১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এর গুরুত্ব ও ফলাফল

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানি স্বৈরোচারী সামরিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে। যা ছিল পাকিস্তানের অত্যাচারিত ও শোষিত জনসাধারণের ব্যাপক ও সর্বাত্মক সকল প্রতিবাদী আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব  বাংলার জনসাধারণের মধ্যে যে একাত্বতাবোধ ছিল তার মাধ্যমে বাঙালির বীজ রোপিত হয়। পরবর্তীকালে পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চরম বৈষম্যমূল মূলক নীতি পদক্ষেপ উদাসীনতা ও সর্শন বঞ্চনার সংঘটিত হয়। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তার সফল ও সার্থক অঙ্কুরোদম ঘটায়। এ গণঅভ্যুত্থান তথা আন্দোলনের ফলে এক দশককালীন অত্যাচারী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। পূর্ব বাংলার জনসাধারণের মৈলিক অধিকার আদায়ের স
ম্ভাবনার সৃষ্টি হয়।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এর গুরুত্ব

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এর গুরুত্ব ও ফলাফল

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। গণ আন্দোলনের দিনগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হরতাল, মিছিল, বিক্ষোভ, গুলি ও নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়। সমগ্র দেশে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ফলে আইয়ুব খান ও মোনায়েম চক্র জাগ্রত জনতার নিকট নীতি শিকার করতে শুরু করে। 

নিম্মে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল তুলে ধরা হলো : আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান: মূলত এই আন্দোলনের মাধ্যমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান ঘটে। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে সাথে আরো ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহীতার মামলা দেয়। আইয়ুব খান ও মোনায়েম চক্রের দেওয়া "আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা" নামে দায়েরকৃত মামলা পত্যাহারের দাবিতে অটল থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি সব আসামিকে আগরতলা মামলা থেকে বিনাশর্তে মুক্তি দেয়।

রাজবন্দীদের মুক্তি: রাজবন্দীদের মুক্তি ১৯৬৯ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগণের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার ফলে আগরতলা মামলার প্রধান আসামি শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত মামলার অন্যান্য আসামি এবং রাজবন্দীদের আইয়ুব খা মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

গোলটেবিল বৈঠকের আহবান : ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের এই বৈঠকে ৬ দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়াল পিন্ডিতে গোল টেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। যার ফলে গণ আন্দোলন আবারো তীব্র রূপ ধারণ করে এবং প্রশাসন নিশ্চল পড়ে। গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়ার পর আন্দোলনের ব্যাপকতা আরো বেড়ে যায় এ অবস্থায় আপস মীমাংসার জন্য আইয়ুব খান বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ কে এই গোল টেবিল বৈঠকে আহ্বান জানান ১৯৬৯ সালের ১০ মাস রয়াল পিরিতে উক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

সরকার আয়ুব খানের অবসান : ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের এ আন্দোলনের মাধ্যমে আয়ুব সরকারের পতন ঘটে এ সময় আইয়ুব খান পুরো পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান কে সরিয়ে ড. এস. এন. হুদাকে গভর্নর এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ড. এস. এন. হুদাকে গভর্নর করে তারা অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করে। এতে গণ্য আন্দোলন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি করে। কিন্তু ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। ২৫ মার্চ পুরো পাকিস্তানের সামরিক শাসন জারি করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল  আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার খাঁনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এরপর মোহাম্মদ আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন : গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামে যখন পুরো পাকিস্তানে বিক্ষুদ্ধ অবস্থায় এবং পশ্চিম পাকিস্তানের যখন পাঞ্জাবের শাসনের অবসান চেয়ে জনঅসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছিল ঠিক সে মুহূর্তে জনঅসন্তোষ প্রসমনের জন্য আইয়ুব খান ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করেন।

আইয়ুব খানের পতন : শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান না হওয়া শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা ও ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য জনগণকে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করলে পাকিস্তানকে টিকে রাখার অভিপ্রায় স্বৈরাচারী আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াহিয়া খানের ওপর শাসন ক্ষমতা অর্পণ করে আইয়ুব খান রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। 

পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল অস্রহীন বাঙালি জাতির এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক বিজয়। গণঅভ্যুত্থানের ফলে সমগ্র পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক অধিকার ও গণতন্ত্রপূর্ণ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতিকে অক্ষরবন্ধনে একতাবদ্ধ করে এবং তাদের সচেতনতা বোধককে অধিকতর জাগ্রত করে। ১৯৬৯ সালের সাধারণ নির্বাচন অসহযোগ আন্দোলন ও সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রধান পাথেয় হিসেবে কাজ করে।

সম্পর্কিত পড়ুন: যুক্তফ্রন্ট কী ? যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiRsv7n3slK-wJ6kBKngfhLNOPtVsNrO-2Z5gEgbPTGq6I_SJeP-7kpgTgWJz8VzcmRCDLjH9sPZXEj5aVCXm59B5tMjsSaknCTzxO5k9WV5peiAATvHQcW5d7I5Ts7CafA6FpzeT1ncH7cbz_iSAq3jLhnHuDaKmUhATV3lUqN4fKe9IXYk3pzWfZMHNo/s320/NATURAL-Health-Supplement.jpg