বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
বাচ্চাদের নিউমোনিয়া আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়া বলতে সাধারণতঃ আমরা বুঝি ফুসফুসের প্রদাহ।
বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ উপসর্গ প্রকাশের প্রথম ৩-৪ দিন সাধারণতঃ সামান্য জ্বর, সর্দি- কাশি বা ঠাণ্ডা থাকে বা থাকতে পারে। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত। নিঃশ্বাসের কষ্ট, কাশি, অস্থিরতা, খাবার অরুচি নিউমোনিয়া রোগের অন্যতম লক্ষণ। মুখে রুচি থাকবে না।
এর সঙ্গে কিছু শিশুর খিঁচুনি, বুকে ব্যথা ও মাথা বালা থাকতে পারে। নাড়ি ও নিঃশ্বাসের গতি দ্রুত হয়। ধীরে ধীরে শরীর নীল ও নিস্তেজ হয়ে আসতে থাকে।
পুরোমাত্রায় বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হলে শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নাড়ি দ্রুত। চলতে থাকবে। শিশুর নিঃশ্বাস নেয়ার সময় গলার নিচে চামড়া (দু'টি পাঁজরের হাড়ের মাঝখানে উপরের দিকে) ভেতরে ঢুকে যায়। তাছাড়া নিঃশ্বাসের সময় বুকের পাঁজরের হাড়ের নিচের দিকেও ভেতরে ঢুকে যায়।
আরো পড়ুন: স্ক্যাবিস চুলকানি দূর করার উপায় ও ঔষধের নাম।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বাচ্চাদের নিউমোনিয়া দ্রুত নির্ণয় করার জন্য যে রোগ লক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন তা অত্যন্ত সহজ এবং এটির সাহায্যে স্বাস্থ্য কর্মী, এমনকি একটু সচেতন অভিভাবকরাও এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন। প্রধান নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ দু'টি হলো কাশি বা শ্বাসকষ্টের সাথে শিশুর শ্বাস দ্রুত নেয়া (Fast Breathing) ও শ্বাস প্রশ্বাসের সময় শিশুর বুকের পাঁজরের হাড়ের নিচের দিকে ভেতরে ঢুকে যাওয়া (Chest-indrawing) বা দেবে যাওয়া। এই দু'টি রোগ লক্ষণ শিশুকে শান্ত অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই বুঝা যায়। অভিভাবকরা এ দু'টি রোগের নিউমোনিয়ার লক্ষণ বুঝতে অসুবিধা হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। শিশু দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে কিনা তা শান্ত অবস্থায় শিশুর নিঃশ্বাসের সময় বুক উঠা-নামা পর্যবেক্ষণ ও ন্যূনতম পক্ষে তা এক মিনিট গণনা করে জানা সম্ভব। তবে শিশুর বয়স ভেদে তা ভিন্ন হয়। যেমন- দু'মাসের অনুর্ধ্ব বাচ্চাদের জন্য মিনিটে ৬০ বারের বেশি নিঃশ্বাস দ্রুত শ্বাসের লক্ষণ। পক্ষান্তরে ২ মাস থেকে এক বছরের বাচ্চাদের জন্য মিনিটে ৫০ বার বা তার বেশি ও এক বছরের উপরের শিশুর জন্য মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিউমোনিয়ার লক্ষণ। তবে দ্রুত শ্বাসের সাথে বুকের নিচের অংশ ভেতরের দিকে দেবে গেলে বুঝতে হবে শিশুর মারাত্মক নিউমোনিয়া (Severe Pneumonia) হয়েছে।
নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার
এ অবস্থায় রোগীকে অবশ্যই নিকটতম চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুন: নবজাতক শিশুর যত্ন - শিশুর জন্মের পর প্রয়োজনীয় টিপস্।
সাধারণতঃ কাশির সঙ্গে নিউমোনিয়ার সূত্রপাত ঘটে কিন্তু কাশিগ্রস্ত অধিকাংশ শিশুই নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয় না। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে- ব্রংকিওলাইটিস এবং হাঁপানির কারণে 'Chest indrawing' হতে পারে। যে সব ক্ষেত্রে শ্বাস প্রহণের সময় সাঁ সাঁ (Wheezing) শব্দ হয়, সেখানে সাঁ সাঁ শব্দ সহকারে যে সব শিশু শ্বাস টানছে এবং বুক শ্বাস গ্রহণের সময় ঢুকে যায় ও নিঃশ্বাস প্রতি মিনিটে ৬০-৭০ এর বেশি হয়, তাদেরকেও অবশ্যই নিকটতম চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিউমোনিয়ায় অধিকাশ মৃত্যুর ঘটনাই ঘটছে গ্রামাঞ্চলে। তবে শহরাঞ্চলে বস্তিবাসী বা দরিদ্র পরিবারে এদের সংখ্যাও কম নয়। এই শিশুদের বেশির ভাগই এন্টিবায়োটিক চিকিৎসা না পেয়ে অথবা চিকিৎসা করাতে দেরি করায় নিউমোনিয়ায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। অথচ নিউমোনিয়াতে এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা মরণ বাচনের সমস্যার সমাধান করতে পারে। সর্দিতে শিশুর নাক বন্ধ থাকলে তা পরিষ্কার করে দেবেন। প্রয়োজনে নাকের ড্রপ (ন্যাজাল ডিকনজেসট্যান্ট) ব্যবহার করা যাবে। জ্বর আর ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে।
প্রচুর তরল খাবার দেবেন। রোগীর পুষ্টির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রোগী খেতে না পারলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
একটু বড় শিশুকে গরম পানির ভাপে শ্বাস নিতে দিয়ে কাশি কমান আর শ্লেষ্মা আলগা করে দিন। বিশেষভাবে শুইয়ে কফ বের করলে কাজে লাগতে পারে।
আরো পড়ুন: টিকাদান কর্মসূচী - নবজাতকের টিকার তালিকা।
বাবা-মায়ের প্রতিঃ আগেই বলা হয়েছে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া রোগ। তাই আপনারা শহর বা গ্রামে যেখানেই থাকুন না কেন, শিশুর যে কোন অসুখে অবহেলা বা সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। শিশুকে খোলা-মেলা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে রাখুন। বাসস্থানের অবস্থা উন্নয়ন, হাঁচি-কাশির সময় রুমালের ব্যবহার, ধোঁয়া বহির্গমন ব্যবস্থা এবং এক ঘরে বেশি লোক না থাকার নিয়ম যদি মেনে চলা যায় তাহলে অনেক উপকার হবে। পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করলেও আপনার শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়া রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url