বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

ফরজ সালাতের পরই ওয়াজিবের স্থান না পড়লে গুনাহগার হতে হয়। বিতর নামাজ পড়া ওয়াজিব। বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত জানা প্রত্যেকের জন্য সর্বদা প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। নিম্মে বেতের নামাজ আদায় করা সম্পর্কিত নিয়ম পড়ুন এবং বিতর নামাজের পরিপূর্ণ নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানুন।

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

বিতর নামাযের আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা ছালাছা রাকআ'তি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বিতর নামাযের বাংলা নিয়ত : আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর জন্য বিতরের তিন রাকয়াত ওয়াজিব নামায আদায় করিবার নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবার।

রমজান মাসে ইমামের সাথে জামাতে বিতর নামায পড়লে ওয়াজিবুল্লাহি তাআলার পর ইক্কতাদাইতু বিহাযাল ইমাম বলতে হবে, অর্থাৎ আমি এই ইমামের ইক্কতাদা করলাম। তারপর বাকিটা পাঠ করুন।

আরো পড়ুন: কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত

বিতর নামায আদায় করার নিয়ম

মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ নিয়ম অনুযায়ী ফরজ। বিতরের নামাযও একইভাবে আদায় করতে হবে। পার্থক্য শুধু এই যে, নিয়ত করার সময় ওয়াক্তের পরিবর্তে বিতর ব্যবহার করা হয় এবং ফরজ-এর পরিবর্তে ওয়াজিব ব্যবহার করা হয়। দুটি উচ্চারণ করতে হবে।

দুই রাকাত পড়ার পর, প্রথম বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে সূরা ফাতেহা এবং আরেকটি সূরা “আল্লাহু আকবার” বলে কান পর্যন্ত (মহিলাদের জন্য কাঁধ পর্যন্ত) হাত উঠানো এবং আবার পুনরায় হাত বাধবে। তারপর দুয়া কুনুত পাঠ করেন এবং রুকু করেন, এভাবে তৃতীয় রাকাআত পড়ার পর তাশাহহুদ, দুরূদ এবং দুয়া মাসুরা পড়ে নামায শেষ করেন। বেতের নামাযের তিন রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য একটি সূরা পাঠ করা ওয়াজিব।

বিতের নামাযের রাকআতের সংখ্যা

হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, বেতের নামাজ তিন রাকাত। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এবং অন্যান্য ইমামদের মতে এটি এক রাকাত। প্রকৃতপক্ষে, মহানবী (সা.) সর্বদা তাহাজ্জুদ নামায জোড়ায় জোড়ায় আদায় করতেন, অর্থাৎ দুই রাকাত, চার রাকাত, আট রাকাত। অতঃপর তিন রাকাত এবং কখনো কখনো এক রাকাতের সাথে বিতর অর্থাৎ জোড়া ছাড়া। সুতরাং সাহাবীদের মধ্যে যে কেউ যা দেখেছেন তা বর্ণনা করেছেন। আমাদের মাযহাবে বিতরের নামায তিন রাকাত। এক রাকাত নামায পড়লে বিতর হবে না।

আরো পড়ুন: জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত। 

বিতর নামাযের ওয়াক্ত

এশার সালাতের পর থেকে সুবহ সাদিক পর্যন্ত বিতরের সালাতের সময়। তবে বিতরের নামাযের উত্তম সময় হল শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাযের পর। তবে শেষ রাতে যাদের ঘুম থেকে ওঠার সম্ভাবনা কম তাদের জন্য এশার নামাজের পর বিতর পড়তে হবে।

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি শেষ রাতে না জাগতে ভয় পায় সে যেন প্রথম রাতে বিতরের নামায আদায় করে। আর যার শেষ রাতে জাগার অভ্যাস আছে সে যেন শেষ রাতেই বিতরের নামায পড়ে। কারণ শেষ রাতের নামাযে ফেরেশতারা উপস্থিত হয়। আর সেটাই ভালো। (মুসলিম)

জামায়াতে বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম 

বিতর নামাযের জামাত রমজান মাসে তারাবীহ নামাযের পর জামাতে বিতরের নামায পড়া মুস্তাহাব। বিতরের নামায জামাতে আদায় করলে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা যোগ করার পর ইমাম সাহেবের মত মুক্তাদীদেরকেও নীরবে দুআ কুনুত পড়তে হয়। বিতরের নামাযে দুআ কুনুত পাঠ করা ওয়াজিব।

আরো পড়ুন: শিশুর আকিকা দেওয়ার নিয়ম ও ইসলামের বিধান

বিতের নামাযে পড়ার সময় দোয়া কুনুত পাঠ করতে ভুলে গেলে করণীয়

তৃতীয় রা‘আতে দু’আ কুনুত পড়তে ভুলে গেলে রুকুতে যাবেন এবং রুকুর পর মনে পড়লে দুআ কুনুত পড়বেন না এবং রুকু থেকে উঠবেন না এবং রুকুর পর শুহু সেজদা করবেন। কিন্তু রুকূ থেকে উঠে দুআ কুনুত পাঠ করলে নামায আদায় হবে কিন্তু তা করা ঠিক নয় এবং এক্ষেত্রে ছুহু সেজদা ওয়াজিব। প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাতে ভুলবশত দুআ কুনুত পাঠ করা দুআ কুনুত বলে গণ্য হবে না এবং ছুহু সেজদাও করতে হবে।

বিতর নামাজ কাযা আদায় করতে হবে কিনা ?

বিতরের নামায না পড়লে কাজা করতে হবে যদি কোন কারণে বিতরের নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় না হয় বা কেউ না পড়ে ঘুমিয়ে যায় এবং শেষ রাতে না জাগে তাহলে ফজরের আগে কাজা করতে হবে। ফকীহগণের মধ্যে যারা বিতরকে সুন্নাত বলে, তারাও এর কাজা করতে বলে।

হজরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) এর মাধ্যমে মহানবী (সা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বেদের নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, সে যেন ফজরের নামাজ আদায় করে। (মিশকাত)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url