জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বর্তমান সময়ে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ও অনেক সহজ একটি প্রসেস। এখন আপনি মাত্র ৫ মিনিটেই জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিয়ে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারেন। যেহুতো, বর্তমানে বিকাশের ব্যবহার দ্রুততার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং বিকাশ অন্যতম জনপ্রিয় একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, যা মানুষকে সহজে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়েছে। সাধারণত বিকাশ একাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) লাগে, তবে অনেকেরই হয়ত NID না থাকায় বিকাশ সেবা ব্যবহার করতে পারে না।
তবে বর্তমানে বিকাশ কর্তৃপক্ষ এখন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার সুযোগ দিয়েছে, যা বিশেষ করে তরুণ এবং নতুন ভোটারদের জন্য বেশ উপকারী। এই ব্লগে আমরা জানব কীভাবে আপনি জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং এর প্রয়োজনীয় ধাপগুলো।
কেন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলবেন?
বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য সাধারণত গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) প্রয়োজন হয়। কিন্তু যাদের NID নেই বা যারা এখনও NID পায়নি অথবা যাঁদের বয়স ১৮ এর নিচে, তাদের জন্য বিকাশ সেবা পাওয়া কিছুদিন পূর্বেও দুস্কর হয়ে যেত। কিন্তু, বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের বিকাশের সেবা ও তরুণ প্রজন্মদের ক্যাশলেস লেনদেন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিকাশ ১৪ থেকে ১৮ বয়সের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং বা ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও যেকোনো কিশোর-কিশোরী বা ছেলে-মেয়ে এখন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম জেনে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারে। এবং যাদের NID নেই তাদের জন্য এটি একটি বিকল্প উপায় যা বিশেষত অপ্রাপ্তবয়স্কদের একটি সুবিধা।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে:
১. NID : যাদের NID নেই, তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
২. তরুণদের জন্য সহজ সুবিধা: জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং তরুণরা সহজেই তাদের লেনদেনের জন্য একটি বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবে।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এবং তথ্য প্রয়োজন একটি বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য যা নিচে দেওয়া হল :
১. জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট: জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমেই আপনার একটি বৈধ জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট থাকতে হবে, যা অনলাইন থেকে প্রাপ্ত বা ম্যানুয়াল হতে পারে। ম্যানুয়াল হলেও হবে।
২. মোবাইল নম্বর: বিকাশ একাউন্টের খোলার জন্য একটি মোবাইল নম্বর প্রয়োজন।
৩. অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): যেহেতু জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই একজন অভিভাবকের NID দিতে হবে।
৪. একটি বিকাশ অ্যাপ: বিকাশ অ্যাপ ইনস্টল করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম এখন অনেক সহজ একটি প্রক্রিয়া। এখন আমরা ধাপে ধাপে জানাবো কীভাবে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা খুলবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে অনুসরণ করুন এবং আপনিও জন্ম নিবন্ধন দিয়ে একটি বিকাশ একাউন্ট খুব সহজেই খুলে নিন :
ধাপ ১: বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করুন
প্রথমে আপনি আপনার মোবাইল থেকে Google Play Store বা Apple App Store থেকে ওপেন করুন তারপর বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন।
১. Google Play Store: Android ব্যবহারকারীরা এখান (https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bKash.customerapp) গিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
২. Apple App Store:** iPhone ব্যবহারকারীরা এখান (https://apps.apple.com/bd/app/bkash/id1203796547) থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ধাপ ২: বিকাশ অ্যাপে সাইন আপ করুন
১. অ্যাপটি ইনস্টল হয়ে গেলে, অ্যাপটি খুলুন এবং "Sign Up" বাটনে ক্লিক করুন।
২. এবার আপনার মোবাইল নম্বরটি দিন, যা বিকাশ অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যবহৃত হবে।
৩. মোবাইল নম্বরটি দেওয়ার পর আপনার মোবাইলে একটি OTP (One Time Password) আসবে। সেটি অ্যাপে ইনপুট করুন।
ধাপ ৩: জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে নিবন্ধন করুন
১. OTP ভেরিফাই করার পর, আপনাকে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য তথ্য দিতে বলা হবে। এখানে আপনাকে NID এর বদলে জন্ম নিবন্ধন নির্বাচন করতে হবে।
২. আপনার জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নম্বর এবং আপনার জন্ম তারিখ দিন।
৩. পরবর্তী ধাপে, আপনার অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর দিন।
ধাপ ৪: ছবি আপলোড করুন
এখন আপনাকে আপনার একটি ছবি আপলোড করতে হবে। এখানে আপনার মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে সরাসরি ছবি তোলা যাবে অথবা আপনার গ্যালারি থেকে একটি ছবি আপলোড করতে পারবেন।
ধাপ ৫: পিন নম্বর সেট করুন
সব তথ্য পূরণ হয়ে গেলে, আপনাকে একটি পিন নম্বর সেট করতে হবে। এই পিন নম্বরের মাধ্যমেই আপনি আপনার বিকাশের প্রতিটি লেনদেন সম্পন্ন করবেন, তাই আপনার পিন নম্বরটি গোপন রাখুন।
ধাপ ৬: একাউন্ট ভেরিফিকেশন
সব কিছু সঠিকভাবে জমা দেওয়ার পর, বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনটি যাচাই করবে এবং একাউন্ট ভেরিফাই করবে। কিছুখন পর আপনি আপনার মোবাইলে একটি নোটিফিকেশন পাবেন, যেখানে জানানো হবে যে আপনার একাউন্ট সফলভাবে একটিভ হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার সুবিধা
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার কিছু সুবিধা রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি জন্ম নিবন্ধন দিয়ে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে সুবিধা গুলো নিতে পারেন। নিচে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট এর কিছু সুবিধা তুলে ধরা হলো:
১. NID ছাড়াই লেনদেন: যারা এখনও NID পাননি বা অপ্রাপ্তবয়স্ক, তারা সহজেই লেনদেন করতে পারবেন।
২. সহজ প্রক্রিয়া: পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং কয়েকটি ধাপেই সম্পন্ন করা যায়।
আরো পড়ুন: বিকাশ কাস্টমার কেয়ার কোথায় কোথায় আছে জেনে নিন।
৩. বিকাশের ব্যাংকিং সুবিধা: বর্তমানে বিকাশের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়, যা লেনদেনকে আরও সহজ করে তোলে। যা বিকাশ গ্রাহকদের অন্যতম একটি সুবিধা।
৪. ক্যাশলেস লেনদেন: ক্যাশবিহীন লেনদেনের সুবিধা পাওয়া যায় যা অনেকটাই নিরাপদ।
৫. গ্রাহকসেবা সুবিধা: বিকাশের ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা পাওয়া যায়, যা আপনার যে কোনো বিকাশ লেনদেন এবং বিকাশ একাউন্ট সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যার সমাধান দিবে।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার পর করণীয়
বিকাশ একাউন্ট খোলার পর আপনার অনেক কিছু করণীয় রয়েছে , যা আপনার লেনদেন কে আরো সহজতর নিরাপদ ও সুবিধাজনক হয় উঠবে নিচে বিকাশ একাউন্ট খোলার পর করণীয় গুলো রয়েছে:
১. পিন নম্বর গোপনীয় রাখুন : বিকাশ একাউন্ট খোলার পর আপনার পিন নম্বর অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
২. অভিভাবকের সহযোগিতা: যেহেতু আপনি জন্ম নিবন্ধন দিয়ে একাউন্ট খুলছেন, তাই লেনদেন সম্পর্কিত জটিলতায় আপনার বাবার NID প্রয়োজন হতে পারে। যেমন: বিকাশ একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া সে ক্ষেত্রে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে আপনার অভিবাবকের NID প্রয়োজন হতে পারে।
৩. লেনদেনের সীমা জানুন: বিকাশের কিছু লেনদেনের সীমা রয়েছে, আপনি চাইলেই ইচ্ছা মতো লেনদেন করতে পারবেন না যেমন দৈনিক এবং মাসিক লেনদেনের একটি সীমা রয়েছে। এই লেনদেনের সীমা অনুযায়ী আপনাকে লেনদেন করতে হবে।
৪. সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে রিপোর্ট করুন: যদি আপনি আপনার বিকাশ একাউন্ট এ কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ বা প্রতারণার সম্মুখীন হন, তাহলে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে (16247) যোগাযোগ করুন।
৫. QR কোড ব্যবহার করুন: লেনদেনের সময় সহজে টাকা আদান-প্রদান করতে আপনার বিকাশ একাউন্ট এ একটি QR কোড থাকবে তা ব্যবহার করুন।
বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারের টিপস
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার পর আপনার বিকাশ একাউন্ট টি নিরাপদ ও সুরক্ষিত এবং কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য নিচে কিছু টিপস রয়েছে :
১. পাসওয়ার্ড সুরক্ষা নিশ্চিত করা: বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার এর সময়ে আপনার বিকাশ অ্যাপের জন্য একটি শক্তিশালী এবং ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
২.সন্দেহজনক মেসেজ এড়িয়ে চলুন: বিকাশের নামে সন্দেহজনক মেসেজ বা লিংক এড়িয়ে চলুন। এবং বিকাশ থেকে কল এমন পরিচয়ে কোনো কল আসলে ও এড়িয়ে চলুন কারণ কখনই বিকাশ থেকে আপনাকে কল করা হবে না। এটি বিকাশ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়।
আরো পড়ুন: বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম, সুবিধা, ও মার্চেন্ট লিমিট।
৩. লেনদেন যাচাই : প্রতিটি লেনদেনের পরে বিকাশ একাউন্ট এ ম্যানুয়ালি অথবা অ্যাপ ব্যবহার করে নিশ্চিত করুন যে লেনদেন টি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
উপসংহার:
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনি বিকাশের সমস্ত সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। যারা এখনো NID পাননি বা তরুণরা, তারা এই সম্পূর্ণ জন্ম নিবন্ধন দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম প্রক্রিয়াটি পড়ুন এবং একটি জন্ম নিবন্ধন দিয়ে খুব সহজেই একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে ফেলুন।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url