তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত দোয়া এবং আমলসমূহ

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত দোয়া এবং আমলসমূহ থেকে শুরু করে তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা,তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ, তাহাজ্জুদ নামাজের পর তাসবিহ এর সবকিছুই বর্ণনা সহকারে এখানে রয়েছে।

তাহাজ্জুদ নামাজ

তাহাজ্জুদ নামাজ হল ধর্মপ্রান মুসলমানদের রাতের গভীর রজনীর পুণ্যময় এবং আল্লাহর কাছ থেকে আশীর্বাদ ও ক্ষমা চাওয়ার একটি বিশেষ নামাজ। কিভাবে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত দোয়া এবং আমলসমূহ কিভাবে আদায় করবেন এখানে এর নিয়ম, নিয়ত, নামাজ ও আমল সম্পর্কে তুলে ধরা হলো :

তাহাজ্জুদ নামাজ প্রকাশ না পড়ে নির্জনে আদায় করলে অধিক সওয়াব হয়। রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নামাজকে ফরজ নামাজের মত মধ্য গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। কোনদিন তরফ করেনি ওজর বশত: কোনদিন পড়া না হলে ফরজ নামাজের মত তিনি তার কাজ আদায় করতেন। ওলামায়ে কেরামের মতে, তাহাজ্জুদ নামাজ রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপর একটি ব্যক্তিগত খাস ফরজ ছিল। কাজেই তিনি এ নামাযের প্রতি এ রকম গুরুত্ব দিতেন। অবশ্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতগণের প্রতি তার ফরজ ওয়াজিব নয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত 

তাহাজ্জুদ নামাজকে সিরাজুল কুবুর নামেও আখ্যায়িত করা হয়। সিরাজুল কুবুর অর্থ কবরের বাতি। এই নামকরণের কারণ, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কারীদের কবর ৭০ গজ প্রশস্ত এবং সর্বদা আলোকিত থাকে। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন তোমরা রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কর কেননা ইহা নেককার বান্দার তরীকা। রাসূলের করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ফরজ নামাজের পর রাতের মধ্যভাগে তাহাজ্জুদ নামাজযই হল ফজিলতের নামাজ। অর্থাৎ, রাতে ফরজ নামাজের পরে অন্যান্য যাবতীয় নামাজের মধ্য থেকে ফজিলতের দিক থেকে তাহাজ্জুদ নামাজযই শ্রেষ্ঠ।

আরও পড়ুন: মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। 

তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত বা তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত রাত দ্বিপ্রহরের পর হতেই শুরু হয় এবং সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। 

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকআতের সংখ্যা ও তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ?

ওলামায়ে কেরামগণ এ নামাজের রাকাতের ব্যাপারে একমত নন। এর কারণ রেওয়াতের বিভিন্নতা। কোন কোন রেওয়াতে নামাজ চার রাকাত, কোন কোন রেওয়াতে আট রাকাত, আবার কোন কোন রাতে ১২ রাকাত পর্যন্ত দেখা যায়। হাদীস শরীফের মর্মে জানা যায় কখনো কখনো রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নামাজ চার রাকাত কখনো ৮ রাকাত কখনো ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করতেন। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো তাহাজ্জুদ নামাজ দুই দুই রাকআতে নিয়ত করাই উত্তম। সূরা কেরাত পড়া সম্পর্কে কয়েক রকম অভিমত আছে। কোন কোন বুযুর্গ এর প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ১২ বার পরবর্তীতে প্রতি রাকআতে ওই সংখ্যা কমাতে কমাতে একেবারে শেষ রাকআতে মাত্র একবার পাঠ করতেন। কারও কারও মতে এ নামাজের প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে তিনবার সূরা ইখলাস পড়ে আলাম নাশ রাহালাকা,  কেউ কেউ আবার একবার করে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে উত্তম মনে করেন। আবার কেউ এ নামাজের প্রতি রাকআতে সুরা ফাতেহার সাথে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত অর্থাৎ আমানার রাসূলু হতে আ'লাল কাওমিল কাফিরিন পর্যন্ত পড়ে থাকেন। 

উপরোক্ত নিয়মসমূহ যেহেতু সাধারণ লোকের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। সুতরাং যে সব সূরা তাদের পক্ষে সহজ তারা সব সূরা দ্বারাই নামাজ আদায় করবেন। যারা  এই নামাজ নিয়মিত আদায় করেন তারা এশার নামাজের সাথে বিতর নামাজ আদায় না করে তাহাজ্জুদ নামাজের পর তা আদায় করে নিবেন। কারণ রাতের যেকোনো নামাজের মধ্যে বিতর সর্বশেষ নামাজ। এরপরে আর কোন নামাজ নেই। 

সুতরাং যত ধরনের সুন্নত নফল নামাজ আছে তা বিতর নামাজের পূর্বেই পড়া উত্তম অবশ্য। রমজান মাসে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কারণ তখন তারাবির নামাজের সাথে বিতরের নামাজ ও জামাতের সাথে আদায় করতে হয়। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন না। তারা এশারের সাথে সাথে বিতর আদায় করবেন। কারণ, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আদায় করবে বলে নিদ্রা গেলে হয়তো নিদ্রাভঙ্গ  হলো না তখন তাহাজ্জুদ নামাজ তরক হলেও তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু সে সাথে ভিতর ওয়াজিব তরক হয়ে গেলে ভয়ানক গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন: ৫০০+ সেরা সৌদি মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামুখী হইয়া দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের সুন্নত নামাজ আদায়ের নিয়ত করিলাম আল্লাহু আকবার। 

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

তাহাজ্জুদের নামাজ হলো সুন্নত। 

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া

রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত নিয়মে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। রাতে জাগ্রত হয়ে অজু করত প্রথমে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করতেন নিচে দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলো-

আল্লাহুম্মা রাব্বা জিব্রাঈলা ওয়া মীকাঈলা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি আনতা তাহকুমু বাইনা ইবাদিকা ফীমা কানু ফীহি ইয়াখতালিফূন  ইনদিনী বীমা ইখতালাফতু  হাককি  বিইযযিকা ইন্নাকা তাহদী মান তাশাউ  ইলা সিরাতিম মুসতাকীম। 

উল্লেখিত দোয়া পাঠ করে নিম্নোক্ত কালিমা সমূহ প্রত্যেকটি ১০ বার করে পড়তেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের পর আমল

  • আল্লাহু আকবার-১০ বার
  • আলহামদুলিল্লাহ-১০ বার
  • সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি-১০ বার
  • আসতাগফিরুল্লাহ -১০ বার
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-১০ বার
আরও পড়ুন: শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায়। 

আমাদের কথা, প্রিয় পাঠক তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত দোয়া এবং আমলসমূহ থেকে শুরু করে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের সময়,তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা, তাহাজ্জুদ নামাজের পর তাসবিহ সহ এবং বিভিন্ন উত্তর এর সাহায্য এই পোস্ট টি তৈরি করা হয়েছে। আশাকরি আপনারা উল্লেখিত পোস্ট টি পড়ে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে এবং কিভাবে পড়বেন সঠিক একটি ধারণা পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: ১০০০+ ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url