এশার নামাজ কয় রাকাত ও এশার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

এশার নামাজ কয় রাকাত ও কি কি এবং এশার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত কিভাবে একজন মুসলিমের সঠিক ভাবে এশার নামাজ আদায় করা উচিত। এশার নামাজ মোট কত রাকাত ফরজ, সুন্নত ও নফল নামাজ কিভাবে সঠিক ভাবে আদায় করা উচিত এবং এশার নামাজের সময় কখন শুরু ও শেষ হয় তা জানা প্রতিটি মুসলমানের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা, আল্লাহর ইবাদত করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। তবে, সেটি অবশ্যই সঠিক নিয়মে আদায় করা করতে হবে। এশার নামাজ সুন্নত ও ফরজ এবং নফল কিভাবে আদায় করবেন তা এখানে ধারাবাহিক ভাবে রয়েছে।

এশার নামাজের ওয়াক্ত

এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় সূর্য ঠিক যখন অস্ত যায় ঠিক তারপর পশ্চিম আকাশে ঘন্টাখানেক লালবর্ণ থাকে। লালবর্ণ চলে গিয়ে কিছুক্ষণ পর্যন্ত আকাশে সাদাবর্ণ দেখা যায়। লালবর্ণ যখন চলে যায়, ঠিক তখন থেকেই ফতওয়া হিসেবে এশার নামাজের ওয়াক্ত হওয়া শুরু হয়; কিন্তু আমাদের ইমাম আযম হযরত আবূ হানিফা (রঃ) বলেন যে, আকাশে সাদা বর্ণ থাকা পর্যন্ত এশার নামাজের ওয়াক্ত হয় না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সাদাবর্ণ দূর হয়ে কালবর্ণ দেখা না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত এশার নামাজ আদায় করা উচিত নয়। আকাশে ওই লালবর্ণ দূর হওয়ার পর থেকে সুবহে ছাদেক না হওয়া পর্যন্ত এশার নামাজের ওয়াক্ত। কিন্তু খেয়াল রাখা উচিত, রাতের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত এশার নামাজের ওয়াক্ত হলো মুস্তাহাব ওয়াক্ত। রাত দ্বিপ্রহর পর্যন্ত মুবাহ ওয়াক্ত এবং রাত দ্বিপ্রহরের পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত এশার নামাযের মাকরূহ ওয়াক্ত, সুতরাং রাতের এক তৃতীয়াংশ অতীত হওয়ার পূর্বেই এশার নামাজ আদায় করা উচিত।

এশার নামাজ কয় রাকাত

কোন কারণবশতঃ রাত দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত দেরী করার অনুমতি আছে, তবে বিনা কারণে রাত দ্বিপ্রহরের পর এশার নামাজ আদায় করা মাকরূহ ও বটে। এশার নামাজ এশার নামাজ সামান্য বিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, আমি যদি আমার উম্মতের কষ্টের আশংকা না করতাম, তাহলে তাদেরকে এশার নামাজ রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত্রি পর্যন্ত পিছিয়ে আদায় করার নির্দেশ দিতাম। (তিরমিযী) অবশ্য মুসাল্লীদের উপস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখেই এশার নামাজকে একটু আগে পিছে আদায় করতে হবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীস হতে জানা যায়, মহানবী (সঃ) লোক সমাগম হলে এশার নামাজ একটু আগে ভাগে আদায় করে নিতেন, আর তাদের সংখ্যা কম হল একটু দেরী করে এশার নামাজ আদায় করতেন।

এশার নামাজ জামাআতে আদায় করার ফযীলত 

হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, প্রিয় মহানবী হযরত মোহাম্ম্মদ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্থ রাত পর্যন্ত (নফল) নামায আদায় করল। (মুসলিম) 

আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি বাংলা Ayatul Kursi Bangla উচ্চারণ অর্থসহ। 

এশার নামাজ কয় রাকাত কি কি ?

এশার নামাজের রাকাতের সংখ্যা বা এশার নামাজ মোট ১৫ রাকাত। এশার নামাজ ৪ রাকাত সুন্নতে গায়েরে মুয়াক্কাদাহ। এশার নামাজ ৪ রাকাত ফরয। এশার নামাজ ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এশার নামাজ ২ রাকাত নফল। এবং শেষ এশার নামাজ ৩ রাকাত বিত্র (ওয়াজিব নামাজ)।

এশার নামাজের নিয়ত

এশার নামাজের চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত 

এশার নামাজের নিয়ত আরবি : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবাআ' রাকয়া'তি সালাতিল ইশায়ি সুন্নাত রাসূলুল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। 

এশার নামাজের নিয়ত: আমি আল্লাহর জন্য কেবলামুখী হইয়া এশার চার রাকয়াত সুন্নাত নামায আদায় করিবার নিয়াত করিলাম, আল্লাহু আকবার। 

এশার নামাজের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আর যোহরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ম একই রকম। শুধুমাত্র নিয়তের ক্ষেত্রে যোহরের চার রাকাত সুন্নতের স্থলে এশার চার রাকাত সুন্নত নামায কথাটি উল্লেখ করতে হবে। কাজেই এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ  আদায়ের নিয়মের জন্য যোহরের চার রাকাত সুন্নত আদায় করার নিয়ম অনুসরণ করা যায়।

এশার চার রাকাত ফরয নামাজের নিয়ত 

এশার নামাজের নিয়ত আরবি : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবাআ' রাকয়াতি ছালাতিল ইশায়ি ফারদুল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। 

এশার নামাজের নিয়ত বাংলায় : আমি কেবলা মুখী হইয়া আল্লাহর জন্য এশার চার রাকয়া'ত ফরজ নামাজ (এই ইমামের পিছনে) আদায় করিবার নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।

ইমাম সাহেবের পিছনে জামাআতে নামাজ আদায় করার সময় ফারদুল্লাহি তাআলার পর বলতে হবে "ইকুতাদাইতু বিহাযাল ইমাম" বাংলা অর্থ আমি এ ইমামের পিছনে ইকৃতিদা করলাম। তারপর বাকী অংশ পাঠ করবে। 

এশার নামাজ পড়ার নিয়ম

এশার চার রাকাত ফরয নামাজ আদায় করার নিয়ম যোহরের চার রাকাত ফরয নামাজ  আর এশার চার রাকাত ফরয নামাজ আদায় করার নিয়ম একই। শুধু নিয়ত করার সময় যোহরের চার রাকাত ফরযের জায়গায় বলতে হবে এশার চার রাকাত ফরযের কথা। তবে মনে রাখতে হবে যে, যোহরের নামাজে কিরাআত নিঃশব্দে পাঠ করতে হয় কিন্তু এশার নামাজ এর সময় কিরাআত উচ্চস্বরে পাঠ করতে হয়। তবে যদি কেউ একাকী আদায় করার সময় উচ্চস্বরেও পাঠ করা যায়। আবার কেউ চাইলে নিঃশব্দেও পাঠ করা যায়।

এশার নামাজ কয় রাকাত কিভাবে পড়তে হয়

এশার চার রাকাত ফরয নামাজের প্রথম দুই রাকাত নামাজ আদায় করার সময় সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর অন্য কোন সূরা পাঠ করতে হয়, আর শেষের দুই রাকাতে নামাজে শুধু মাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। জামাআতে নামাজ  আদায় করার সময়  ইমাম সাহেবের পিছনে কোন সূরা কিরাআত পাঠ করতে হয় না বা প্রয়োজন নেই। ইমাম সাহেবের কিরাআত মনোযোগ সহকারে শোনাই সর্বোত্তম।

এশার নামাজ কয় রাকাত সুন্নত কয় রাকাত ফরজ

এশার নামাজে ৬ রাকাত সুন্নত (মুয়াক্কাদা) এবং ৪ রাকাত ফরজ ও ২ রাকাত নফল এবং ৩ রাকাত বিতর। 

আরো পড়ুন: ফরজ গোসলের নিয়ম ও সঠিক নির্দেশনা - নিয়ত ও দোয়া।

৪ রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম

এশার নামাজের ফরজ (বাধ্যতামূলক) চার রাকাত নামাজ কীভাবে আদায় করবেন এবং সেই সাথে অনন্য সালাতের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ ঠিক একই ভাবে আদায় করা হয় তা এখানে দেওয়া হল:

১. নিয়ত : প্রথমেই কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিয়ত করুন যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ৪ রাকাত এশার নামাজের ফরজ নামাজ পড়ছেন।

২. তাকবীর: কানের কাছে হাত তুলে "আল্লাহু আকবার" বলুন।

৩. কিয়াম (দাঁড়িয়ে): "আল্লাহু আকবার"  সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করুন, তার পরে অন্য কোনো সূরা বা কুরআনের কয়েকটি আয়াত পাঠ করুন।

৪. রুকু : তেলাওয়াত করার পর, "আল্লাহু আকবার" বলুন এবং রুকু করুন। রুকুতে সর্বনিম্ম তিনবার, "সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম" বলুন।

৫. রুকু থেকে দাঁড়ানো : রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" তারপর "রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ" বলুন।

৬. সুজূদ (সেজদা): রুকু থেকে সেজদা যাওয়ার জন্য "আল্লাহু আকবার" বলুন এবং সেজদায় যান। সুজুদে (সেজদা) সর্বনিম্ম তিনবার "সুবহানা রব্বিয়াল আ'লা" বলুন।

৭. বসা (জলসা): প্রথম সুজূদের পর "আল্লাহু আকবার" বলুন এবং পায়ে ভর দিয়ে বসুন, তারপর দ্বিতীয় সুজূদ করুন। এবং সুজুদে (সেজদা) সর্বনিম্ম তিনবার "সুবহানা রব্বিয়াল আ'লা" বলুন।

৮. রাকাত সমাপ্তি: দ্বিতীয় রাকাত শুরু করতে আবার উঠে দাঁড়ান এবং ৩, ৪, ৫, ৬,৭ প্রযন্ত ধাপ গুলো অনুসরণ করুন। 

৯. তাশাহহুদ (দ্বিতীয় রাকাতের শেষে): দ্বিতীয় রাকাতের পর বসে তাশাহহুদ পাঠ করুন: 

 > “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ছিল সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাতু, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালেহীন। আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।”

১০. তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত: তাশাহহুদ পাঠ করার পর উঠে দাঁড়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতের ধাপগুলোর মতো নামাজ আদায় করুন কিন্তু, শুধু মাত্র শেষের দুই রাকাতে নামাজে শুধু মাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। জামাআতে নামাজ  আদায় করার সময়  ইমাম সাহেবের পিছনে কোন সূরা কিরাআত পাঠ করতে হয় না বা প্রয়োজন নেই।

১১. তাশাহহুদ (চতুর্থ রাকাতের পর): চতুর্থ রাকাত শেষ করার পর আবার বসুন এবং ৯ম ধাপের মতো তাশাহহুদ পাঠ করুন, তাশাহহুদ পড়ার পরে :

 > “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

১২. সালাম: আপনার মাথা ডানদিকে ঘুরিয়ে "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ" বলুন এবং তারপর বাম দিকে "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ" বলুন। 

১৩. আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি জুলমান কাছীরাওঁ ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রহিম। 

এভাবে এশার নামাজের ফরজ ৪ রাকাত নামাজ পড়তে হয়।

আরো পড়ুন: বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত। 

এশার নামাজ সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন:

এশার নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয় ?

এশার নামাজের নফল নামাজ এশার নামাজে মোট ১৭ রাকাত পড়তে হয়। যেমন: 

  • ৪ রাকাত সুন্নত মুআক্কাদা (সুন্নত)
  • ৪ রাকাত ফরজ (ফরজ নামাজ)
  • ২ রাকাত সুন্নত মুআক্কাদাহ (সুন্নত)
  • ২ রাকাত নফল (ঐচ্ছিক)
  • ৩ রাকাত বিতর (ওয়াজিব)
  • ২ রাকাত নফল (ঐচ্ছিক)

কোনো ব্যক্তি যদি চায় তাহলে নফল নামাজ ছেড়ে দিতে পারে, কিন্তু সুন্নত এবং ফরজ রাকাতগুলো পড়া আবশ্যক। এশার নামাজের নফল নামাজ ছেড়ে দিলে  বা না পড়লে গুনাহ হয় না। তবে, এশার এর নফল নামাজ পড়লে সওয়াব পাওয়া যায়। 

এশার নামাজ কয় রাকাত ফরজ ?

এশার নামাজে ফরজ হচ্ছে ৪ রাকাত। 

এশার নামাজ কয় রাকাত সুন্নত ?

এশার নামাজে সুন্নত নামাজ হল ৬ রাকাত। যেমন:

  • এশার নামাজ ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদাহ (সুন্নত)।
  • এশার নামাজ ফরজ নামাজের পরে ২ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদাহ( সুন্নত)।

এশার নামাজ কয় রাকাত ওয়াজিব ?

এশার নামাজে ওয়াজিব নামাজ হচ্ছে ৩ রাকাত। যা বিতর নামাজ হিসেবে পরিচিত।

এশার নামাজ কয় রাকাত নফল ?

এশার নামাজে নফল নামাজ হল ৪ রাকাত। যেমন:

  • এশার ফরজ নামাজের পর ২ রাকাত।
  • এশার নামাজের বিতর নামাজের পর ২ রাকাত।

এই নফল নামাজগুলো পড়া ঐচ্ছিক। পড়লে সওয়াব না পড়লে গুনাহ নেই। 

এশার নামাজ কয় রাকাত পড়া যায়

এশার নামাজ সাধারণত, ৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত ও ৩ রাকাত বিতের পড়া উচিত। এছাড়া কিছু সময় নফল নামাজ পড়া উচিত। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url