বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম : এখন সহজ ২ টি পদ্ধতিতে
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম: বর্তমান যুগে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (MFS) বহুগুন বেড়েছে। বর্তমান বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকাশ অন্যতম। যা বর্তমানে আমাদের লেনদেনকে আরো সহজ করে তুলেছে। যেমন: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, বিভিন্ন ধরণের বিল পরিশোধ করা, এবং অনলাইন কেনাকাটা করার সুবিধা দিয়ে বিকাশ বর্তমানে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু, অনেকেই হয়তো এখনো জানেন না বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম বা বিকাশ একাউন্টখুলতে কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন।
এই ব্লগে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব কীভাবে আপনি সহজে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারেন। বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার সুবিধা:
বিকাশ একাউন্টের খোলার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা পেতে পাবেন। নিচে কিছু বিকাশ একাউন্টের খোলার সুবিধা তুলে ধরা হলো:
১. টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা: আপনি সহজেই যেকোনো সময়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে পারবেন খুবই স্বল্প সময়ের মাধ্যমে।
২. বিল পরিশোধ: আপনার বিভিন্ন ধরণের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিলসহ অন্যান্য বিল অনলাইনে বিকাশ একাউন্ট এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন।
৩. মোবাইল রিচার্জ: আপনি যেকোনো সময়ে সকাল থেকে রাত যখন ইচ্ছা আপনার মোবাইল নম্বরে যেকোনো অপারেটরের রিচার্জ, ইন্টারনেট, মিনিট ক্রয় করতে পারবেন।
৪. ই-কমার্স কেনাকাটা: বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে কেনাকাটা করতে পারবেন।
৫. ক্যাশ আউট সুবিধা: আপনার একাউন্ট থেকে সহজেই বিকাশের নিকটস্থ এজেন্ট বা এটিএম থেকে আপনি নগদ বা ক্যাশ টাকা তুলতে পারবেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য যা যা প্রয়োজন
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম রয়েছে এর জন্য আপনার কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমেই আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য একটি বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। পরিচয় পত্র না থাকলে আপনি যদি ছাত্র হন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্ম সনদ এর মাধ্যমে আপনি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন সে ক্ষেত্রে আপনার বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরে মধ্যে হতে হবে।
আরো পড়ুন: নগদ একাউন্ট দেখার নিয়ম।
২. মোবাইল ফোন নম্বর: যেকোনো একটি মোবাইল অপারেটরের একটি একটিভ ফোন নম্বর থাকতে হবে। বিকাশ একাউন্ট খোলার সময় এটি আপনার বিকাশ একাউন্টের সঙ্গে অটোমেটিক লিঙ্ক হবে।
৩. সিম নিবন্ধন: যেই সিম দিয়ে আপনি বিকাশ একাউন্ট খুলবেন, সেটি অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে।
৪. স্মার্টফোন বা ফিচার ফোন: আপনার ফোনে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে একটি স্মার্টফোনের প্রয়োজন, তবে ফিচার ফোনেও কোডের মাধ্যমে বিকাশ সেবা ব্যবহার করা যায়। এবং বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়।
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন:
এখন ধাপে ধাপে বিকাশ একাউন্ট খোলার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যাক। এটি খুবই সহজ এবং আপনি কয়েক মিনিটেই এটি করতে পারবেন।
পদ্ধতি ১: বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনি আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে বিকাশ সফটওয়্যার এর মাধ্যমে খুব সহজে একাউন্ট খুলতে পারেন। নিচের একাউন্ট খুলতে ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
১. বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন:
প্রথমে, আপনার স্মার্টফোনে গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য) এবং অ্যাপ স্টোর (আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য) থেকে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন। অ্যাপটি ডাউনলোড হয়ে গেলে বিকাশ সফটওয়্যার ইনস্টল করুন।
২. অ্যাপ খুলুন ও সাইন আপ করুন:
অ্যাপ ইনস্টল হয়ে গেলে, বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন এবং "Sign Up" অপশনটি সিলেক্ট করুন। আপনার মোবাইল নম্বরটি দিন, যেটি আপনি বিকাশ একাউন্টের জন্য ব্যবহার করতে চান।
৩. ভেরিফিকেশন কোড প্রবেশ করুন:
বিকাশ থেকে আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। সেই কোডটি অ্যাপে প্রবেশ করুন এবং পরবর্তী ধাপে যান।
৪. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিন:
আপনার পূর্ণ নাম (জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী), জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, এবং ঠিকানা প্রদান করুন।
৫. পিন সেট করুন:
একটি ৫ সংখ্যার পিন সেট করুন, যা আপনার একাউন্টে লগইন এবং লেনদেনের জন্য প্রয়োজন হবে। এবং পিনটি কারও সাথে শেয়ার করবেন না।
৬. একাউন্ট অ্যাক্টিভেট করুন:
সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর, আপনার বিকাশ একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে এবং আপনি লেনদেন শুরু করতে পারবেন।
পদ্ধতি ২: বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
যদি আপনার কাছে স্মার্টফোন না থাকে, তবে আপনি বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য বিকাশ এজেন্টের সাহায্যে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারেন। নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন:
নিকটস্থ বিকাশ এজেন্ট খুঁজুন:
১. প্রথমে আপনার আশেপাশের নিকটস্থ বিকাশ এজেন্টের কাছে যান। আপনি আপনার এলাকায় কোনো মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের দোকানে বা বিকাশ লোগো সম্বলিত দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন সে কি বিকাশের একজন এজেন্ট কিনা। এজেন্ট হলে তার মাদ্যমে আপনি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারেন।
২.. জাতীয় পরিচয়পত্র দিন:
প্রথমে বিকাশ এজেন্টকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) দেখান এবং একাউন্ট খোলার জন্য আপনার ফোন নম্বর দিন। আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এবং বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য এজেন্টকে এই উপরোক্ত তথ্য গুলো প্রদান করুন।
৩. পিন সেট করুন:
বিকাশ এজেন্ট আপনার জন্য একটি বিকাশ একাউন্ট তৈরি করবেন এবং আপনাকে একটি পিন সেট করতে বলবেন। আপনি ৫ সংখ্যার একটি পিনটি সেট করুন এটি ২ বার করতে হবে। পিনটি কাউকে দেখবেন না এবং কাউকে বলবেন না।
৪. একাউন্ট একটিভ করুন:
সবকিছু ঠিকঠাক হলে, আপনার একাউন্ট একটিভ হয়ে যাবে এবং আপনি তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার পর যা যা করবেন:
বিকাশ একাউন্ট খোলার পর আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে, যাতে আপনার একাউন্ট নিরাপদ থাকে এবং আপনি সঠিকভাবে বিকাশ সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
১. পিন সুরক্ষিত রাখুন:
আপনার পিন নম্বর গোপন রাখুন এবং কোনোভাবেই কারও সাথে শেয়ার করবেন না। এটি আপনার একাউন্টের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: রকেট একাউন্ট চেক করার কোড ও একাউন্ট খোলার নিয়ম।
২. বিকাশ অ্যাপ আপডেট রাখুন:
যদি আপনি বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলে নিয়মিত বিকাশ অ্যাপ আপডেট করুন, যাতে নতুন ফিচারগুলো উপভোগ করতে পারেন।
৩. সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট করুন:
যদি আপনি কোনো সন্দেহজনক লেনদেন বা প্রতারণার শিকার হন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশ কাস্টমার কেয়ার (16247) এ যোগাযোগ করুন।
৪. লেনদেন সীমা সম্পর্কে জানুন
বিকাশে লেনদেন এর প্রতিদিনের এবং মাসিক লেনদেনের একটি সীমা আছে। সেটি লক্ষ্য রাখুন। এবং বিকাশের লেনদেন এর সীমা সম্পর্কে জানুন।
বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারের টিপস:
নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার পর বিকাশ ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস রয়েছে, যা আপনার জানা উচিত এবং যা আপনাকে আর্থিক ক্ষতি থেকে সহায়তা করতে পারে।
১. ফিশিং থেকে সাবধান থাকুন:
বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার এর সময় কোনো ধরণের ফেক কল, মেসেজ বা ইমেইলে আপনার বিকাশের পিন বা তথ্য প্রদান করবেন না। বিকাশ এর কাস্টমার কেয়ার থেকে অথবা বিকাশ প্রতিষ্ঠান থেকে কখনোই আপনার পিন বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য তথ্য চায় না বা জানার জন্য কখনই ফোন বা মেসেজ করবে না, এবং এটা কখনই তারা করে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না।
২. ব্যাকআপ নম্বর যুক্ত করুন:
বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার পর একটি ব্যাকআপ নম্বর যুক্ত করুন, যাতে ফোন হারিয়ে গেলে বা নম্বর পরিবর্তন করলে সহজেই বিকাশ একাউন্টে অ্যাক্সেস করতে পারেন।
৩. বিকাশে ক্যাশ আউট করার আগে সাবধানতা:
কোনো এজেন্ট থেকে টাকা তুলতে গেলে অবশ্যই যাচাই করে দেখুন সে আসলেই বিকাশের বৈধ এজেন্ট কি না। এছাড়া, বিকাশ লেনদেন করার সময় পিন সব সময় গোপন রাখুন।
আরো পড়ুন: 5000 টাকায় ল্যাপটপ : সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ কেনার উপায়।
উপসংহার:
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ একটি প্রক্রিয়া, এবং কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলে আপনি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। আপনার NID এবং মোবাইল ফোন থাকলেই আপনি অনলাইনে বা এজেন্টের মাধ্যমে একাউন্ট খুলতে পারবেন। একবার একাউন্ট খোলার পর, বিকাশের সেবা আপনার জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে। আপনি এখন থেকে সহজেই যেকোনো সময় টাকা পাঠাতে, বিল পরিশোধ করতে, বা অন্য যেকোনো আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন। বিকাশ ব্যবহার করুন এবং লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ করুন।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url