ঔষধ বাদে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
ঔষধ বাদে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
রক্ত চাপ বেশী হইলেই যে ঔষধ খাইতে হইবে এই ধারণা আজকাল বিজ্ঞানীরা মানিতে চান না। অত্যন্ত সাবধানের সঙ্গে রক্তচাপ মাপিয়া উপযুক্ত ক্ষেত্রেই কেবল ঔষধ দিতে হবে। তা না হলে রোগীর বিপত্তি ঘটিতে পারে। রক্তচাপের ঔষধ খাইতে হবে জীবনভর, ঔষধ ছাড়া যাবে না। হঠাৎ ঔষধ খাওয়া বন্ধ করিলে অবস্থা বিপজ্জনক হতে পারে। তাহাছাড়া, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতো আছেই। এক সময় রক্তচাপের ঔষধ ছিল রিজারপিন দীর্ঘকাল ব্যবহারে মানসিকতা, বিষণ্নতা, হৃদ-ছন্দের বৈষম্য, অ্যানজাইনা, গ্লুকোমা, এমনকি সঙ্গমে অক্ষমতা এইরূপ নজিরও আছে। এমন অনেক রক্ত চাপের ঔষধ আছে, যাহা দীর্ঘদিন ব্যবহারে হতে পারে সানিক বাত, যকৃতের রোগ, বহুমূত্র ও হৃদ-যন্ত্রের রোগ। অথচ এইগুলি একবার খাওয়া শুরু করলে তা আর ছাড়ার উপায় নাই ৷
আরো পড়ুন: নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ ও চিকিৎসা।
তাহলে ঔষধ বাদে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় জানলে ক্ষতি কি ? বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন লবণ খাওয়া কমান, পৃথিবীর সবচেয়ে নামী-দামী মেডিকেল জার্নাল সেটেল্যান কয়েক বছর আগে এ সম্বন্ধে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছিলো। রক্তচাপের ঔষুধ যত বের হচ্চে, চিকিৎসকরা লবণ খাওয়া কমানোর উপর ততই গুরুত্ব বেশী দিতেছেন। আমেরিকার সিনেসেটোয় মেয়ো ক্লিনিকে গবেষকরা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরকে পাঁচ বছর কেবল লবণ, কম-ক্যালোরি খাবার দিয়া দেখাইয়েছেন যে মৃদু রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে ০.৮৫ শতাংশ এবং গুরুতর রক্তচাপ রোগীদের মধ্যে ০.৫১ শতাংশের রক্তচাপ হয়েছে সুস্থিত। এই গবেষকদের প্রধান ডাঃ জেমস হান্ট ৪০০০ রক্তচাপ রোগীদের মধ্যে (বয়স ১৮-৫৯ বছর) এই পরীক্ষা করেছেন। মৃদু রক্তচাপ রোগীদের দৈনিক লবণ খাওয়ানো হয়েছিল এক চামচেরও কম, ফলে ৮৫ শতাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে এলো সাফল্য। মধ্যম ধরনের গুরুতর রক্তচাপ রোগীদেরও রক্তচাপ কমল। ০.৫১ শতাংশ গুরুতর রক্তচাপ রোগী সুস্থ। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণের গবেষকরাও মৃদু রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে সাফল্য পেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ কি ও উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ।
রক্তচাপের অপর ঔষধটি হইল ব্যায়াম। আমেরিকার হুস্টনের বেলায় কলেজের গবেষকরা পরীক্ষা করেছেন যে ৮ সপ্তাহ অ্যারোবিক ব্যায়ামের ফলে সাফল্য পেয়েছিলেন। ১১৫ জন রোগী হাঁটা, জগিং এবং সাইকেল চালানোর প্রোগ্রামে শরিক হওয়ার ফলে দুই মাস পর রক্তচাপ কমেছে ও সাথে ওজনও কমেছে।বার্মিংহামের আলবামা মেডিসিন স্কুলের অধ্যাপক হেরিয়েট ডাসটানের অভিমত হল রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে ওজন কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিকাংশ রক্তচাপ রোগীদের ওজন থাকে বেশী। আদিম যুগেও রক্তচাপ হয়েছে এমন শোনা গেছে কদাচিৎ, কারণ স্থূলতা ছিল তখন বড়ই বিরল।
সম্প্রতি আরও দেখা গিয়েছে যে শরীর মন 'রিলাক্স' করিলে রক্তচাপ কমে। বছর কয়েক আগে প্যারিসে একটি হৃদরোগ কংগ্রেসে গবেষকরা বলিয়াছেন তাহারা অন্যদের তুলনায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন ভালভাবে। রক্তচাপ সুস্থির রাখতে প্রয়োজন মাঝারি কম-লবণ পথ্য, ব্যায়াম, দেহ মন ‘রিলাক্স' করা। এই তিনটি ধাপ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ । ইঞ্জিয়ানার মিশিগান শহরের ডাঃ সল রবিনসনের ভাষ্যঃ “আমরা উচ্চ রক্তচাপের ভয়ে ভীত হয়ে আছি। মধ্যবয়সী লোকদের ক্ষেত্রেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে মৃদু। ৭০ বছর বয়সের পর বরং এটি একটি সুরক্ষাকারী ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে স্বাভাবিকভাবে সিস্টোলিক চাপ বাড়ে (যখন হৃৎপিণ্ড পাম্প করিতে থাকে) তবে ডায়াস্টোলিক চাপ (যখন হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম নেয়) সাধারণতঃ থাকে স্থির। নাড়ীঘাতের এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা উচিত নয়। ঔষধ খেতে হবে বুঝে।
আরো পড়ুন: শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায়।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধগুলো মারাত্মকও হতে পারে। রক্তচাপের অধিকাংশ ঔষধে রয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সচরাচর প্রচলিত থিয়াজাইড গ্রুপের ঔষধ ও নানা ঔষধ বিপদমুক্ত নয়। তাছাড়া রক্তচাপের ঔষধ খাইতেছেন এমন রোগী যদি হঠাৎ ঔষধ খাওয়া বন্ধ করেন তাহা হইলে রক্তচাপ অনেক বেড়ে যেতে পারে। হঠাৎ বাড়ার ফলে হইতে পারে “স্টোক”। ডাঃ রবিনসন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক উপায়ের প্রতি জোর দিয়াছেন বেশী। ছয় মাস অনুসরণ করিলে ইস্পিত ফল পাওয়া সম্ভব। লবণ খাওয়া কমাতে হবে (দৈনিক চা চামচের তিনভাগের এক ভাগ বা চা চামচের অর্ধেক)। পথ্যে থাকিবে ক্যালোরী কম পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন। অন্ততঃ দুই বেলা হাঁটা দরকার।
সুতরাং কম লবণযুক্ত খাদ্য, ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, শরীর মন রিলাক্স করা রক্তচাপ কমানোর প্রধান উপায়। এইগুলি করা ঔষধের চেয়ে শতগুণে নিরাপদ। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কখনই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঔষধ খাওয়া উচিত নয়।
বিঃ দ্রঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ কোয়া কাচা রসুন হৃদরোগের নিরাময়ের জন্য বিশেষ ফলপ্রসূ।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url