ইসলামে খাবার খাওয়ার নিয়ম ও বিধান

সুষম খাবার খাওয়ার কিছু নিয়ম ও বিধান রয়েছে। ইসলামে খাবার খাওয়ার নিয়ম ও বিধান গুলো সবোত্তম এবং যথোপযুক্ত। প্রতিটি মানুষের সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত তেল, চর্বি, মসলা বেশি মাত্রায় প্রোটিন ইত্যাদি খাবার মানুষের শরীরের জন্যে ক্ষতিকর। সুষম খাবার বলতে বোঝায় যে খাবারে থাকবে শর্করা প্রোটিন স্নেহপদার্থ ভিটামিন মিনারেল বা খনিজ পদার্থ ইত্যাদি।

ইসলামে খাবার খাওয়ার নিয়ম

ইসলামে খাবার খাওয়ার নিয়ম ও বিধান

১. মানুষের জন্যে খাবার পরম করুণাময়ের নিয়ামত। তাই খাবার শুরুতে তাঁর নাম নিয়ে খাওয়া শুরু করুন। তাড়াহুড়ো করে, অন্যমনস্কভাবে খাওয়া ঠিক নয়। খাবার সময় ভাবুন- যে খাবার খাচ্ছেন তা আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দেবে। সঠিকভাবে সব হজম হবে। বিরক্তি নিয়ে কোনো খাবার খাবেন না। খাবার সময় মনে মনে বলুন, যা খাবো মজা করে খাবো, যা খাবো সব হজম হবে।

আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি বাংলা Ayatul Kursi Bangla উচ্চারণ অর্থসহ

২. রাতে খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না, কমপক্ষে ১০ মিনিট বজ্রাসনে বসুন। একটু হাঁটুন। 

৩. খাদ্যবস্তু ভালো করে চিবিয়ে খাবেন। এতে হজম ভালো হবে। 

৪. খাবারের মধ্যে পানি পান করা উচিত নয়। খাওয়ার আধ ঘণ্টা পর পানি পান করুন। 

৫. নবীজী (স.)-এর নির্দেশ অনুসারে পাকস্থলির ১ ভাগ খাবার, ১ ভাগ পানি আর ১ ভাগ ফাঁকা রাখুন। 

৬. খিদে অনুভব না করলে খাবার খাবেন না। একটু খিদে রেখেই খাবার শেষ করবেন। 

৭. সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে খালি পেটে ২ গ্লাস পানি পানের অভ্যেস করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে, সহজে পেটের কোনো রোগ হবে না। 

৮. অতিরিক্ত পরিশ্রম করে এসেই খাবার খাবেন না। মুখ-হাত ধুয়ে ৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তারপর খান।

৯. খালি পেটে কফি বা চা পান করবেন না। এটি স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। 

১০. প্রতিদিন খাবারের সাথে সালাদ এবং মৌসুমী ফল খান। 

১১. রাতে চর্বিদার গুরুপাক খাবার খাওয়া উচিত নয়। 

১২. যাদের ওজন বেশি তারা তেলে-ভাজা খাবার আইসক্রিম চকলেট কেক বিস্কুট পরিহার করুন। 

১৩. যারা মোটা তারা বিকেলের নাশতার পর্ব পরিহার করুন। 

১৪. দুধ-চায়ের পরিবর্তে শুধু লিকার চা বা সবুজ চা পান করুন। 

১৫. সাদা চিনির পরিবর্তে ব্রাউন সুগার বা গুড় খাওয়ার অভ্যেস করুন। 

আরো পড়ুন: ফরজ গোসলের নিয়ম ও সঠিক নির্দেশনা - নিয়ত ও দোয়া। 

১৬. যারা দিনে চার/পাঁচ বার চা পান করেন তারা শুধু দুবার চায়ে মিষ্টি নিন; বাকি সব বার মিষ্টি ছাড়া চা পান করুন। 

১৭. সপ্তাহে ১ দিন অথবা ১৫ দিনে ১ দিন রোজা বা উপবাস করতে পারেন। 

১৮. প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস বা দেড় লিটার পানি পান করুন। 

১৯. প্রত্যেকবার খাবার পর দাঁত ভালো করে পরিষ্কার করুন। তাহলে দাঁতে ক্যারিজ হবে না। 

২০. গরম কোনো খাবার বা পানীয় খেয়েই সাথে সাথে ঠাণ্ডা খাবার বা পানীয় খাওয়া উচিত নয়, এতে দাঁতের ক্ষতি হয়। 

২১. সকালে ভরপেট নাশতা, দুপুরে তার থেকে একটু কম এবং রাতে একেবারে কম খাবার অভ্যেস করুন। 

২২. ধূমপান, মাদকদ্রব্য, পান-বিড়ি-সিগারেট ও সব ধরনের কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখুন। 

আরো পড়ুন: কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত। 

* বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইসলামে খাবার খাওয়ার নিয়ম সঠিক ও সর্বোত্তম এবং পরিপূর্ণ। প্রতিদিন কঠোরভাবে খাবার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে একদিন স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া এবং তার পর দিন কিছুই না খাওয়া- এরকম অভ্যেস অনেক ভালো ফল দিতে পারে। আর এর কারণ হচ্ছে 'সবিরাম উপবাস' দেহে প্রোটিনের উৎপাদন বাড়িয়ে ব্রেন সেলের ক্ষয় রোধ করে এবং নার্ভ সেলের উৎপাদন বাড়ায়। যার ফলে স্ট্রোক, আলঝেইমার, হান্টিংটন বা পার্কিনসন্সের মতো ব্রেনের বয়সজনিত রোগগুলো হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তবে একটি সুস্থ ব্রেনই রোজা বা উপবাসের একমাত্র উপকার নয়। এর ফলে কোষের গ্লুকোজ পরিপাকের ক্ষমতা বাড়ার কারণে ডায়াবেটিসও প্রতিরোধ হয়। এমনকি হৃৎপিণ্ডের সুস্থতাও তাতে বেড়ে যায়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, রোজা বা উপবাস ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকরভাবে হার্টবিট ও ব্লাড প্রেশার কমাতে পারে। অনাহারের ফলে যে সাময়িক শক্তি সংকট, তা ব্রেনসেলগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয় যা উদ্বেগ পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্য যোগায়। আর পুরো দেহেই ইনসুলিন ছড়িয়ে পড়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url