় কি, খেলার মাঠে কি, কারখানা, ফ্যাক্টরিতে কি ও যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ম নিয়মানুবর্তিতা অপরিসীম। শ্রেষ্ঠ ছাত্র, শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ও  শ্রেষ্ঠ সৈনিক হতে হলে নিয়মানুবর্তিতার মধ্য অগ্রসর হতে হবে। অরিয়ম ও বিশৃঙ্খলা জীবনকে সুনিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালিত হতে দেয় না। বরং ফেলে দেয় মহা বিপর্যয়ের দিকে। তাই ছাত্র জীবন ও জাতীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন সর্বাধিক।

নিয়মানুবর্তিতার তাৎপর্য : অনেক বাধ্যবাধকতার মাঝেও আবদ্ধ থাকাকে স্বাধীনতার খর্ব বলে ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। তাদের মধ্যে জীবনের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য কোন নিয়ম*শৃঙ্খলা আবদ্ধ করা ভীষণ ক্ষতিকর। এতে নাকি জীবনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিকাশ লাভ ঘটে না। কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় অনিয়মের সুযোগ থাকলে জীবনে স্বেচ্ছাচারিতা দেখা দেয় এবং এর ফলে জীবন হয়ে ওঠে অসুন্দর। এমনকি অতিশয় স্বেচ্ছাচারিতা জীবনের জন্য মৃত্যুকূপ প্রস্তুত করে। সে জীবন অন্যান্য জীবনের সুশৃংখল শান্তির পথে ও নিয়ে আসবে অশান্তির কালো ছায়া। যেখানে অনিয়ম সেখানে জয় এবং ওর অপূর্ণতা অসম্ভব। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাব ঘটে জীবন অপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

বিশ্বশান্তিতে নিয়মানুবর্তিতা : আধুনিক বিশ্বশান্তি রক্ষায় নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন অনেক বেশি। পৃথিবীর মানুষ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিশ্বে চলছে অস্ত্র প্রতিযোগিতা আগামীদিনের প্রজন্মের জন্য এই বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে হলে নিয়ম-নীতির মধ্যেই সকলেই সাবধানে অগ্রসর হতে হবে। এর ফলে হয়তো শত্রুতার পরিবর্তে গড়ে উঠতে পারে বিশ্বশান্তি গড়ে উঠতে পারে এবং বিশ্ব অনাহিক ধ্বংসের হুমকি থেকে রক্ষা পেতে পারে। 

উপসংহার : নিয়ামানুবর্তিতা পাশ্চাত্য জাতিসমূহের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তাই তারা কেবল ব্যক্তি জীবনের সুস্থ তাই ভোগ করে না জাতীয় জীবনে সুখ শান্তি ভোগ করে থাকে। আমাদের জাতীয় চরিত্র নিয়মানুবর্তিতার অভাব অতি দুর্বল। জাতীয় জীবনে উন্নতি করতে হলে আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগত জীবনে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। 

আরও পড়ুন : আমাদের গ্রাম রচনা। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url