শ্রমের মর্যাদা রচনা (২০ পয়েন্ট) অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসি
সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট সপ্তম শ্ৰেণী থেকে শুরু করে অষ্টম, এইচএসসি প্রযন্ত পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা শ্রমের মৰ্যাদা। রচনা পড়া ছাড়াও শ্রম সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেক কেই সঠিক জ্ঞান থাকা অবশ্যক তাই রচনা লেখা চলো এবার পড়া শুরু করা যাক।
- ভূমিকা
- শ্রমের শ্রেণীবিভাগ
- সভ্যতা বিকাশে শ্রমের অবদান/ শ্রম ও সভ্যতা
- উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা
- আমাদের দেশে শ্রম সম্পর্কে ধারণা
- জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
- শ্রমজীবী মনীষীগণ
- শ্রমিকতার কুফল
- উপসংহার
শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট
ভূমিকা : 'শ্রম' (Labour) শব্দটির সাথে আমরা চিরপরিচিত সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি ইতিহাস, সাহিত্য ও ঐতিহ্য মেধা-মনন ধন-মান, দালান-কোঠা, ঘর-বাড়ি পিরামিড, তাজমহল তথা জীবনও এই পৃথিবী শ্রমের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম ধর্মের পবিত্র আল কুরআনে আছে - "লাইসা লিল ইনসানি ইল্লা মাসাআ" অর্থাৎ মানুষের জন্য শ্রম ছাড়া আর কিছুই নেই। আদম-হাওয়া (আ) থেকেই শ্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। আজও তার যাত্রা অব্যাহত রয়েছে যার পরিণাম আধুনিক সভ্যতা। হযরত আদম (আ) মাটি কুপিতেন এবং বিবি হাওয়া সুতো কাটতেন। র্তারপর থেকে আজ প্রযন্ত একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্ন সভ্ভতার গতিধারার দিকে তাকিয়ে বিস্তমিত হতে হয়। সভ্যতার এই উন্নতি ও বিকাশের মূলে রয়েছে যুগ যুগান্তরের মানুষের শ্রম বহু মানুষের তিল তিল শ্রমের বিনিময়ে আজকের এই সহজ জীবন এবং অনন্য ত্রিলোতমা পৃথিবী।
শ্রমের শ্রেণীবিভাগ : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শ্রমকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে শারীরিক এবং মানসিক। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যে শ্রম দেওয়া হয় তা হলো শারীরিক বা দৈহিক শ্রম। যেমন: কৃষক, জেলে, তাঁতি, কর্মকার, চালক ইত্যাদি পেশার এই সব মানুষ কায়িক শ্রম দিয়ে থাকে। অপরদিকে ডাক্তার, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও শিল্পী ইত্যাদি মানুষের মেধা-মননের বুদ্ধিভিত্তিক শ্রম হলো মানসিক। তবে তাদের দেহের মানসিক শ্রমকে বাস্তবে রূপ দিতেন হয় একজন বিজ্ঞানী গবেষণার জন্য গবেষণাগারে কাজ করেন দার্শনিকের পড়াশুনা মনোযোগী হয়ে দর্শন লিখতে। শিল্পীকে পাথর খোদাই করে অথবা অথবা কাট কেটে শিল্পকর্ম করতে হয়। বুদ্ধিজীবীকে অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে জানার জন্য অসংখ্য বই পড়ে কল্যাণের সুনির্দিষ্ট পথ বের করতে হয়। সফল ব্যবসায়ী যেমন মানসিক শ্রম দেন তেমনি তাকে আবার তেমনি কায়িক শ্রমের মাধ্যমেও নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে হয়। তবে এসব কাজে স্বাধীনতা আছে ধরা বাধা ভাবে ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, কেউই কেবল মানসিক শ্রম দেয় না মানসিক শ্রমের সাথে সাথে কায়িক শ্রম দিয়ে থাকেন। অপরদিকে যারা কেবল কায়িক শ্রম দিয়ে থাকেন সময় বাঁধা। নিদিষ্ট সময় প্রযন্ত কায়িক শ্রম দিতে হয়। যন্তের মতো কাজ করতে হয়। তাছাড়া কায়িক শ্রম এর অর্থ ও সামাজিক পদমর্যাদা কম। কিন্ত , সভ্যতার ভিত্তি গড়ে উটেছে কায়িক শ্রমকে নির্ভর করে। শ্রমিকের শ্রম মানবসভ্যতার জনক। আজ অব্দি পৃথিবীতে যত উন্নতি সাধিত হয়েছে তার সবকিছুর মূল এই শ্রম।
সভ্যতা বিকাশে শ্রমের অবদান/ শ্রম ও সভ্যতা: সভ্যতার আদি পর্বে মানুষের কায়িক এবং মানসিক শিকার করে কাঁচা মাংস খেতে শিখেছিল আর সভ্যতার দ্বিতীয় পর্যায়ে মাঠে চাষাবাদ করতে শিখেছিল। সভ্যতার তৃতীয় অধ্যায়ে অর্থাৎ যৌবনের তালিকা তৈরি করতে শিখেছে গ্রীক ও রোমান সভ্যতা গড়ে উঠেছে। বুদ্ধিজীবীর মানসিক এবং শ্রমিকের কায়িক শ্রমিকের মাধ্যমে পিরামিড গঠনে হাজার হাজার মানুষের শ্রমের ফসল। মানব মহিমা অক্ষয় হয়ে রয়েছে তাজমহলে রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিকের হাতের পরশ। সুয়েজ আর পানামা খাল তৈরি করতে দিতে হয়েছে অভিজাত শ্ৰেণীর মানসিক এবং অনভিজাত শ্ৰেণীর কায়িক শ্রম।
সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাংলা রচনা আমাদের গ্রাম।
উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা : বর্তমানে বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় যে উন্নত দেশসমূহ শ্রমের প্রতি মর্যাদাশীল তারা শ্রমিককে সম্মান করে ছোট বড় পার্থক্য করে না। ডা. লুৎফুর রহমান বলেন-"পৃথিবীতে যে জাতি যতো পরিশ্রমী সে জাতি তত উন্নত।" বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন: আমেরিকা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করতে পেরেছে। আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন - "শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি মিটিয়ে দাও।" উন্নত দেশসমূহ হয়ে কাজকে সম্মানের সাথে দেখে বলেই তারা উন্নতির শীর্ষে আহরণ করতে পেরেছে।
আমাদের দেশে শ্রম সম্পর্কে ধারণা : আমাদের শ্রম সম্পর্কে সঠিক ও ভালো ধারণা প্রেষণ করা হয় না মনে করা হয় যারা সমাজে নিচু তারা কায়িক পরিশ্রম করে। সুদখোর মহাজন, কালোবাজারি ব্যবসায়ী, ঘুষখোর অফিসার, সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী, অলস শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, কসাই ডাক্তার, চোরাচালানের নিষিদ্ধ ও টেন্ডারবাজিতে ঘৃণার চোখে দেখে নিন্দা করে অবজ্ঞা করে অপরদিকে প্রশংসা করে এরা সমাজে অটল পয়সা খরচ করে বিদেশে গাড়ি হাকিয়ে চলাফেরা করে আম্মুদ প্রমোদে মত্ত হয় এবং পরিবেশ ও সমাজকে নানাভাবে দূষিত করে তুলে এ কারণে শ্রমের মর্যাদা আমাদের দেশে অস্বীকৃত পরিশ্রমের প্রতি মানুষের অনিয়া লক্ষ্য করা যায় তাই এদেশের মানুষ অলস ও কর্ম বিমুখ হতাশ বেকার অদৃষ্টবাদহয়ে পড়েছে। তার উপর দিয়ে চলছে জগৎ সংসার তারা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পায়না তবে আর কতদিন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ভাষায়-"আসিতেছে শুভ দিন দিনে দিনে বহু বাড়িয়েছে দেনা সুদীতে হইব ঋণ"
জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা : ব্যক্তি বা জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। পৃথিবীর উন্নত জাতির দিকে তাকালে আমরা দেখি তাদের উন্নতির মূলে রয়েছে পরিশ্রম অলস বিমুখ জাতি কোনদিন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। তেমনি অলস প্রেমিক জাতি উন্নতিও করতে পারেনা। পৃথিবীর যেকোনো কাজ পরিশ্রম করা সম্ভব নয়। নিজ সামর্থ অনুযায়ী কাজ করা উচিত। এক সময় মানুষ ছিল প্রকৃতির সন্তান মানুষ তার মেধা ও শ্রম দ্বারা গড়ে তুলেছে সমাজ নগর রাষ্ট্র এবং বসবাসের উপযোগী সব উপাদান কর্ম বিমুখতা নয়। আন্তরিকতা নিয়ে পরিশ্রম করতে হবে আর পরিশ্রমী হলো সমস্যার সমাধান হবে। যে তার পরিশ্রমের পথ ধরে নিজের সুখ সমৃদ্ধি রচনা করে এবং সেই সূত্রে সে সভ্যতা নির্মাণ করে। মানুষ মহামানব হয়ে জন্মায় না পরিশ্রমের মাধ্যমে কর্মের মাধ্যমে সারা জীবনের আলো ছড়িয়ে দিয়ে থাকে। জীবন ও জীবিকার জন্য শ্রম একান্ত অপরিহার্য। প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া যেমন অন্য সম্পদ সৃষ্টি করা যায় না তেমনি শ্রম ছাড়া নতুন সম্পদ আশা করা যায় না তাই অর্জনের পিছনে রয়েছে শ্রম।
সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাংলা রচনা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার।
শ্রমজীবী মনীষীগণ : জগতের মহান ব্যক্তিত্ব মাত্রই কায়িক ও মানসিক পরিশ্রম করেছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ও হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহ নিজে প্রজাদের ঘরে ঘরে আটা পৌঁছাতেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন কেবল হুকুম দিতেন না নিজের সাথে থেকে অন্যদের সম্মানীয় কাজ করতেন শ্রমিকদের সাথে নিচে কাজে অংশগ্রহণ করতেন দিল্লির বাদশাহ্ নাসিরুদ্দিন নিজে টুপি সেলাই করে দিন গুজরান করতেন। তাই আমাদের শ্রমকে সম্মান করা উচিত নিজেদের শ্রম নিয়োজিত করার কর্তব্য এর অনেক ভালো ঠিক।
শ্রমিকতার কুফল : অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা যে ব্যক্তি শ্রমবিমুখ তার থেকে কখনো ভালো কিছু আশা করা যায় না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন-"নিজ হাতে কাজ করার মত পবিত্র জিনিস আর নেই." তাই বলা যায় যে ব্যক্তি কাজ করে না তার মনে কোন সৎ চিন্তা সৎ ভাব উদার হতে পারে না সে সমাজের বোঝা। শ্রমবিমুখ মাঁনুষ পৃথিবিতে শির উচু করে দাঁড়াতে পারবেনা।
উপসংহার: কোনো শ্রমিক ছোট নয় সর্বপ্রথম আমাদের এই মন্ত্রে উদ্ভাসিত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। এরপর শারীরিক ও তাই উভয় প্রকার শ্রমের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত শ্রম সম্পর্কে আমাদের নেতিবাচক ধারণা না ভাঙলে এবং অলসতা পরিহার না করে কর্মদীপক করতে না পারলে আমাদের ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে উন্নতি অসম্ভব। মানব জীবন একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। যুদ্ধ সফল হতে চাইলে শ্রমের কোন বিকল্প নেই।
সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাংলা রচনা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url