লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য কি ছিল ?

ভূমিকা : ১৯৪০ সালের “লাহোর প্রস্তাব” ও জিন্নাহর “দ্বিজাতি তত্ত্ব” পাকিস্তান আন্দোলনের মূলভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির দাবি মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে অগ্নিস্ফুলিত ছড়িয়ে দিয়েছিল। লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের সাত বছরের ব্যবধানে ভারত বিভক্তি হয়।

লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য কি ছিল

লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য: ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ এবং পাকিস্তান বাঙালি জাতির জাতি-প্রশ্নের রাষ্ট্রীয় সমাধান দিতে পারেননি। পরবর্তীকালে পাকিস্তানে ভেঙ্গে সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য নিম্নে আলোচনা করা হলো।

লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য কি ছিল

আরো পড়ুন: ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে?

১. মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষাঃ মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়। কারণ- ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতে মুসলমানরা ছিল অবহেলিত। ইংরেজ শাসনের একচোখা নীতি এবং কংগ্রেস নেতাদের প্রাধান্যের কারণে ভারতবর্ষে মুসলমানরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার হিন্দু-মুসলিম সমস্যা সমাধানে গোল টেবিল বৈঠক আহ্বান করলে কংগ্রেস নেতাদের অসহযোগিতার কারণে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা বিঘ্নিত হয়।

২. স্বাধীন বাংলার বীজঃ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মূলধারা গুলো সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল। এ প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয় যে, ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠিত হবে। তাই লাহোর প্রস্তাবের উপস্থাপক শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক বলেন “বাংলার শাসন ক্ষমতা বাঙালি মুসলমানের হাতে এসেছে।"

আরো পড়ুন: বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর

৩. বঙ্গদেশের সঠিক ভূসীমানা নির্ধারণঃ ১৯২৮ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর হিন্দু মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। তাই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতি তত্ত্ব উদ্ভাবন করে ঘোষণা দেন যে, ইসলাম ও হিন্দু শুধু দুটি ভিন্ন ধর্মই নয় বরং দুটি ভিন্ন ও সুনির্দিষ্ট সামাজিক ব্যবস্থা। সুতরাং উভয় জাতির জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন। এ কারণে ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।

৪. আস্তঃস্বার্থের সঠিক মিমাংসাঃ ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ বিকেল ৩টায় লাহোর অধিবেশনে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক তার লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে দুটি মুসলিম স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি জানায়। যেখানে স্বাধীন বাংলাদেশ একটি আলাদা রাষ্ট্রের আন্তঃস্বার্থ বিদ্যমান ছিল।

আরো পড়ুন: অপারেশন সার্চলাইট কি? অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বোঝায়।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী ভারত বিভক্ত হলে পূর্বাঞ্চলে যেখানে বর্তমান বাংলাদেশ সেখানে ঐ সময় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা চিল। বাস্তবে তাতো হয়ই নি, উপরন্তু নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন পর্যন্ত অস্বীকৃত হয়। এসবই ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url