আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ। দি ডেইলি লার্ন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে রচিত ভাষণ অথবা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির একটি ভাষণ। অথবা, জাতীয় জীবনে একুশে গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষণ

শ্রদ্ধেয় সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি ও উপস্থিত সুধীমণ্ডলী— 

আসালামু আলাইকুম।

'মধুমতি যুব সাহিত্য সংঘ' আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালন উপলক্ষে দুকথা বলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে আমি ধন্য মনে করছি। প্রথমেই আমি বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, সমবেদনা জ্ঞাপন করছি শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি। সে সাথে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি অগণিত ভাষা সৈনিকদের প্রতি যাদের মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধের কারণে দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। যেসব নিবেদিতপ্রাণ ভাষাপ্রেমিক দলের সাফল্যে বিশ্বের বুকে সংযোজিত হয়েছে ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়, তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পাকিস্তানি শাসকদের বাংলা ভাষার প্রতি অশ্রদ্ধা এবং একে গলা টিপে হত্যা করার হীন ষড়যন্ত্রের পথ ধরে এসেছিল আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলন এবং তার পরিণতিতে একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মদানের পালা—ইতিহাসের সে বর্বরতম অধ্যায় আমি আর পুনরালোচনা করতে চাই না। কারণ সে ইতিহাস আপনাদের সবারই জানা। আমি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।

আরও পড়ুন: শিষ্টাচার রচনা

জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্বের জাতিসমূহের স্ব স্ব মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার উন্নতি বিধানকল্পে একটি বিশেষ দিন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্বের ১৯১টি দেশের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। সেদিন জাতিসংঘ বছরের যে কোনো একটি দিনকেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বেছে নিতে পারতো কিন্তু তারা আমাদের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসটিকেই মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছে। এর পেছনে ছোট্ট একটি ইতিহাস আলোচনা না করলেই নয়। প্রথমে কানাডীয় প্রবাসী বাংলাদেশি দশজনের একটি মাতৃভাষা প্রেমিকদল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম ব্যক্তিগতভাবে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনানের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেন এবং ইউনেস্কোয় আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সেই থেকে অন্যান্য আন্তর্জাতিক দিবসের মতো এ দিবসটিও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন: সত্যবাদিতা রচনা

একুশে ফেব্রুয়ারি এতোদিন বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে একটি শোকাবহ ঘটনা হিসেবেই পালিত হতে৷—এর মূলা ও তাৎপর্যও সীমাবদ্ধ ছিল একটি ভাষার মধ্যেই। কিন্তু আজ এর ব্যাপকতা যেমন বিশাল—গুরুত্বও তেমনি অসাধারণ। বিশ্বের প্রতিটি জাতির যেমন স্বাধীনতা লাভের ধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার অধিকার কোনে জাতির ভাষার প্রতি আমরা ঘৃণাপোষণ করব না, কোনো ভাষাকে নির্মূল বা উচ্ছেদের হীন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবো না, বিশ্বের সকল ভাষার প্রতিই থাকবে আমাদের প্রগাঢ় প্রীতি ও শ্রদ্ধা— এটাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য।

সর্বশেষে যাদের মহান আত্মত্যাগ ও প্রচেষ্টার বদৌলতে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানের উচ্চতম আসনে উন্নীত করতে পেরেছি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং ঋণভার স্বীকার করে আমি আমার সংক্ষিপ্ত

বক্তব্য শেষ করছি।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

খোদা হাফেজ।

আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url