যুবসমাজের মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা সংকেত: ভূমিকা – মাদকদ্রব্য – বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের আবির্ভাব – মাদকদ্রব্যের প্রকারভেদ । মাদকদ্রব্যের শ্রেণিবিন্যাস বা প্রকৃতি— মাদকের উৎস – পৃথিবীর মাদকাসক্তির সংখ্যা – বাংলাদেশের নেশাগ্রস্ত লোকের সংখ্যা –– মাদকাসব্বির কুফল/ক্ষতিকর প্রভাব— মাদকাসক্তির কারণ – মাদকাসক্তির প্রতিকার/প্রতিরোধ চিন্তা — বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী আন্দোলন—উপসংহার।
- যুবসমাজের মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা
- সমস্যা ও প্রতিকারবিষয়ক প্রবন্ধ
- যুবসমাজের মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
- মাদকাসরি কারণ ও তার প্রতিকার
- মাদকাসণি সমাজ
- মাদকাসরি কুফল ও তার প্রতিকা
- মাদকদ্রব্য ও আমাদের যুবসমাজ।
যুবসমাজের মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা : মাদকাসক্তি আমাদের দেশে বর্তমানে এক ভয়ানক সমস্যা ও ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকদ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়াকে 'মাদকাসক্তি' বলা হয়। বাংলার শিরা-উপশিরায় গ্রামে-গঞ্জের, নগরে-বন্দরের খুব আজ যে ভয়াল নেশার কবলে আচ্ছন্ন তা এক বাক্যে সবাই স্বীকার করে নেবেন। বাংলার প্রতি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে মাদকাসক্তির মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে কালনাগিনীর বিষ। যে কোনো সমস্যাকে আলোচনার মাধ্যমে সমবেত শুভ প্রয়াস, রাজনৈতিক সদিচ্ছায় সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু এই মাদকাসক্তির স্রোতধারা যুবসমাজের যে অবগাহন কি কেউ বন্ধ করবে? পারবে কি এই ভয়ঙ্কর কালনাগিনীর বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করতে? এর উত্তরে যদি আমরা কর্মের দ্বারা মৃত্যু যন্ত্রণার ভয়ানক ছোবল থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে না পায়। তবে অচিরেই এই জাতি হতভাগ্য পঙ্গু জাতিতে পরিণত হবে। কোনোদিন আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না।
আরও পড়ুন: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা।
মাদকদ্রব্য : যেসব দ্রব্য সেবন করার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো উপায়ে শরীরে প্রবেশ করার মাধ্যমে মানুষ নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে। তাকে মাদকদ্রব্য বলে। অর্থাৎ যেসব দ্রব্য পান, সেবন বা ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি হয় এককথায় সেগুলোকেই মাদকদ্রব্য বলে। অথবা নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের ফলে সাধারণ চিন্তা চেতনা লোপ পায় তা গ্রহণ করাকে মাদকাসক্তি বলে। যেমন : গাঁজা, আফিম, ভাং, পপি, কোকেন, চরশ, হাসিশ, মারিজুয়ানা ইত্যাদি প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য এবং পরীক্ষাগারে তৈরি হেরোইন, মরফিন, প্যাথিড্রিন, কোকেন, সঞ্জীবনী সুরা এ্যালকোহল এগুলোর সবই রাসায়নিক মাদকদ্রব্য।
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের আবির্ভাব : ৭০ দশকের প্রথমদিক থেকেই বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের সাথে পরিচিতি লাভ দেশকে এ দেশে খুব অল্প লোকই মাদক সেবন করতো। কিন্তু 'যুদ্ধ-পরবর্তী আমাদের দেশের দি বিস্তার করে। যা আজ মরণব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রকার WHO এর মতে মাদকদ্রব্যের শ্রেণিবিন্যাস নিচে দেওয়া হলো :
- চেতনানাশক বা বেদনাশক মাদকদ্রব্য : আফিম, মরফিন, হেরোইন, প্যাথিড্রিন এসব সেবন বা গ্রহণ করলে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনা কমে এব কিছু সময়ের জন্যে হলেও অনেক আনন্দ পাওয়া যায়।
- উত্তেজক বা উদ্দীপক মাদকদ্রব্য : সিদ্ধি, কোকেন, ক্যাফাইন প্রভৃতি জনপ্রিয় মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া হালকা পানিও ওষুধ রয়েছে।
- ভ্রম বা মায়া সৃষ্টিকারী : এ. এস. ডি, ম্যাম মাগিব, গাঁজা, হাসিন, মারিজুয়ানা ইত্যাদি।
মাদকের উৎস তিনটি।
- গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল : আফিন থেকে হেরোইন তৈরি হয় এবং আফিম তৈরি হয় পপি থেকে। থাইল্যান্ড, লাওস,পপি উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলের নাম 'গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল'।
- গোল্ডেন রিসেন্ট : পপি উৎপাদনকারী পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক এই এলাকাকে বলা হয় গোল্ডেন
- গোল্ডেন ওয়েজ : গোল্ডেন ট্রায়াল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মধ্য দিয়ে ভারত ও নেপাল সীমান্তে নতুন একটি 'অঞ্চলের আভাস পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলের নামই গোল্ডেন ওয়েজ।
পৃথিবীতে মাদকাসত্ত্বের সংখ্যা : বিশ্বের শতাধিক দেশে এই নেশার মরণ ছোবলে প্রায় ৫০-৬০ কোটি লোক আক্রান্ত। মার ৩৮৪টি দেশে উৎপন্ন হলেও এই নীপ নেশার কবলে মোহগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু বিভীষিকার কূপে শতাধিক দেশ পতিত হয়েছে। নতুন করেও প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশের নেশাগ্রস্ত লোকের সংখ্যা : বেসরকারি জরিপ মতে বাংলাদেশে নেশাগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ১ কোটির উপরে। রাজধানী ঢাকা শহরে পক্ষাধিক নেশাগ্রস্ত লোকের মধ্যে ১৬-৩০ বছরের লোক বেশি। প্যাথিড্রিন আসক্ত মহিলাও রয়েছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেও মাদক সেবনের হার ক্রমশ বাড়ছে।
মাদকাসক্তির কুফল/ক্ষতিকর প্রভাব : মাদকদ্রব্যের কবলে পড়ে দেশ ও জাতি তথা বিশ্বের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আর তা হলো-১, ব্যক্তিগত এবং ২. সামাজিক।
১. ব্যক্তিগত বা আত্মগত : মাদকদ্রব্য পান করলে ধীরে ধীরে তার প্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং মৃত্যু কূপে পতিত
২. সামাজিক : নেশার কবলে পতিত ব্যক্তি নেশার জোগাড় করতে গিয়ে সে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি সামাজিক অনাচারে লিপ্ত হয়। সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
মাদকাসক্তির কারণ : বাংলাদেশে ধীরে ধীরে যে ক্ষতিকর প্রভাব অক্টোপাসের মতো জাপটে সে ধরেছে তার নাম মাদকাসক্তি। মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে, যুবসমাজের এমনকি কিশোররা এ ভয়ানক মরণ পথের যাত্রী। এ - পথের পথিক কেন হয় কী জন্যে হয় তার কারণ সমাজবিজ্ঞানীরা বের করেছেন। এগুলো হলো :
- পারিবারিক কোন্দল, অশান্তি,
- বেকারত্ব ও মাদকাসক্তিতে আসক্ত বন্ধুদের প্ররোচনা;
- প্লেনে ব্যর্থতা,
- মাদক ব্যবসায়ীদের প্ররোচনা।
- শৌখিনতা ও কৌতূহল বশতা,
- পাশ্চাত্য জীবনের অন্ধ অনুকরণ,
- দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এবং
- ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব।
মাদকাসক্তির প্রতিকার/প্রতিরোধ চিন্তা : পাশ্চাত্যে সভ্যতা নামক বিষবৃক্ষের সর্বগ্রাসী নৈতিকতা সর্বগ্রাসী নৈতিকতা। বিবর্জিত সর্বধ্বংসী রূপ সভ্য সমাজকে ভাবিয়ে তুলছে, বিবেকবান মানুষেরা আজ আতঙ্কিত, এই ভেবে যে আগামী ধ্বংস হবে। না-তাদের এ সর্বনাশা মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। তাই গ্রহণ করা হচ্ছে প্রতিরোধের ব্যবস্থা। মাদকাসক্ত দেশ, জাতি তথা আন্তর্জাতিক বিধ্বংসকারী ব্যাধি। এর প্রতিরোধে চাই সম্মিলিত চেষ্টা—তাহলে মুক্তি পাওয়া
সম্ভব। মাদকাসক্তির জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করার দরকার তাহলো :
১. মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবসা এবং ব্যবহার আইন দ্বারা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।
২. প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোরভাবে মাদকাসক্তি নিবারণ করা।
৩. পারিবারিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর, আনন্দময়, প্রীতিময় করার ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৫. বেকারত্বের অভিশাপ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করা।
৬. মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ঘৃণা না করে তাদের স্নেহের দৃষ্টিতে দেখা।
৭. মাদকাসক্তিতে আক্রান্তদের নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
৮. টেলিভিশন-রেডিওতে মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা।
বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী আন্দোলন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৮৭ সালে ২৩টি রাষ্ট্র এতে যোগ দেয়। ১৯৮৫ সালে ৫৬.৩ টন হাসিশ আটক করা হয়। ১৯৮৭ সালে ৩৬০ টন আটক করা হয়। ইরানে এর বিরুদ্ধে ৩১ জনের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের ফাঁক দিয়ে যেন কেউ বেরিয়ে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উপসংহার : মাদকাসক্তির চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো বিষয় নয়। এটা রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাধি। যার থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সামাজিক ও সরকারি ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে দেশের বিবেকবান ও দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমরা মুক্তি পাব এই মরণ ব্যাধি থেকে এবং সুস্থ-সবল কর্মক্ষম মেধাসম্পন্ন জাতি হিসেবে পরিচিতি পাবে। জাতি হিসেবে আমরা আরো উন্নত হবো।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url