পায়খানার সাথে রক্ত পড়া: কারণ, বন্ধের উপায় এবং প্রতিরোধ
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া (Rectal Bleeding) বর্তমান সময়ের একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকের ক্ষেত্রে বেশ ভীতিকর সমস্যা মনে করে থাকে। এটি প্রায়শই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পাকস্থলী ও অন্ত্র) সিস্টেমের কিছু সমস্যার কারণে ঘটে থাকে। বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই এ সমস্যায় ভুগছেন বলে একটি রিপোর্ট এ দেখা গেছে এই সমস্যাটির কথা অনেকেই লজ্জার কারণে পরিচিতি এবং ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে অস্বস্তি বোধ করেন যদি তা একেবারেই উচিত না। বরং প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এই পায়খানার সাথে রক্ত পড়া সমস্যাটির চিকিৎসা করা যায় তাহলে আরও বড় ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই, এই ব্লগ পোস্টে আমরা পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার কারণ, পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় এবং কীভাবে এই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার কারণসমূহ
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে এর মধ্যে কিছু সাধারণ এবং মহিলার অথবা পুরুষের পায়খানার সাথে রক্ত পড়া কিসের লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. হেমোরয়েড (Piles) বা অর্শ রোগ
হেমোরয়েড হলো পায়ুপথ বা মলদ্বারের রক্তনালী ফুলে যাওয়া যা অনেক সময় মলত্যাগের সময় রক্তনালী ফেটে যায় এবং এর ফলে পায়খানার সাথে রক্ত পড়তে পারে। এটি নিয়ে বেশি চিন্তার প্রয়োজন নেই। এটি খুবই সাধারণ এবং সাধারণত দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকা, ভারী ওজন কোনো বস্তু তোলা বা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও এটি হতে পারে।
২. গ্যাস্ট্রিক আলসার
প্রায় সময়েই দেখা যায় পেটের আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণে পাকস্থলীতে ফোলা বা ক্ষত তৈরি হয় যা পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে। আলসারের রক্ত পাকস্থলীর মাধ্যমে পায়খানার সাথে বের হতে পারে, যা কখনও কখনও কালো রক্ত হিসেবে দেখা যায় পায়খানার সাথে পড়তে দেখা যায়।
৩. ফিসার
মলদ্বারের বা পায়ুপথের চামড়া ফেটে গেলে মূলত ফিসার হয় থাকে। মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা হওয়া এবং সেই সাথে রক্তপাত হতে পারে। ফিসার সাধারণত যখন মল একটু শক্ত বা কঠিন হয় তখন মল ত্যাগ করার কারণে হয়, যা মলদ্বারে চাপ সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুন: অর্শ বা পাইলস এর লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা
৪. পলিপস ও ক্যান্সার
কোনো কোনো ক্ষেত্রে পলিপস বা ক্যান্সারের কারণে রক্তপাত ঘটতে পারে। যদিও এটি অনেক এবং কম সাধারণ, তবে দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাত হলে সে ক্ষেত্রে এটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
৬. ইনফেকশন
ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের কারণেও পায়খানার সাথে রক্ত পড়তে পারে। এটি সাধারণত ডায়রিয়া এবং পেটের ব্যথার সাথে হয়।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার লক্ষণ
পায়খানার সাথে রক্ত পড়লে তা কিভাবে বুঝবেন? নিচের কিছু লক্ষণ দেখে দেওয়া হল যার মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারবেন :
- মলত্যাগের সময় তাজা লাল রক্ত পড়া।
- মল কালো হয়ে যাওয়া।
- মলদ্বারে জ্বালাপোড়া বা তীব্র ব্যথা হওয়া।
- পেটের নিচের অংশে ব্যথা।
- দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা (যদি অতিরিক্ত রক্তপাত হয় সে ক্ষেত্রে )।
এই লক্ষণগুলির যেকোনো একটি দেখা দিলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায়
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপায় রয়েছে। তবে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় নির্ভর করে রক্তপাতের মূল কারণের ওপর। নিচে কিছু সাধারণ উপায় উল্লেখ করা হলো:
১. খাবার সময় পরিবর্তন
অসময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এবং খারাপ জীবনযাত্রার কারণেই পায়খানার সাথে রক্ত পড়ে থাকে। সুতরাং জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা সবচেয়ে ভালো প্রতিকার হতে পারে।
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার : কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন: সবজি, ফলমূল এবং আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া এবং সবজি বেশি খাওয়া যেমন পুইশাক, পাটের শাক, কলমিশাক ডাউল এসব ধরণের খাবার খাওয়া এবং গরু এবং অনন্য মাংস না খাওয়াই উত্তম।
পানি পান : পর্যাপ্ত পানি পান করলে মল নরম থাকে এবং মলত্যাগ সহজ হয়, ফলে মলদ্বারে চাপ কম পড়ে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
অলস জীবনযাপন এড়িয়ে চলা : নিয়মিত ব্যায়াম করলে অন্ত্রের কার্যকলাপ স্বাভাবিক থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যায় যা পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
২. মল নরম করার ওষুধ খাওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মল নরম করার জন্য ইসবগুল এর ভুসি বা ওষুধ গ্রহণ করুন। এতে মলত্যাগ সহজ হয় এবং মলদ্বারে চাপ কমে যায়।
আরো পড়ুন: পায়খানা ক্লিয়ার - কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
৩. ওষুধ এবং ক্রিম
যদি রক্তপাত হেমোরয়েড বা ফিসার-এর কারণে হয়, তাহলে ডাক্তার ব্যবহারের জন্য কিছু ওষুধ বা ক্রিম দিয়ে থাকেন । এগুলো মলদ্বারের রক্তনালী সংকুচিত বা ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমায়।
৪. গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎস
যদি গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে রক্তপাত হয়, তাহলে অ্যান্টাসিড বা অন্যান্য গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ গ্রহন করা উচিত।
৫. সার্জারি
যদি পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার কারণ কোনো পলিপস বা টিউমার হয়, তাহলে ডাক্তার অস্ত্রোপচারের বা অপারেশন এর পরামর্শ দিতে পারেন।
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের উপায় এবং প্রতিরোধ
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের কিছু সাধারণ উপায় রয়েছে রক্ত পড়া বন্ধ করতে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে তাই এ জন্য কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো মেনে চললে এই সমস্যার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার, ফলমূল, সবজি এবং শস্যজাতীয় খাবার রাখতে হবে। এতে হজম ভালো হয় এবং মল নরম থাকে, ফলে মলদ্বারে কোনো চাপ পড়ে না।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করা
পানির অভাবেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে মল নরম থাকে এবং সহজে ত্যাগ করা যায়।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করলে হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪. মলত্যাগের সময় চাপ না দেওয়া
মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। চাপ দিলে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ পড়ে এবং ফেটে যেতে পারে, যার ফলে রক্তপাত হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ভারী কাজ এড়িয়ে চলা
অতিরিক্ত ভারী কাজ বা ওজন তোলার কারণে হেমোরয়েড হতে পারে। তাই ভারী কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
৬. নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
পায়খানার সাথে রক্ত পড়ার সমস্যায় ভুগলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে এটি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আরো পড়ুন: বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা।
শেষ কথা,
পায়খানার সাথে রক্ত পড়া সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এর পেছনে গুরুতর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে তাই উপরে পায়খানার সাথে রক্ত পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায় গুলো তুলে ধরা হয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url