সত্যবাদিতা রচনা | (২০ পয়েন্ট) অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসি।
সত্যবাদিতা রচনা সংকেত : ভূমিকা – সততার বৈশিষ্ট্য — দৈনন্দিন জীবনে সততা – সততাহীনতার পরিণাম প্রস্তাব —সততার দৃষ্টান্ত — সততার উপায় – উপসংহার।
- সততার মূল্য ও প্রয়োজনীয়তা
- সততা
- সততা এবং আদর্শ
- আদর্শবাদ
সত্যবাদিতা রচনা (২০ পয়েন্ট) অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসি।। দি ডেইলি লার্ন
ভূমিকা : মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকাররূপে নিজেকে মর্যাদার আসনে আসীন করতে হলে সারাজীবন বিশেষ নিষ্ঠার সাথে মানুষকেও নানা গুণের নিরলস চর্চা করতে হয়। যেসব গুণে সমৃদ্ধ হয়ে একজন মানুষ সমাজে পূর্ণবান ও আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় তাদের মধ্যে সততার গুরুত্ব সর্বাধিক। সততা মানুষকে নিয়ে যায় মর্যাদার গৌরবময় স্থানে। তাকে সকল মানুষের কাছে আদর্শের প্রতীকরূপে মূর্ত করে তোলে। সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা, আর সত্যের আলোয় আলোকিত মানবীয় গুণের নামই সত্যবাদিতা। মানব চরিত্রের অলঙ্কার ও মানুষের আদর্শের বৈজয়ন্তী হলো 'সততা'। চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে জীবনের সব ব্যাপারে সত্যের মর্যাদা রক্ষা করে চললে শাশ্বত কল্যাণ লাভ করা যায়। আমাদের জীবনে সততা একটি আবশ্যকীয় এবং অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়।
সততার বৈশিষ্ট্য : আক্ষরিক অর্থে 'সততা' শব্দটির অর্থ যদিও সাধুতা বা অকপটে সতা বলা তথাপি যাবতীয় সদগুণই এর অন্তর্গত। সৎ থাকার গুণকে সততা বলে অভিহিত করা হয়। কোনো প্রকার পাপের কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলে তাতে সততার যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে এ গুণটির মর্যাদা মানব হৃদয়ে অটুট রাখার মাধ্যমে এর প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরা যায়। সত্যকে অবলম্বন করে যে বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয় তার নাম সততা। সত্যকে নানাভাবে ধরে যে মানব, যে সমাজ, যে জাতি নিজেদের সংগ্রাম সাধনাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে, সে নিতাকে লাভ করেছে। যুগ-যুগান্তরের অসত্যের প্রায়্যকার ভেদ করে, সত্যের আলোক সারাবিশ্বের চতুর্দিকে বিচ্ছুরিত হয়। সে আলো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার।
দৈনন্দিন জীবনে সততা : সংসার জীবনে মানুষ নিরন্তর সংগ্রামে রত। নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করে মানুষকে চলে যেতে হয় পরলোকে। কিন্তু তার আগে অনেক বাধা-বিঘ্ন জটিলতার আবর্ত থেকে নিজেকে মুক্ত করে জীবনসংগ্রামে মানুষকে অবতীর্ণ হতে হয়। জীবনের যে পথে নানা প্রলোভন, লোভ-লালসার অসংখ্য ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যে মহামন্ত্র বনে ইন্দ্রজালের কুহক ভেঙে সত্যপথের অনুগামী হবেন তিনিই সং। আবার অনেকে এই ইন্দ্রজালের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়াকেই গৌরবের মনে করে। তারা সততা নামক আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে অসত্য ও অন্যায়ের পথে পরিচালিত হয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের সংজ্ঞাহীনতার প্রচুর পরিচয় প্রত্যক্ষ করা যায়। মানুষের অসৎ হওয়ার পেছনে সমাজ ব্যবস্থাই অনেকাংশে দায়ী। যে সমাজে সহজেই সততার অভাব ঘটে সে সমাজে সততার কোনো মূল্যায়ন নেই—অন্যায়ের প্রতিকার নেই। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার ইত্যাদি সততাহীনতার ক্ষেত্র প্রসারিত করে। অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে, অন্যায়ের প্রতিবিধানের ব্যবস্থা না থাকলে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে, নীতি-আদর্শ সমুন্নত না থাকলে সেখানে সততার বৈশিষ্ট্য থেকে মানুষ সহজেই বিচ্যুত হয়। তার চরিত্রে তখন দেখা দেয় কেবল কলুষতা আর কলুষতা।
সংজ্ঞাহীনতার পরিণাম : সততাহীনতার কারণেই জাতীয় জীবনে নৈতিক অধঃপতনের সূচনা হয়ে থাকে। নৈতিক অবক্ষয় ঘটলে সততার অবসান ঘটে। সেখানে নানা অনাচার, অবৈধ কার্যকলাপ, পাপাচারের পঙ্কিলতা ইত্যাদি প্রাধান্য পায়। মানবতার অবমূল্যায়ন, বিশৃঙ্খলতায় সমাজ এসে দাঁড়ায় ধ্বংসের মুখোমুখি। এভাবে সততার অভাবে সমাজে ব্যাপক আকারে অন্যায়-অনাচার প্রবেশ করে জাতিকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়। সততার অভাববোধ থেকেই সকল পাপাচার মাথা তুলে এবং মানুষ আদিম যুগের অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলে। মিথ্যাচারের অন্ধকারে তলিয়ে যায় পুণ্যবান জীবন। মিথ্যার অন্ধকারের পর্দা ছিঁড়ে ভোরের আলোয় আলোকিত জীবন গড়ার আশ্বাস আমরা পেতে পারি সততার মধ্যে। তাই সততাই যথার্থ কল্যাণের পথ। জগতের মহাপুরুষগণ সততার দ্বারা অমরত্ব লাভ করেছেন।
আরও পড়ুন : শ্রমের মর্যাদা রচনা।
সততার সাধনা : মিথ্যার মনোহর মূর্তি আমাদের চারিদিকে অসংখ্য ইন্দ্রজাল বিস্তার করে আছে। এই ইন্দ্রজালের কুহক ভেঙে সত্যের পথ অনুসন্ধান করতে গেলে কঠোর সাধনা প্রয়োজন। পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধি ও লাভ-ক্ষতির বহু ঊর্ধ্বে তুলে ধরে যে ব্যক্তি সংখ্যার ক্ষেত্রে সদর্পে বিচরণ করতে পারেন, তিনিই সত্যকে লাভ করতে পারেন। সত্যের যে পথ, সে পথ বন্ধুর, অতি কণ্টকময়। এ দুর্গম পথে যে নির্ভয়ে অগ্রসর হতে পেরেছে সেই সত্যকে জয় করতে পেরেছে। কঠোর সাধনা ছাড়া সততার পথ জয় করা সম্ভব নয়। সত্যের অন্তহীন সাধনার পথেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা, জীবনের পূর্ণতা জীবনের সফলতা।
সততার প্রভাব : জীবনকে সৌন্দর্য আর সুষমায় সমৃদ্ধ করতে সততার কোনো বিকল্প নেই। যুগে যুগে মহাপুরের অনুসরণে তাদের জীবনের মহান সাধনাকে সফল করেছেন। সত্যের বলে বলীয়ান হয়ে অসত্যের বিরুদ্ধে কর তাঁরা যেমন নিজের অস্তিত্ব তেমনি তাদের লক্ষ্য অর্জনেও সফলতা লাভ করেছেন। সততা চরিত্রের স্বার্থাস্থ মানুষ অনেক সময় নিজের স্বার্থকে চরিতার্থ করতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নিজের লোভ-লালসার জন্য অপরের ক্ষতি সাধন করতে তৎপর হলে তখন সত্যের অমর্যাদা করা হয়ে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে মিথ্যার জয় প্র হলেও এক সময় সত্যের প্রকাশ অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং এ সত্যের বিজয় ঘোষিত হয়। পৃথিবীতে এমন কোনো নজির পাওয়া যাবে না যা মিথ্যা দ্বারা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বরং সততাকে আঁকড়ে ধরেই জীবনের সাফল্য আসে। সত্য বিশ্বাসীরা পরম ধৈর্যর সাথে সত্যের অনুসরণ করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলকাম হয়।
সততার দৃষ্টান্ত : মহাপুরুষগণ সত্যের সাধনায় জীবনকে যেভাবে গৌরবান্বিত করে গেছেন তা মানুষের কাছে মহান হিসেবে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দেয়। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা) সারা জীবন সত্যের সাধনা করে গেছেন। তিনি সত্যবানী হিসেবে আল-আমিন উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি সমাজ জীবনে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যাচারিত হয়েও সত্যের কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হননি। বরং বিপন্ন মানবতাকে দেখিয়েছেন সত্য ও সুন্দরের পদ প্রবর্তক ছাড়াও যুগে যুগে যেসব মহামানব অমর হয়ে আছেন, তারা সকলেই সত্যবাদী ছিলেন। সত্যতা, সত্যবাদিতা এবং ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে তারা মানুষের জীবনকে ধন্য করেছেন, নিজেরা ধন্য হয়েছেন।
সততার শত্রু : সততার শত্রু সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, পরিণামহীন ভোগ-লালসা, বিবেচনাহীন জৈবিক কামনা। এসব তাড়না মানুষকে স্বার্থপর, পোতী ও বিবেকহীন করে তোলে। মানুষ হয়ে পড়ে অসং। তার চরিত্র হয়ে পড়ে কলুষপূর্ণ।
আরও পড়ুন : আমাদের গ্রাম রচনা।
সততার উপায় : সুন্দর ও পুণ্যবান জীবনের জন্য সততার অনুশীলন অত্যাবশ্যক। জীবনের সবক্ষেত্রে সততাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। সারা জীবন এই সততাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে। সততার সাথে মানবজীবনকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য সততা শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিশুকাল সত্যবাদিতা শিক্ষার প্রকৃষ্ট সময়। চরিত্রের অন্যান্য গুণের মতোই এ মহৎ গুণটিও অর্জনসাপেক্ষ। পারিবারিক পরিবেশে পিতামাতার কাছ থেকে শিশুরা সততার ধারণা মাত করবে এবং জীবনের আদর্শ হিসেবে সততাকেই বেছে নেবে। এ ব্যাপারে পিতামাতার রয়েছে অনেক দায়িত্ব। একজন শিক্ষার্থীর চিত্তে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব সর্বাধিক। প্রকৃত সুশিক্ষা শিক্ষার্থীকে চরিত্রবান, নিৰ্দোত ও অস্পর্শবান হিসেবে গড়ে তুলবে। কর্মক্ষেত্রে সততার প্রয়োগ দেখাতে হবে। দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, পরার্থে নিজের আত্মসুখ বিসর্জন দেয়ার মানসিকতা মিলতে হবে। দেশপ্লেন, সত্যবাদিতা, পরোপকার প্রভৃতি সদগুণগুলোর অনুশীলনেই একজন ব্যক্তির চিত্তে নৈতিক মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়। সততা মানুষের নৈতিক আদর্শের প্রথম সোপান যার সহায়তার জীবনের মহৎ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।
উপসংহার : জীবনকে সৌন্দর্য-সুষমায় সমৃদ্ধ করতে সততার কোনো বিকল্প নেই। সত্যের মধ্যে প্রকৃত অবস্থা ব্যক্ত হয় বলে তাতে স্বরূপ চেনা যায় এবং সত্যের মাধ্যমেই জীবনের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। সততার পথে থাকে জীবনের সাফল্য অনিবার্য। জীবনের ইন্দ্রিয়কে জয় করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন সামগ্রিক সততার অনুশীলন। সত যথার্থ কল্যাণের পথ। তাই কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় এ চরম সত্যটি তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সুন্দর এবং সত্য কথায়
“ভুল যাহা ছিল ভেঙ্গে গেলো মহামূল্যে মিলালো ফাঁকা সৃজন দিনের সত্য যে, সে-ই রয়ে গেলো চির আঁকা।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url