নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। ফরজ নামাজ বিভিন্ন কারণবশত ছুটে যায় এবং নামাজ কাযা হয়। ফলে প্রয়োজন পরে কাযা নামাজ আদায়ের। কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম আমরা অনেকেই জানি না। নিচে কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কিত সবকিছুর যথাযথ ভাবে আলোচনা নিচে পড়ুন।
কাযা নামায কি ?
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামায আদায় না হলে দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এরপর নামায পড়তে হবে। এর মানে এই নয় যে আপনি সময়মতো পড়তে পারেননি বা পড়তে পারেননি বলে আপনাকে পরে পড়তে হবে না। কোনো কারণ ছাড়া ফরজ সালাত যথাসময়ে আদায় না করলে গুনাহ। তাই বিনা কারণে অলসতার কারণে সময়মত নামাজ না পড়ার গুনাহ করা উচিত নয়। কোনো বিশেষ কারণে ফরজ ও ওয়াজিব নামায যথাসময়ে আদায় করতে না পারলে পরে আদায় করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর নামাজ পড়া হলে তাকে 'কাযা নামাজ' বলা হয়।
কাযা নামায আদায় করার নিয়ম বা বিধান
ফরয নামায কাযা আদায় করা ফরজ। তেমনি ওয়াজিব নামায আদায় করা ওয়াজিব। মুসাফির অবস্থায় নামায মুকীম অবস্থায় আদায় করলে মুসাফির অবস্থায় আদায় করতে হবে। আর মুকিম অবস্থায় নামায মুসাফির অবস্থায় আদায় করলে চার রাকাআতের নামায চার রাকাতেই পড়তে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
আরো পড়ুন: শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত।
মা'যুর অবস্থায় থাকলে সুস্থ অবস্থার নামায কাযা আদায় করলে বসে বা শয়ন করেই সে নামায আদায় করবে। যেহেতু মা'র অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামাৰ আদায় করা তার জন্য সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে এবং দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে সক্ষম হলে পুনরায় সে নামায আদায় করতে হবে না। আবার মা'যুর অবস্থায় নামায কাযা হয়ে থাকলে সুস্থ হবার পর তা আদায় করার সময় শয়ন করে বা বসে আদায় করতে হবে না, দাঁড়িয়েই তা আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)
যে সব কারণে নামায কাযা করা যায়
যদি কারো মনে এই ধারণা জাগে যে শত্রু খুব কাছে। যদি সে নামাযে দাঁড়ায় তাহলে শত্রুরা তার উপর হামলা চালাতে পারে অথবা সে যদি মনে করে যে সে নামাযে দাঁড়ালে তার সমস্ত জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাবে, তাহলে নামায কাযা করা জায়েয। (ফতোয়া ও মাসআলা)
ধাত্রীর জন্য সন্তান প্রসবের সময় নামায কাযা করা জায়েয। কারণ মিডওয়াইফের সামান্য দেরি মা ও শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। (গায়াতুল আওতার)
যদি কেউ ঘুমিয়ে থাকে এবং সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জেগে ওঠে অথবা কেউ যদি নামাযের কথা পুরোপুরি ভুলে যায় এবং নামাযের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা স্মরণ করে তবে তার জন্য এই সালাত আদায় করা ফরজ। তবে এই বিলম্বের কারণে কোন গুনাহ হবে না। তবে ওয়াক্ত হওয়ার পর নামাযের নামাজ না পড়ে ঘুমানো জায়েয নয়।
কাজা নামাজের নিয়ত
আরবীতে নামাযের নিয়ত করে কাযা নামায পড়ার প্রয়োজন নেই। আরবীতে নিয়ত করতে চাইলে কাজা নামাজ ও ওয়াজিয়া নামাজের নিয়ত একই রকম। তবে পার্থক্য শুধু এই যে, কাজা নামাযে আন উসাল্লিয়্যাহ শব্দের পরিবর্তে আন আকদিয়াহ শব্দটি যোগ করতে হবে এবং যে সময়ে কাজা নামায হবে তার নাম উচ্চারণ করার পর আল ফায়াতি শব্দটি ব্যবহার করতে হবে, অর্থাৎ অনাদায়ী শব্দটি বাড়িয়ে বলতে হবে। যেমনঃ ফজরের নামায পড়লে নিয়ত হবেঃ
কাজা নামাজের আরবি নিয়ত
নাওয়াইতু আন আকদিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল ফাজরিল ফাইতাতি ফারদুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
কাযা নামাযের বাংলা নিয়ত
আমি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে বিগত অনাদায়ী ফজরের দুই রাকআত ফরয নামাযের কাযা আদায় করার নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।
জামা‘আতের সাথে কাজা নামায পড়া কয়েকজন লোক জামা‘আতের সাথে কাযা নামায আদায় করতে পারবে যদি নামায পড়ে থাকে। ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ার নিয়ম, কাযা নামাজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ইমাম সাহেব জোহর ও আসরের নামাজের সময় নীরবে কিরাত পড়বেন এবং ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজের সময় উচ্চস্বরে কিরাআত পড়বেন। এই সময়ের সালাত কখনই দিনে বা রাতে আদায় করা হয় তা কোন ব্যাপার না।
জামাআতের সাথে কাযা নামায আদায় করা কয়েকজন লোকের নামায যদি কাযা হয়ে থাকে তাহলে তারা এ নামায জামাআতের সাথে আদায় করতে পারবে। । ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ার নিয়ম, কাযা নামাজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। ইমাম সাহেব যোহর ও আসরের নামাযের সময় নীরবে কিরাত পড়বেন এবং ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযের সময় উচ্চস্বরে কিরাআত পড়বেন। এই সময়ের সালাত দিনে বা রাতে আদায় করা যায় কিনা তা বিবেচ্য নয়।
মুসাফির ও মুকীমের কাযা আদায়ের হুকুম
সফর অবস্থায় যদি কোন মুসাফির ব্যক্তির নামায কাযা হয় আর মুকীম অবস্থায় যদি তার কাযা আদায করা হয় তাহলে কসররূপেই সে কাযা আদায় করতে হবে। আর মুকীম অবস্থার কাযা নামায মুসাফির অবস্থায় আদায় করা হলেও তা পূর্ণ চার রাকআতই আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে শামী)
সুন্নত ও নফল নামাযের কাযা আদায়ের নিয়ম
সুন্নত ও নফল নামাজ পড়তে হবে না। তবে ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে শুধুমাত্র এই দুই রাকাতের নামাজ পড়া না হলে এই নামাজ কাজা আদায়ের হলে করার বিধান রয়েছে যা শুধুমাত্র এই দুই রক্ত নামাজ সুন্নাত। এছাড়া অন্য কোনো সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বা সুন্নতে যায়েদার কোনো কাজা নেই।
যদি শুধুমাত্র ফজরের ওয়াক্তে ফরজ আদায় করা হয় এবং সুন্নত আদায় না করা হয়, তবে ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে, সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুর ২টার আগে যে কোনো সময় আদায় করা উত্তম। (বাদায়ুস সানায়ে)
যদি ফজরের ফরজ বা সুন্নত কোনোটাই আদায় না করা হয় , তাহলে জোহরের আগে আদায় করলে ফরজ ও সুন্নাত উভয়ই আদায় করতে হবে। কিন্তু যোহরের ওয়াক্তের পর কাযা আদায় করা হলে শুধু ফরজ দুই রাকাত পড়তে হবে, সুন্নত আদায় করার প্রয়োজন নেই।
কাযা নামায আদায় করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক বিধান
ফজরের কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও সময়
নামাযের কাজা পড়ার সময় পূর্বের নামায আগে পড়া হয় এবং পরের নামায পরে পড়া হয়। অর্থাৎ জোহর, আছর ও মাগরিব এই তিনটি নামায কেউ পড়তে পারবে না। অতঃপর কাযা পড়ার সময় জোহরের প্রথম কাজা, তারপর আসরের কাজা এবং সবশেষে মাগরিবের কাযা পড়বে। যে ব্যক্তি মাত্র এক ওয়াকৃতের নামাজ পড়িতে পারে নাই, সে ওই ওয়াকৃতের কাজা না পড়িয়া পরবর্তী উপস্থিত ওয়াকৃতের নামাজ পড়িলে শুদ্ধ হবে না।। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাত আদায় করতে পারেনি, সে মাগরিবের সালাত আদায় না করা পর্যন্ত এশার সালাত আদায় করবে না। প্রথমে মাগরিবের কাজা পড়তে হবে, এরপর বর্তমান এশার নামাজ আদায় করা হবে।
ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব, এশার কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম
অনুরূপভাবে, যে ব্যক্তি পরপর দুই, তিন, চার বা পাঁচটি নামায ছুটে গেছে এবং সে নামাযের হুকুম অনুসারে অন্য কোন নামায আদায় করা বাকি নেই অর্থাৎ প্রথমে ফরজ, তারপর জোহর, তারপর আছর - বাদ পড়া নামায। এই ক্রমে কাজা পড়বে। অন্যথায় বর্তমান ওয়াতের নামায শুদ্ধ হবে না। নামাজ এক থেকে পাঁচ ওয়াক্ত পর্যন্ত নামাজ ছুট্ গেলে প্রথমে পাঁচ ওয়াক্ত পড়তে হবে, তারপর বর্তমান সময়ে পড়তে হবে; আর কাযা পড়ার সময় পূর্বের নামাযটি আগে পড়তে হবে। এটাই নামাজের সাধারণ নিয়ম।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url