২৬ মার্চ—মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা'র মিল রচনা সমূহের নাম

  • ২৬ মার্চ—স্বাধীনতা দিবস
  • মহান ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস রচনা
  • ২৬ মার্চ—স্বাধীনতা সংগ্রাম রচনা
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম রচনা
  • মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা

২৬ মার্চ— মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা

২৬ মার্চ— মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা সংকেত : ভূমিকা— গুরুত্ব— স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস – আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম-বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম—স্বাধীনতা ১৯ দিবস উদ্‌্যাপন–তাৎপর্য--উপসংহার।

shadhinota dibosh rochona

ভূমিকা :

বাঙালির জাতীয় জীবনে বিশেষ কতগুলো গৌরবোজ্জ্বল দিন আছে। স্বাধীনতা দিবস সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। দিনটি জাতীয় জীবনের দৃঢ়তা, ঐক্য, ত্যাগ ও বীরত্বের প্রতীক। বাঙালি জীবনের ইতিহাসে ২৬ মার্চ তথা স্বাধীনতা দিবসটি বহু আকাঙ্ক্ষিত দিবস। এ দিবসটি উৎসব আর আনন্দের। দিবসটির সাথে তিরিশ লাখ শহীদের স্মৃতি বিজড়িত থাকায় দিবসটি আরো তাৎপর্যবহ হয়েছে।

মহান স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব: 

বাঙালি জাতির কাছে ২৬ মার্চ দিবসটি যেমন পবিত্র তেমনি মর্যাদাপূর্ণ। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের মধ্যরাত্রিতে দিয়েছিল সেদিন বিশ্বের দুর্ধর্ষ একদল সেনাবাহিনী। বাঙালিরা বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষা ও সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিল এবং তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সরকার যে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু করেছিল। এ উদ্দেশ্যে নিরীহ বাঙালির ওপর লেলিয়ে এক সময়ে সারাবিশ্বকে চমকে দিয়ে বাঙালিরা সক্ষম হয়েছিল স্বাধীনতার সোনালি সূর্য ছিনিয়ে আনতে। এ কারণেই ২৬ মার্চকে আমাদের স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা দেওয়া হয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের জন্যে একটি মাইলফলক। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যে আমাদের এ প্রচেষ্টা হবে এক অভিনব প্রেরণার উৎস। এক সাগর রক্তের বাধা পেরিয়ে আমরা যে দুর্লভ সূর্যের নাগাল পেয়েছি তা কেবল আনন্দের নয় গর্বেরও। আমরা বীরজাতি হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে মর্যাদা লাভ করেছি। লাভ করেছি সম্প্রীতি, ঐক্য, জাতীয়তার মহার্ঘ সনদ। নানাদিক দিয়ে দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: শ্রমের মর্যাদা রচনা। 

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস :

বাংলাদেশ প্রায় দু বছর বেনিয়া ইংরেজের দাসত্ব করে ১৯৪৭ সালে মুক্ত হলে পাকিস্তানের দুঃশাসনের খপ্পরে গিয়ে পড়ে। ফলে নব্য ঔপনিবেশিক শোষণে পুনরায় শোষিত হতে থাকে। স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণে বাঙালিদের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী এদের দাবিয়ে রাখার জন্যে যতো চেষ্টা করতে থাকে, যতো অত্যাচার করতে থাকে বাঙালিরা ততোই সোচ্চার হতে থাকে। এর ফলস্বরূপ ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং সবশেষে ৭১-এর স্বাধীনতা দিবসটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া বাঙালিদের সাথে বেঈমানি করে। ১৯৬৯-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। পরিবর্তে তৎকালীন পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করে এবং নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করার জন্য সুদক্ষ সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। বাঙালি জোয়ানরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। বাঙালি মিলিটারি, ই.পি.আর. পুলিশ, ছাত্র-জনতা, চাকরিজীবী সবাই জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ধীরে ধীরে এ সংগ্রাম বৃহৎ মুক্তি সংগ্রামে পরিণত হয়। মুক্ত এলাকা ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগরে জাতীয় সরকার গঠিত হয় এবং ক্রমে ক্রমে হানাদারদের কবল থেকে অঞ্চলের পর অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। এদিকে পাকবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে দু'কোটিরও বেশি লোক জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তান অবশেষে ক্ষেপে গিয়ে ডিসেম্বর মাসে ভারত আক্রমণ করে, ফলে পাক-ভারত যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ কারণে ভারত সেনাবাহিনী সর্বাত্মকভাবে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে ভারত সরকার ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি নতুন দেশের স্বীকৃতি দান করে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি ফৌজ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বরে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমরা বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পাই। 

আরও পড়ুন —রচনা: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার। 

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম :

স্বাধীনতা কখনোই সহজলভ্য নয়। কেউ কাউকে স্বাধীনতা দেয় না, তাকে ছিনিয়ে নিতে হয় স্বাধীনতা। আমাদের জন্যও এই স্বাধীনতা অর্জন ছিল অত্যন্ত কঠিন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সাথে সাথে সারা দেশে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম। কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথ তলায় গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার সরকার। প্রধানমন্ত্রি তাজউদ্দিনের নির্দেশে জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর পরিচালনায় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মেজর জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, কে.এম. শফিউল্লাহ, মেজর জলিল, কর্ণেল তাহের, মেজর রফিকুল ইসলাম, কাদের সিদ্দিকী সহ লাখ লাখ বাঙালির দীর্ঘ নয় মাস মুক্তি সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লাখ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এ ঘটনাপঞ্জি অনুসারেই প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম :

ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীর, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার নবাব সিরাজ-উ-দ্দৌলার ইংরেজদের কাছে পরাজয়, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লব, ১৯২৯ সালে সূর্যসেনের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের রোমাঞ্চকর ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা শুরু। অবিভক্ত ভারতবর্ষে স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করেছি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত, তারপর বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করেছি ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতার সূর্য আমরা ছিনিয়ে এনেছি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন :

প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে স্বাধীনতা দিবস আমাদের দুয়ারে এসে উপস্থিত হয়। স্বাধীনাত দিবস আমাদের প্রেরণা দেয় সংগ্রামের এবং কর্তব্যের। এই দিন সরকারি ছুটি পালিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রত্যেক ভবনের শীর্ষে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। এই দিন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ কর্মসূচী, বিভাগীয় শহরের স্টেডিয়ামে শিশু সমাবেশ, সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ, শহীদ মিনারে ও সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য দেওয়া হয়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। তাছাড়া সারা বাংলায় বিজয় মিছিল, বিজয় মেলা, শোভাযাত্রা, খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে এই দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে। কারণ, স্বাধীনতা এক অমূল্য সম্পদ। মীর মোশাররফ হোসেনের ভাষায় বলা যায়, “রাজার অভাব হইলে রাজা পাওয়া যায়, কিন্তু স্বাধীনতা ধনে একবার বঞ্চিত হইলে সহজে সে মহামণির মুখ আর দেখা যায় না। বহু আয়াসেও সে মহামূল্য রত্ন আর হস্তগত হয় না। স্বাধীনতার সূর্য একবার অস্তমিত হইলে তাহার পুনরুদ্ধার হওয়া বড়ই ভাগ্যের কথা।” 

আরও পড়ুন: ভাবসম্প্রসারণ : কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। 

মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য : 

২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এ দিবসটি মহাসমারোহে জাতীয় পর্যায়ে প্রতি বছর উদ্যাপিত হয়। দিবসটিতে আমরা সংগ্রামী জীবনের প্রেরণা পাই। দিবসটির চেতনা আমাদেরকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে। নিজেদের শৌর্য-বীর্য সম্পর্কিত সতেজ মনোবল দান করে।

উপসংহার :

প্রতি বছরই ধুমধামের সাথে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। কেবল আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে দিনটি পালন করলেই হবে না, বরং আমাদের মনে রাখা দরকার কি পটভূমিকায় এ দুর্লভ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কেবল গুটিকয়েক লোকের আরাম-আয়েশের জন্য স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি। আমাদের স্বাধীনতা দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। শহীদের পবিত্র রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা গণতন্ত্রের নামে দলগত বা ব্যক্তিগত চোরাবালিতে পথ না হারায় সে দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে দিনটিকে অর্থবহ করে তোলার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url