বাঙালি একটি সংকর জাতি-ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ বাঙালি একটি সংকর জাতি কেননা বাঙালি একক কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী নয়। তাই বাঙালি মানুষের বাহ্যিক দৈহিক আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনায় কোন বিশুদ্ধ নরগোষ্ঠীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বাঙালি জাতি মূলত প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ-বিরোধ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। বাঙালি জাতির ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে বিভিন্ন জাতিবর্ণের রক্তপ্রবাহ। এ কারণেই অনেক নৃবিজ্ঞানী বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যে সব জাতির রক্তপ্রবাহ বাঙালি জাতির মধ্যে বিদ্যমান তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
বাঙালি একটি সংকর জাতি-ব্যাখ্যা কর।
১. আদি অস্ট্রেলীয়দের প্রভাবঃ বাঙালি জাতির মধ্যে অস্ট্রেলীয় জনগোষ্ঠীর অনেকটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান শ্রীলংকার ভেডিড জাতির সাথে এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য বিদ্যমান। আজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার বছর পূর্বে এ সম্প্রদায় পশ্চিম ভূমধ্যসাগর এলাকা থেকে আগমন করে। এদের দৈহিক গঠন গড়নে খাটো বা মধ্যমাকৃতির এবং গায়ের রং কালো। এদের প্রভাব সাঁওতাল, ওরাঁও, বৈদ্য ও বয়স্কদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।
আরো পড়ুন: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
২. আর্য ভাষাভাষীর প্রভাবঃ আর্যরা ছিল জার্মানি, মধ্যফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও উত্তর ইতালি তথা আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠী। এরা ভারতবর্ষে দ্রাবিড়-ভেডিডদের পরাজিত করে বর্ণাশ্রম প্রথার সৃষ্টি করে। এদের বৈশিষ্ট্যহলো, দেহের বলিষ্ঠ গড়ন, লম্বা মাথা, সরু লম্বা নাক ও কটা চোখ। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে এদের প্রভাব কর্ম-বেশি লক্ষ্য করা যায়।
৩. দ্রাবিড় মঙ্গোল গোষ্ঠীর প্রভাবঃ প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে দ্রাবিড়রা এদেশে এসেছিল। এরা দৈহিক গড়নে অনেকটা মধ্যমাকৃতির, হালকা পাতলা, ছোট নাক ও গাঁয়ের রং তামাটে। মঙ্গোলীয়দের দৈহিক বৈশিষ্ট্যও অনেকটা অনুরূপ। তাই নৃবিজ্ঞানী রিজেল বাঙালিদের মঙ্গোলিয়া-দ্রাবিড় প্রভাবিত এক সংকর জাতি বলে উল্লেখ করেন।
৪. বহিরাগত মুসলমানদের প্রভাবঃ মুর্শিদাবাদের ফজলে রাব্বি তাঁর হাকিকতে মুসলমানে গ্রন্থে বলেছেন বাঙালি জনগোষ্ঠীতে তুর্কি, আফগান, মুঘল, আবিসিনীয়, আরবি এবং ইরানীদের প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। কেননা অষ্টম ও নবম শতকে এদেশের বাইরের বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে পীর, আউলিয়া ও তাদের অনুগামী শিষ্যরা ইসলাম প্রচারে এসেছিলেন।
আরো পড়ুন: ৬ দফা গুলো কি কি।
৫. পার্সিক ও শক জাতির প্রভাবঃ ঐতিহাসিকগণের মতে, আর্য জাতির পরপরই বাঙলায় পার্সিক ও শক জাতির আগমন ঘটেছিল। এ জাতিদ্বয় বাঙালিদের দেহে মধ্যমাকৃতি, গোলমাথা, উন্নত/ দীর্ঘ নাক ও পীতাঙ্গ চোখের ছাপ রেখে গেছে।
৬. নিগ্রোয়েডঃনৃতাত্ত্বিকগন মনে করেন, ভারত উপমহাদেশের প্রথম স্তরের জনগোষ্ঠী হলো নেগ্রিটো, এ জনগোষ্ঠীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য হলো- খর্বাকৃতি, কালো বর্ণ, কোকড়ানো চুল, ঠোঁট পুরু ও উল্টানো, নাক অতি চ্যাপ্টা। বাংলার সুন্দরবন, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলায় এ জাতির প্রভাব বিদ্যমান।
উপসংহার : বাঙালি জাতি মূলত প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ-বিরোধ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। বাঙালি জাতির ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে বিভিন্ন জাতিবর্ণের রক্তপ্রবাহ। এ কারণেই অনেক নৃবিজ্ঞানী বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা কর।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url