আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা | The Daily Learn

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক এই মায়ের ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা এই পর্বে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জন। নিচে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হলো। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা- দি ডেইলি লার্ন

ভূমিকা: একুশ আমাদের জাতীয় চেতনার মূর্ত প্রতীক। একুশ আমাদের ঐতিহ্য অহংকারের রক্তসিক্ত দিন, হিরণময় পংক্তিমালা, চেতনায় প্রচলিত, সাহসী ঠিকানা। এই দেশ সবুজ শ্যামলের দেশ। কৃষ্ণচূড়ার ফলের আবেগ নিয়ে বর্ণমালা সব একদিন ছড়িয়ে পড়েছিল রাজপথে, মিছিলে। বাংলার আকাশ-বাতাস ধ্বনিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ শান্তি রূপ লাভ করেছিল। প্রান্তীয় এই মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ অজানা অনেক ভাই। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষা এই ভাষার মূল্যায়ন আমরা দেখিনি অনেক দিন। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আনন্দে ভরে উঠে বাংলার আকাশ বাতাস সবুজ শ্যামল প্রান্তর।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব: ১৯৫২ সালের এই মাতৃভাষার যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়ে ১৯৫২ সালের অপ্রতিরোধ্য রূপ পায়। ফেব্রুয়ারীতে প্রদেশব্যাপী হরতাল বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ শাসকগোষ্ঠীর ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা এই কর্মসূচি বানচাল করার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ ও ওই রাতেই সিদ্ধান্ত নেয় ১৪৪ ধারা এবং পরদিন একুশে ফেব্রুয়ারি সুপরিকল্পিত ভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ছাত্ররা আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেয় এক নতুন দিগন্তে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ব্যাখ্যা: পুলিশ প্রথমে মারমুখী হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র-জনতার বিশাল জামায়াতের প্রতি প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ এবং পরে  নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ এক মর্মান্তিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন সালাম, বরকত, রফিক, শফিউল সহ নানা নাম না জানা অনেকে। ভাষা শহীদ এই মহান সন্তানদের আত্মত্যাগের স্মারক হিসেবে জাতি এই দিনটিকে ভাষা শহীদ হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিটি একুশেতে দেশবাসী ভাষা শহীদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে এবং সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার নির্যাতন, নিপীড়ন ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আপোষহীন প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভাষা শহীদদের প্রতি বছর আমরা একুশে ফেব্রুয়ারীতে স্মরণ করি তাদের আত্মত্যাগের জন্য। 

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ব্যাখ্যা: আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুন্দর অবয়ব দিয়ে এবং মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য তাকে দান করেছেন কথা বলার শক্তি। কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে -' খালাকাল ইনসানা আল্লামাহুল বায়ান ' তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। মানুষের ভাব তিনি সৃষ্টি করেছেন তার মাতৃভাষায় হচ্ছে সর্বোত্তম ভাষা। যতো সহজে মনের ভাব মাতৃভাষা দ্বার হয়ে ওঠে ততো সহজে অন্য কোন ভাষা দ্বারা সম্ভব হয় না। এমনকি অন্য ভাষা আয়ত্তে আনা অনেক কঠিন। পৃথিবীতে চার সহস্রাধিক ভাষা রয়েছে। যে দেশে জনপদের মানবসন্তান বসবাস করে সেই দেশের সেই জনগণের বাসায় তার নিজের ভাষা। সেটাই তার মাতৃভাষা। আল্লাহ পৃথিবীতে দু'লাখ নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা যে দেশে এসেছেন সেই দেশের বাসাতেই হেদায়েতের বাণী প্রচার করেছেন যাতে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। 

উপসংহার: আমাদের গৌরব আমরা মায়ের জন্য লড়েছি। আমাদের অহংকার আমরা ভাষার জন্য লড়েছি। আমাদের গর্ব কেউ আমাদের মত মাতৃভাষার জন্য লড়ে নি, কেউ আমাদের মত বুকে রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার মর্যাদা কে তুলে ধরেননি, বর্ণমালার অক্ষরগুলোকে আটচল্লিশ-বায়ান্নতে তপ্ত শোণিত-ধারে ভাষার বন্দনা করেনি। তপ্ত শোণিত ধারায় অবগাহন করে আমাদের ভাষা চেতনা সেদিন হয়েছিল শানিত ,ব্যাপ্ত হয়েছিল চরাচরে। রক্ত দিয়ে সেদিন যে সোপান রচনা করেছিলাম তার বিনিময়ে আজ আমরা বিশ্বের দরবারে সম্মানিত। স্বীকৃতি পেলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার।

আরো পড়ুন: লাহোর প্রস্তাব কি? লাহোর প্রস্তাব তাৎপর্য বৈশিষ্ট গুরুত্ব সম্পর্কে 

আমাদের কথা, ১৯৫২ সালের ২১ শে মার্চ আন্দোলনে শহীদ হওয়ার মাধ্যমে আমাদের মায়ের ভাষা পেয়েছি। পৃথিবীর কোনো দেশ তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দেননি হয়নি কোনো শহীদ। যা শুদু মাত্র এই বাংলার দামাল ছেলেরাই করেছে। উপরের আলোচনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা যা তারই বহিঃপ্রকাশ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url