স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট ( ক্লাস- 7, 8, 9, 10, 11, 12)
স্বদেশ প্রেম রচনা'র মিল রচনা সমূহের নাম
- দেশপ্রেম রচনা।
- দেশপ্রীতি/দেশের প্রতি ভালোবাসা রচনা।
- প্রিয় এ দেশ আমার রচনা।
- স্বদেশপ্রেম রচনা।
- জন্মভূমি/ আমার প্রিয় জন্মভূমি রচনা।
স্বদেশ প্রেম রচনা
ভূমিকা :
দেশপ্রেমিক কবি বলেছেন,
"স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
কে বলে মানুষ তারে, পশু সেইজন।"
প্রতিটি মানুষের দেশকে ভালোবাসা কর্তব্য। বিশাল ভূখণ্ডের যে স্থানে মানুষ জন্ম নেয়, যে আলো-বাতাস, ধূলি-কণায় তার শ্বাস-প্রশ্বাস, যে দেশের পালা-পার্বণে একাত্ম হয়ে যায় সেই দেশ হলো তার স্বদেশ। আর নিজের দেশকে ভালোবাসার নামই স্বদেশপ্রেম। দেশপ্রেম হলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। স্বদেশের মানুষের প্রতি গভীর মায়া-মমতা, দায়িত্ব পালনই হলো স্বজাতির প্রতি ভালোবাসা। দেশপ্রীতি তাই মানুষের উত্তরাধিকার সূত্রেপ্রাপ্ত। বিজ্ঞজনেরা জননীর মতো স্বদেশকে তুলনা করেছেন। জননী যেমন তার রক্ত, কোষ দিয়ে সন্তানকে পেটে ধারণ করে, তেমনি স্বদেশ তার আলো, বায়ু, পানি, রূপ, রস, গন্ধ দিয়ে সন্তানদের তথা মানুষকে লালনপালন করে। স্বদেশকে যে ভালোবাসে না সে পশুর চেয়ে অধম।
আরো পড়ুন: অনলাইন লুডু গেম খেলে টাকা ইনকাম।
স্বদেশ কী এবং কেন?:
স্বদেশপ্রেম হচ্ছে, নিজের দেশের, নিজ জাতির, নিজ ভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধ এবং আকর্ষণ অনুভব করা। অপরিসীম অনুরাগ, কপটহীন ভালোবাসা এবং শর্তহীন আনুগত্যই হচ্ছে সত্যিকার অর্থে মাতৃভূমির উন্নতির কল্পে নিঃস্বার্থভাবে সর্বস্ব ত্যাগ করা বা দেশপ্রেম। মানুষ যে পরিবেশ, সমাজ, আলো, বায়ু, পানি ইত্যাদির মধ্যে জন্মগ্রহণ করে এবং অন্নে-বস্ত্রে লালিত-পালিত হয় সেই পরিবেশ ও সমাজের প্রতি স্বাভাবিকভাবে আকর্ষণ গড়ে ওঠে। স্বদেশের প্রতি প্রেম মানুষের স্বভাবজাত। যা অন্য দেশে অন্য পরিবেশে পূরণ হয় না। তাই তো কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত বলেছেন,
“কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে? দুগ্ধ-স্রোতরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে।”
—স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা নগর-গ্রাম-গঞ্জে সীমাবদ্ধ থাকে না। সারাদেশকে ঘিরে বিরাজ করে। কেবল মানুষকে নয়, ষদেশের তরুলতা, পশু-পাখি সবকিছুকেই আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। দেশের অভ্যন্তরে যা কিছু আছে সবকিছুকে ভালোবাসতে হবে। সবাইকে আপন মনে করতে হবে।
আরও পড়ুন: ২৬ মার্চ—মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অবস্থান :
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সর্ব দক্ষিণে। এর প্রাকৃতিক সীমারেখা পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ; উত্তরে মেঘালয়, আসাম, পূর্বে মনিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্য; দক্ষিণ পূর্বে মায়ানমার আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণের সাগর আর পূর্বের পাহাড়ি এলাকা দেশটিকে অপরূপ বৈশিষ্ট্যের মণ্ডিত করেছে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভূমি, বনাঞ্চল, অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড় ইত্যাদি। কর্কক্রান্তি রেখা সরাসরি পূর্ব-পশ্চিমে চলে যাওয়ার কারণে এর জলবায়ু ক্রান্তীয় আর্দ্র প্রকৃতির। ফলে এদেশের প্রকৃতিতে বৈচিত্র্যময় এক অনন্য সুষমা মূর্ত হয়ে আছে।
ঋতু বৈচিত্র্য :
বাংলাদেশ বৈচিত্র্যময় ষড়ঋতুর দেশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঋতুতে দেখা যায় সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। প্রথমে রৌদ্রের তপ্ত আভা মাথায় করে গ্রীষ্ম আসে। প্রকৃতি এ সময় রুক্ষভাব ধারণ করে। তবুও তার মধ্যে কি রকম এক ভালো লাগা লুকিয়ে থাকে। মাঠে মাঠে রাখালের গরু চরায়। কাঠ ফাটা রোদ মাথায় করে কৃষাণ-কৃষাণীরা মাঠে কাজ করে। কাজের শেষে একটু ক্লান্তি ঝরাতে তরুছায়ায় গা এলিয়ে দেয়। তারপর দেখতে দেখতে যেন বর্ষা এসে যায়। তৃষার্ত মাটি বৃষ্টির জলে তৃষ্ণা নিবারণ করে। খাল-বিল নদ-নদী ভরে ওঠে। কিশোরের দল কলার ভেলা তৈরি করে আনন্দে ভেসে বেড়ায়। বিলে বিলে শাপলার ফুল মন কেড়ে নেয়। মাঠে মাঠে আউশ ও আমন ধানে বাতাস দোলা দিয়ে যায়। আবহমান বাংলার রূপ সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে রাণীর বেশে শরৎ আসে। শরতের শ্যামল অঙ্গে সৌন্দর্য লুকোচুরি খেলে। শিউলি, বকুলের সুবাস সকারের স্নিগ্ধ বাতাসে জড়িয়ে যায়। নদীর তীরের কাশবনে পাগল হাওয়া ঢেউ উঠায়। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন এক অপার অসীম সুন্দর এই দেশ। এই শোভাকে আড়াল করে পাকা ধানের মৌসুম নিয়ে আসে হেমন্ত। মাঠে মাঠে সরষে ফুলের বাহার চোখে তৃপ্তির ছটা আনে। কৃষকেরা পাকা ধান মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে আসে। কৃষাণীর মুখে চাঁদের হাসি শোভা পায়। চারদিকে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: বাংলা রচনা : একটি শীতের সকাল।
স্বদেশপ্রেমের উৎস :
ব্যক্তিমাত্রই তার স্বদেশের সাথে অচ্ছেদ্য বাধনে বাঁধা। জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ দেশমাতৃকারে ভালোবাসতে শেখে। ষদেশ তার কাছে 'সকল দেশের সেরা'। যে কোনো প্রাপ্তি যে কোনো লোকের কাছের দেশের অবদান মনে করে তাই সে দেশের প্রয়োজনে তার সব কিছু বিলিয়ে দিতে পারে। এমন কি জীবজন্তু কোরবানি দিতে পারে। দুঃখ, নির্যাতন, বিপদে-আপদে, তথা বহিঃশত্রু দ্বারা দেশ যখন পরাধীনতার মালা গলায় পরে, শৃঙ্খলিত দেশ হয়, মানুষ মুক্তি কামনায় অস্থির-উদ্বেল হয়, বিদেশি শাসকের শোষণে অর্থনীতি হয় পর্যুদস্ত, তখনই দেশপ্রেমের পূর্ণ বিকাশ ঘটে। বিকশিত হয় দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্র। নিজের জীবনকে বাজি রেখে তখনই স্বদেশপ্রেমের নিদর্শন হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের শত্রুর উপর। এভাবেই লাখো শহীদের বিনিময়ে আমাদের দেশপ্রেমের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয়তাবোধ হলো স্বদেশপ্রেমের প্রধান উৎস। রক্তে ভেজা এই মাটি তখনই হয়ে ওঠে রাঙা। বীরের রক্তস্রোতে ধুয়ে আমাদের এই রক্তাক্ত পতাকা আজ উড্ডীন। বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম কোনো ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হয় না। দেশের, জাতির স্বার্থে দেশপ্রেমের শক্তিতে মহীয়ান হয়ে পরিচালিত হয়। কখনো কখনো তা জীবনের মমত্ববোধকে ছাড়িয়ে যায়। তাই এই দেশপ্রেমের সর্বগ্রাসী রূপটি দেখতে পেরে এডউইন আরনল্ডের ভাষায় আমরা বলতে পারি, “জীবনকে ভালোবাসি সত্য, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।” অর্থাৎ সবার আগে দেশ। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে হলেও দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের কোনো সংকট দেখা দিলে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের জন্য প্রয়োজনে জীবন বিলিয়ে দিতে হবে।
দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম :
স্বদেশপ্রেম বিশ্ব প্রেমেরই একটি অংশ। স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। স্বদেশপ্রীতির মধ্যে দিয়েই বিশ্বপ্রেমের উন্মেষ ঘটে। স্বদেশপ্রেম সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বাঁধতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবোধ কখনো কখনো বিশ্ব প্রেমকে পদদলিত করে। তাই তো কবিগুরু বলেন,
“ও আমার দেশের মাটি, তোমার প'রে ঠেকাই মাথা,
তোমাতে বিশ্বময়ীর তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।'
দেশজননী, বিশ্বজননী, এক ও অভিন্ন। কারণ, দেশজননীর বক্ষের উপর বিশ্বজননীরও আঁচল পাতা। স্বদেশ বিশ্বের একটি অংশ।
দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত :
প্রকৃত দেশপ্রেমিকেরা কখনোই কোনো কিছুর বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয় না। আত্মসমর্পণ করে জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক রেখা পরিয়ে দেয় না। যেমন মহীশূরের টিপু সুলতান, চাঁদ সুলতানা, তিতুমীর, সূর্যসেন, ভাষা আন্দোলনের সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে লাখ লাখ জনতা '৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের জন্য আমাদের মৃন্ময়ী দেশ চিন্ময়ী হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া শেরে বাংলা, সোহ্রাওয়ার্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু, শহীদ জিয়া প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ দেশপ্রেমের জন্য আজো স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। বিশ্বের দিকে তাকালে দেখি, মহাত্মা গান্ধী, জর্জ ওয়াশিংটন, লেনিন, মাও সে তুং, হো চি মিন, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কামাল আতাতুর্ক, জোসেফ মার্শাল টিটো, চেগুয়াবারা প্রমুখ ব্যক্তি দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই আজ তারা খ্যাতিমান।
আরও পড়ুন: পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা।
স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ :
মহানবী (সা) বলেছেন, “হুব্বুল ওয়াতানে মিনাল ঈমান।” অর্থাৎ 'স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ'। কতো লোক সেই প্রাচীন যুগে ও বর্তমানে প্রাণ উৎসর্গ করছে সুজলা-সুফলা, মলয়জ শীতলা স্বদেশের ভালোবাসার জন্যই। তাই তো বিদেশের মাটিতে বসেই স্বদেশের সুশীতল জীর্ণ কুটিরখানির কথা মনে পড়লে চিত্তের উল্লাস বেড়ে বার। আর তাই কবি বলেছেন—
“কতরূপ স্নেহ করি বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া
স্বদেশের কুকুর ধরিয়া।”
সোপ্রেমিক হওয়ার উপায় :
দেশপ্রেম মানবজীবনের যতোগুলো গুণ আছে তার মধ্যে একটি মহৎ গুণ। দেশপ্রেমের চর্চা এটি ছাত্রজীবন থেকেই শুরু করতে হবে। পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে বাস করে দেশপ্রেমিক হওয়া যায়। নিজ দায়িত্ব পালন করা দেশপ্রেমের পরিচায়ক। জাতির কল্যাণের জন্য আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তা পালন করা, স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করাও দেশপ্রেম। জাতির, দেশের স্বার্থকে সবকিছুর উপরে স্থান দিতে হবে। দেশের অগ্রগতি, উন্নতির জন্য কাজ করা প্রতিটি দেশপ্রেমিকের কাজ। কেবল রাজনীতিবিদরা দেশকে ভালোবাসবে তা নয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার, সৈনিক, মুটে, মজুর, কুলি, শিক্ষক, পেশাজীবী সকলেই যখন দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবে, তখন বাংলা সোনার বাংলা তৈরি হবে। নিজ নিজ কাজ সঠিক উপায়ে করার নামই দেশপ্রেম। আর তখন এ আবার হবে ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা’–এবং ‘সকল দেশের রানী’ হয়ে উঠবে।
উপসংহার :
স্বদেশ মানুষের নিকট এক পরম স্থান। তাই আমাদের সব সময় জন্মভূমি রক্ষা ও উন্নতিকল্পে সোচ্চার থাকতে হবে। আমাদের সব সময় কর্মের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে “I love thee still my country'. ভার্জিল বলেছেন, “সে-ই সবচেয়ে সুখী মানুষ, যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতো ভালোবাসে।” তাই বলা হয়, দেশপ্রেম মানুষের বৃহত্তম গুণ ও ধর্ম বিশ্বাসের অংশ। দেশপ্রেমিক জীবনে জয়ী হয়, তাদের জীবন সার্থক এবং যথার্থ হয়। জগতে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url