দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা। Class: 8, 9, 10, 11, 12। মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট। doinondin jibone biggan
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
- মানবকল্যাণে বিজ্ঞান
- দৈনন্দিন/ব্যবহারিক জীবনে বিজ্ঞান
- বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা/জয়যাত্রা যে,
- আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব
- বিজ্ঞানই আধুনিকতার সোপান
- আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি
- বিজ্ঞান ও বর্তমান প্রযুক্তি
- doinondin jibone biggan
ভূমিকা : আজ আমরা কেবল ভাবছি আর ভাবছি, চিন্তার সাগরে ডুবে গেছি। পরীক্ষায় 'সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের অবদান' বা মানবকল্যাণে বিজ্ঞান', বা 'বিজ্ঞানের জয়যাত্রা'-এর উপর একটা প্রবন্ধ লিখতে হবে। কী ব্যাপার? বলুন তো? কেমন করে লিখি? তা তো হলো খাতা খুললাম, আনলাম, কলম ধরলাম, মনের চিন্তার দরোজা খুললাম। হ্যাঁ পেয়েছি, যে কাগজ ও কলম দিয়ে লিখব তা কোথাকার ? আবার খাওয়ার টেবিলে খাদ্য, মাথার উপর ঘুরছে ফ্যান এ তো খেয়ালই করি নি, রান্নাঘরের মাঝে ফ্রিজ, বেজে উঠেছে মোবাইলটা, ছেলেটা রেডিওটা ভাঙছে, টিভিতে চলছে ধুমধাম দৃষ্টিনন্দন অনুষ্ঠান— এগুলো তো বিজ্ঞানেরই। ছোট বোন জ্বর দেখে থার্মোমিটারে, আব্বার হার্টের ওষুধ, মাঝখানে ডালাভরা খবরের কাগজ, পাশেই খটাখট অর্থাৎ সেলাই মেশিন এসব মানুষের জন্যই বিজ্ঞান জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টির ঊষালগ্ন দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, স্বপ্ন ও কল্পনার পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন সাধনার ফসল দিয়ে গড়ে তুলেছে এই সভ্যতার বিশাল ইমারত। নিজের প্রাণশক্তি তিল তিল করে অফুরন্ত চেষ্টা, মন ও মননের সুকুমারবৃত্তির বাস্তবায়নই আজকের সভ্যতা। তার পেছনে রয়েছে শক্তি, বুদ্ধি এবং ভালোবাসা, তাই বিজ্ঞানের বদৌলতে সভ্যতার উন্নতির বিস্ময়কর। এই বিস্ময়কর অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানের নিরলস জয়যাত্রা ও অকৃপণ উপহার। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে— সব জায়গায় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, বিজ্ঞানের আলো, বিজ্ঞানই জীবন। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে দিয়েছে গতি। কর্মকে করেছে আধুনিক আর চিন্তাকে করেছে বিজ্ঞানমনস্ক।
বিজ্ঞান কী : বিজ্ঞানী ভ্যালেরির মতে, “বিজ্ঞান হলো কতগুলো সাফল্যমণ্ডিত ব্যবস্থা ও ধ্যান-ধারণার সংগ্রহ।” প্রমথ চৌধুরীর মতে, “বিজ্ঞান কেবল একটি বিশেষ জ্ঞানের নাম নয়, একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে যে জ্ঞান লাভ করা যায় আসলে তারই নাম হচ্ছে বিজ্ঞান। হারবার্ট স্পেন্সারের মতে, “বিজ্ঞান হলো সংঘবদ্ধ জ্ঞানের সমষ্টি।” বিজ্ঞানী মাদাম কুরি বলেন, “আমার চোখে বিজ্ঞান হলো অনিন্দ্য সুন্দর।
আরও পড়ুন : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস রচনা।
বিজ্ঞানের অতীত ও বর্তমান : জীবন যেদিন পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে, সেদিন থেকেই সংগ্রামের শুরু হয়েছে। গুহার বর্বর জীবনকে পেছনে ঠেলে দিয়ে মানুষ বিজ্ঞানের আলোকে জীবনকে সহজ, সুন্দর করেছে। যুগ-যুগান্তরের অনবদ্য সাধনা দিয়ে বর্তমান শতাব্দীর সভ্যতা সৃষ্টি করেছে। সভ্যতার এই রাজপ্রাসাদ গড়ে উঠেছে বহু গবেষকের ত্যাগ-তিতিক্ষা, চিন্তা, চেতনার হা-হুতাশ ভেদ করে, পৃথিবীর সভ্যতার শৈশবের জড়তা কাটিয়ে; বর্তমানে যৌবনের দুর্জয় কর্মশক্তিকে দিয়েই সে খনির অন্যকারে আলো জ্বেলেছে, ঘুম ভাঙিয়েছে পাতালপুরীর রাজকন্যার; উদ্ভাবন করেছে আকাশে ওড়ার যন্ত্র। আবিষ্কার করেছে দুর্বার বিদ্যুৎ। বিজ্ঞানের অবদানে মানুষ গ্রহ থেকে গ্রহে ছুটে যাচ্ছে। চিকিৎসা মানুষের করতলগত | মানুষ বিজ্ঞানের বদৌলতে বশীভূত করেছে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খল নদীস্রোত, উর্বর করেছে উষর মরুভূমিকে। শস্য শ্যামল এ ধরণীকে করেছে প্রাণের স্পন্দন। পদার্থবিদ নর্মান ক্যাম্পবেলের ভাষায়— 'Science has offered peace and happiness for mankind. It added innumarable elements for comfortable life for people of modern age.' তাই বলা যায়, বিজ্ঞানের জন্যই এই পৃথিবী ছন্দময়, হাস্যময়ী, লাস্যময়ী।
বিজ্ঞান ও মানুষের নির্ভরশীলতার ধারাবাহিকতা : একদিন গুহামানব কেবল আগুনের আবিষ্কারেই বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে গিয়েছিল। পাথুরে অস্ত্রে কী অসাধারণ সমৃদ্ধ ভেবেছে সে নিজেকে। সেই গুহমানবই কালক্রমে এখন যন্ত্রসভ্যতার প্রণয়ন আলোয় আলোকিত। সুইচ টেপামাত্র মাথার ওপর ঘূর্ণায়মান পাখা কিংবা এসির শীতল বাতাস, দামি গাড়ির স্বাচ্ছন্দ্য অথবা ফ্রিজ, টিভি, ভিসিপি, ভিসিডি অত্যাধুনিক ক্যামেরাসহ নানা রকম গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীতে মানুষ বিস্মিত নয়। মোবাইলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও মানুষের কাছে এখন মামুলি ব্যাপার। ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’–এই স্লোগান রচনা করেছিল বাংলাদেশ বিমান বহুদিন আগে। যোগাযোগের বিস্ময়কর সাফল্যে এখন সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞান পৃথিবীকে কেবল ছোট করেই দেয়নি, একটি বৃহত্তর ‘গ্লোবাল ভিলেজেও পরিণত করেছে! চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞান জীবনকে দিয়েছে প্রচণ্ড খ্যাতি। সময়কে করেছে জয়। সুতরাং আধুনিক জীবন মানেই বিজ্ঞান। সভ্যতার অগ্রগতি মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা।
আরও পড়ুন : মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা।
বর্তমান জীবনে বিজ্ঞানের দান/প্রভাব/বিজ্ঞানের বহুমুখী আবিষ্কার : আদিম যুগ থেকে সভ্যতার ক্রমবিকাশের যে ইতিহাস তা বিজ্ঞানের বিকাশেরই ইতিহাস। তবে তা শুরু হয়েছিল অত্যন্ত দীনহীনভাবে। কাল-কালান্তরের সফল ত্যাগী, জ্ঞান তপস্বী সাধকেরাই উদ্ধার করে এনেছেন আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ। যার জন্য আজ মানুষ এত ক্ষমতাবান ব্রত শক্তিধর। যেমন :
ক. খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান : বিজ্ঞান কৃষি উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দিয়েছে। যার কারণে ১১৭৬ বঙ্গাব্দে তিন কোটি লোকের মধ্যে অনাহারে মারা গিয়েছিল এক কোটি লোক। অথচ বর্তমানে ২০ (বিশ) কোটি লোকের খাদ্যের অভাব নেই। খাদ্য সংরক্ষণে কোল্ডস্টোরেজ, ফ্রিজ ইত্যাদি বিজ্ঞানই দিয়েছে। বস্ত্র চাহিদা মেটানোর পেছনে এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা বর্তমানে বিজ্ঞানের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
খ. চিকিৎসা বিজ্ঞান : চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এক যুগান্তকারী সাফল্য এনেছে। বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণ জানা হয়ে গেছে। তাই উদ্ভাবন করেছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। মৃত্যুকে রোধ করতে পারে নি কিন্তু বিজ্ঞান আয়ু বাড়াতে পেরেছে। বিজ্ঞান আশ্বাস দিয়েছে নিরাপদ জীবনের। আর এর পিছনে বিদ্যুতের অবদান অপরিসীম।
গ. খবরের কাগজ, মুদ্রণযন্ত্র : বিজ্ঞান খবরের কাগজ ও ছাপাখানা আবিষ্কার করেছে। এ দুটোর গুরুত্ব জীবনে অপরিসীম। বর্তমানে কম্পিউটারাইজড মুদ্রণ যন্ত্র বেরিয়েছে।
ঘ. টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স : টেলিফোন যা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মুহূর্তের মধ্যে খবর পৌঁছে দেয়া যায়। যা আবিষ্কার করেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। সোর্স আবিষ্কার করেন টেলিগ্রাফ। ফ্যাক্স লিখিত বার্তা প্রেরণ যন্ত্র। এ সবই বিজ্ঞানের অবদান।
ঙ. রেডিও সিনেমা, ভিসিডি, টেলিভিশন : রেডিও এবং টেলিভিশন, সিডি বর্তমানে চিত্ত-বিনোদনের মাধ্যম। রেডিওতে খবর শোনা যায়। সিনেমা দর্শন ও শ্রবণ করার মাধ্যম, তা ছাড়া বিদ্যুতের সাহায্যে ভিসিডি চলছে। এ কারণে আমরা বর্তমানে বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞানের কারণেই অবসর বিনোদনের আজ ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ঘুচে গেছে। বহু দুর্গম ও দূরের ছবি আমরা দেখতে পারি টেলিভিশনের মাধ্যমে। এর পেছনে কাজ করে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া এর কোনো একটি সেকেন্ডও চলে না।
চ. শিক্ষাক্ষেত্রে : বিজ্ঞানের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় কল্যাণ সাধিত হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক সহজলভ্য হয়েছে। লেখনী, পাঠ্যপুস্তক, কাগজ, মুদ্রণ যন্ত্র দিয়েছে বিজ্ঞান। বিদ্যুৎ শক্তি এগুলো চালিয়ে নিচ্ছে।
ছ. যোগাযোগের ক্ষেত্রে : যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাস, ট্রাক, রেল, ষ্টিমার এবং বিমান দূরকে করছে নিকট। এমনকি বিজ্ঞান অন্য গ্রহে বসতি স্থাপন করার সাহস দিয়েছে।
জ. ইঞ্জিনিয়ারিং কলা-কৌশল : অতি অল্প খরচে জল বিদ্যুৎ তৈরি, সেচ প্রকল্প, যোগাযোগ ব্যবস্থা, খরস্রোত নদীর উপর সেতু এবং দুর্গম মরু, পাহাড়ি পর্বত পেরিয়ে মানুষ নিজের প্রয়োজনীয় পথ তৈরি করছে। মানুষ অতি অল্প সময়ে গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করছে। আর জলবিদ্যুৎ ছাড়াও ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এগুলো বর্তমান বিজ্ঞানেরই অবদান, যা সভ্যতার অংশ বটে। বিদ্যুৎ দিয়েই কল-কারখানা, লক্ষ লক্ষ ঘরে বাতি জ্বালানো হচ্ছে।
বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান : বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীগণ চন্দ্রালোকের অজ্ঞাত পরিবেশকে জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যে মানুষ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছে। এ ছাড়া মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চলছে। এসব কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে স্পুৎনিক, ভয়েজার, পাথ ফাইন্ডার প্রভৃতি নভোযান।
একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান : বিজ্ঞানের আওতা এ শতাব্দীতে আরো এগিয়ে যাবে—এটাই স্বাভাবিক। কেননা ইতোমধ্যেই মানুষ মানব ক্লোনিং পেয়েছে। আর মানবদেহের ‘জিন্ শিকল’ আবিষ্কার এই শতাব্দীতে বিজ্ঞানের আরো নতুন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমাদের আমাদের যে কোনো কল্পনাকে অদূর ভবিষ্যতের বাস্তবতা বলে মনে করতে পারছি।
আরও পড়ুন রচনা: ইন্টারনেট ও আধুনিক প্রযুক্তি।
উপসংহার : বিজ্ঞানের যুগ বর্তমানের যুগ, খাদ্য, চিকিৎসা, যোগাযোগ, চিত্তবিনোদন, শিক্ষা প্রভৃতি মাধ্যমে উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির শেষ নেই। সে উন্নতির অস্তিত্ব নির্ভর করে মানুষের উপর। মানুষ যদি কল্যাণ চাই তবে বিজ্ঞানের মতো বন্ধু আর কেউ নেই আর অকল্যাণ চাইলে বিজ্ঞানের মতো শত্রু আর কেউ হতে পারে না। এহেন অবাঞ্ছিত অবস্থার হাত থেকে মুক্তির উপায় কী? উপায় হলো বিজ্ঞান অনুশীলনের সাথে সাথে মানবিকী বিদ্যা (Humanities) বিষয়ে অধিকতর মনোযোগী হওয়া। উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য ঘটানো গেলে আমাদের মনের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে, যন্ত্রের দাসত্ব আমরা কখনো করব না। অন্যদিকে বিজ্ঞান বুদ্ধি যদি মানবসভ্যতাবিরোধী হয়ে ওঠে, আত্মিক মৃত্যু অনিবার্য—যা আমাদের ঈপ্সিত নয় আদৌ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url