রক্তের উচ্চচাপের কারণে হার্টের অসুখ
রক্তের উচ্চচাপের কারণে হার্টের অসুখ
রক্তের চাপ বেশী হলে প্রতিক্রিয়া হিসাবে হার্টের অসুখ হয় এবং ধমনীর গাত্র পুরা হইয়া রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
স্বাভাবিক ও উচ্চ রক্ত চাপ
স্বাভাবিক রক্তের চাপ বয়স অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। ১ বৎসরের শিশুর রক্তের চাপ হৃৎপিন্ডের সংকোচনের সময় ১০০ মিলিমিটারের নীচে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপও বাড়তে থাকে। একজন পূর্ণ বয়স্ক যুবকের রক্তের চাপ হৃৎপিণ্ডের সংকোচন সময়কার ১৫০ মিলিমিটারের বেশী এবং হৃত্যন্ত্রের রক্তের চাপ ১০ মিলিমিটারের বেশী হলে চলবে না। ৬০ বছর বা তাহার বেশী হলে রক্তের চাপ ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার বা আরও কিছু বেশী হতে পারে। উপরের পরিমাপের বেশী রক্তের চাপ হলে রক্তের চাপ বেশী হইয়াছে বলতে হবে। একটি কথা স্মরণ রাখা উচিত যে রক্তের চাপ সকল সময় শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের পর দেখতে হয়। রক্তের চাপ একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা হয়। ব্লাড প্রেসার যন্ত্রটির সঙ্গে একটি রাবারের থলি বা ব্যাগ থাকে এবং একটি ভাল্বযুক্ত রাবারের পাম্পের সাহায্যে বাহিরের বায়ুমণ্ডল থেকে হাওয়া নিয়ে ব্লাড প্রেসার থলিটি হাওয়া দিয়ে ভরান যায়। এই যন্ত্রটির নাম Sphygmomanometer (স্পিগ্মো-মেনোমিটার)। বাংলায় এটাকে চাপমান যন্ত্র বলা হয়।
আরো পড়ুন: ঔষধ বাদে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়।
ব্লাড প্রেসার যন্ত্রের থলিটি বায়ুশুন্য অবস্থায় কনুই-এর একটু উপরে বাহুতে পেচাইয়া বাঁধতে হবে। তারপর রাবারের পাম্পটির সাহায্যে ব্লাড প্রেসার কাফ (Cuff) ধীর গতিতে বায়ুর দ্বারা পূর্ণ করতে হয়। ব্লাড প্রেসার কাফটি বায়ুতে পরিপূর্ণ হওয়ার ফলে বায়ুর চারপার্শ্বে চাপের সৃষ্টি হয় এবং তা বাহুতে বেষ্টনী দিয়ে থাকার জন্য বাহুর ধমনীতে চাপ দেয়, ফলে ঐ ধমনীর মধ্য দিয়া রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয় এবং ঐ ধমনীর শাখা-প্রশাখার স্পন্দন অনুভূত হয় না । ব্লাড প্রেসার কাফ বা থলির উচ্চচাপের সঙ্গে মারকুরি ম্যানোমিটার (Mercury Manometer)-এ মারকুরি বা পারদ মাত্রাংকিত ম্যানোমিটার টিউবের মাধ্যমে উপরে উঠতে থাকে এবং Aneroid Manometer-এর ক্ষেত্রে থলির চাপ বৃদ্ধির ফলে ঐ যন্ত্রের ঘড়ির কাঁটাটি ঘুরিতে থাকে। মাত্রাংকিত ম্যানোমিটার টিউব-এর পারদের উচ্চতা অথবা ঘড়ির কাঁটার স্থান দেখে ব্লাড প্রেসার কাফ বা থলির বায়ুর চাপ কত আছে তাহা ধরা পড়ে। ঠিক যে মাপের মাত্রায় স্পন্দন বন্ধ হয়, তাহাই সিষ্টোলিক ব্লাড প্রেসার (Systolic Blood Pressure)। হৃদযন্ত্র সংকোচনের সময়কার রক্তের চাপ ঠিকভাবে পাওয়া যায় না। এইজন্য ষ্টেথোসকোপ (Stethoscope)-এর প্রয়োজন হয় । ব্লাড প্রেসার কাফ বায়ুপূর্ণ করতে করতে যখন কাফের চাপে নাড়ী স্পন্দন বন্ধ হবে তখন আর পাম্প না করে রাবারের পাম্পের ভালব খুলে ব্লাড প্রেসার কাফ-এর ভিতরকার বায়ু নির্গত হইতে দিতে হবে। ব্লাড প্রেসার কাফ এর বায়ুপূর্ণ করার সময় এই ভালব বন্ধ থাকে। বায়ু ধীরে ধীরে নির্গত হইতে থাকলে ব্লাড প্রেসার কাফের ভিতরের চাপ কমতে থাকবে এবং সেই সময় কনুই-এর সম্মুখ দিকের ধমনীর উপর (Brachial artery at the elbow) ষ্টেথোসকোপের Chest piece বসাইয়া ধমনীর স্পন্দন ধ্বনি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ব্লাড প্রেসার কাফ-এর যে চাপের মাত্রায় উপরোক্ত ধমনীর স্পন্দন ধ্বনি প্রথম শুনা যাবে, সেটা হবে সিষ্টোলিক ব্লাড প্রেসার (Systolic Blood Pressure) বা হৃদযন্ত্র সংকোচনের সময়কার রক্তের চাপ। ব্লাড প্রেসার কাফ এর হাওয়া আরও নির্গমন করলে ভিতরকার চাপ ধীরে ধীরে কমতে কমতে ধমনীর স্পন্দন ধ্বনি পরিবর্তিত হইয়া যাবে এবং এক সময় ঐ ধ্বনি আর শুনা যাবে না। যে মুহূর্তে ঐ ধমনীর স্পন্দন নীরব হবে সেই মুহূতে ব্লাড প্রেসার অথবা হৃদযন্ত্রে সম্প্রসারণ সময়কার রক্তের চাপ বুঝা যাবে এবং এটা হবে ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার (Diastolic Blood Pressure)।
আরো পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ সমূহ।
রক্তের চাপ বৃদ্ধি হলে হৃদযন্ত্রের উপর এবং ধমনীর উপর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হৃদযন্ত্রের আয়তন ও আকৃতির পরিবর্তন হয় এবং হার্টের অসুখ দেখা দেয়।হার্টের অসুখের ফলে বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়পড় করা এবং শেষে হার্টফেল হয় এবং এটার ভিতরকার রক্ত চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয় । ফলে শরীরের অত্যাবশ্যক যন্ত্রগুলির রক্ত সঞ্চালন স্তিমিত হয়ে কার্যক্ষমতা ভীষণভাবে কমিয়া দেয় এবং শরীরে নানারকমের উপসর্গ দেখা দেয়। ধমনীর গাত্র পুরু এবং অসমতল হওয়ার ফলে এবং রক্ত সঞ্চালন স্তিমিত হওয়ার ফলে ধমনীর মধ্যের রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। ফলে Stroke বা হার্ট এ্যাটাক ইত্যাদি দুর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটিতে পারে।
আরো পড়ুন: হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ সমূহ।
রক্তের চাপ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করিতে হলে-
- শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম লাঘব করতে হবে।
- নিয়মিত ও পরিমিত আহার করতে হবে।
- শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে।
- ঘুম ও বিশ্রাম ঠিকমত হওয়া জরুরি। রাত্রি ১০ টায় বিছানায় যাওয়া এবং সকাল ৬ টায় বিছানা ত্যাগ করা রক্তের উচ্চচাপের পক্ষে সহায়ক।
- নিয়মিত কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার দিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজন হলে ঔষধ খেতে হবে। ভেজানো ছোলা, পেয়ারা, কলা, চীনা বাদাম ইত্যাদি খেলে কোষ্ঠ পরিষ্কার হইতে পারে।
- লবণ এবং লবণযুক্ত খাদ্য বন্ধ করতে হবে।
- রক্তের চাপ বৃদ্ধির কোন কারণ বা কোন অসুখ থাকলে তার যথার্থ চিকিৎসা করতে হবে।
- স্থূলকায় ব্যক্তির ওজন কমাতে হবে।
- কফি পানে অভ্যস্ত লোকের কফি পান নিষিদ্ধ। রক্তের চাপ বৃদ্ধি ইতিমধ্যেই হয়া থাকলে উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়াও রক্তের চাপ কমানোর জন্য কিছু ঔষধ খাতে হবে। এই সকল ক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞের উপদেশ মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- খুব বেশী ওজনের জিনিস উত্তোলন বা বহন, ডন-বৈঠক বা ঐ ধরনের ভারী ব্যায়াম, যন্ত্র-সহায়ক ব্যায়াম ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url