শিশুদের হাম হলে কি করনীয় ও যে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন
হাম ছয় মাস বয়স হতে ৮/১০ বছরের বালক-বালিকাদের হাম হতে পারে। তবে ৬ মাসের নিচের শিশুর সাধারণতঃ হাম হয় না। কারণ এর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে তার মায়ের কাছ থেকে প্লাসেন্টা-এর মধ্য দিয়ে। শিশুর জন্মগত প্রতিরোধ শক্তি মাত্র ছয় মাস থাকে।
হাম একটা সংক্রামক রোগ। সাধারণতঃ মিজ ভাইরাস এ রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী। হাঁচি-কাশি-সর্দির সঙ্গে সংক্রামক শিশুর নাক থেকে ভাইরাস বের হয় এবং সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমিত কাপড়-চোপড় থেকে সুস্থ শিশুর শরীরে ছড়াতে পারে।
কি করে বুঝা যাবে হাম রোগের লক্ষণ
রোগ সংক্রমিত হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পর হাম রোগের লক্ষণ দেখা যায়। শুরুতে সাধারণতঃ ঠাণ্ডার উপসর্গগুলি দেখা দেয়। রোগীর চোখ ছলছল করতে থাকে, লাল হয়ে যায়। চোখে আলো লাগলে কষ্ট হয়, নাক দিয়ে সর্দি ঝরে, হাঁচি, কাশি হতে থাকে। জ্বর হয় এবং তা বাড়তে থাকে। এসময় হাম হবে বলে বোঝা যায় না। অথচ এ সময়টাতেই হাম সংক্রমণের আশঙ্কা সর্বাপেক্ষা বেশি থাকে। কিন্তু প্রথম দু'দিনে যদি মুখের ভেতর পরীক্ষা করা হয় তাহলে লাল অংশের উপর নীলচে সাদা ছোট ছোট পিনের মাথার মতো দাগ দেখা যায়। এই দাগগুলোকে বলে "কপলিক স্পট"। এগুলো ২ দিনের মধ্যে মিলিয়ে যায় এবং হাম হওয়ার অন্যতম প্রধান হাম রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।
চতুর্থ কিম্বা পঞ্চম দিনে জ্বর একটু কমে যায় কয়েক ঘন্টার জন্যে, কিন্তু তারপর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং সাথে সাথে শরীরে হামের র্যাশ বা গুটি বের হয়। প্রথমে কানের পেছনে তারপর কপালে, গালের উপরে এবং ক্রমে সমস্ত মুখ ছড়িয়ে সারা শরীরে বের হয়। সবশেষে দেখা দেয় পায়ে। র্যাশগুলি প্রথমে লালচে দাগের (Macule) মতো মনে হয়, পরে তা লাল রং-এর দানাতে পরিণত হয়। র্যাশ পুরোপুরি বের না হওয়া পর্যন্ত শিশুর জ্বর খুব বেশি (প্রায় ১০৪° ফাঃ বা ১০৫° ফাঃ-এর উপরে) থাকে এবং শিশুকে খুবই অসুস্থ দেখায়। র্যাশ বেরিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে জ্বর কমতে থাকে। কয়েকদিন পরে দানাগুলো কালচে হয়ে ধীরে ধীরে খুশকির মতো ঝরে যায়। ত্বকের উপরেও যেমন হামের র্যাশ হয় তেমনি মুখের ভেতর, গলার ভেতরে র্যাশ হয়। ফলে শিশুর কাশি হয়।
আরো পড়ুন: স্ক্যাবিস চুলকানি দূর করার উপায় ও ঔষধের নাম।
শিশুদের হাম হলে কি করনীয়
হাম রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে হাম রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু এটা ভাইরাস সংক্রমণ, তাই চিকিৎসক এর উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। জ্বরের জন্যে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ শিশুকে খাওয়াতে হবে। সমস্ত শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করে দিতে হবে। শিশুকে প্রচুর পানি এবং তরল খাবার খাওয়াতে হবে। তার পুষ্টির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি তাকে প্রথম থেকেই অন্য শিশুদের কাছ থেকে সরিয়ে আলাদা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আছে এমন রুমে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হামের দানাতে সামান্য চুলকাতে পারে, এতে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ক্যালামাইন জাতীয় লোশন দেয়া যায়। অনেকে সাথে এন্টিহিস্টামিনও দিয়ে থাকেন। দানা শুকিয়ে ঝরে যাওয়ার পর গায়ে কালো বা বাদামী যে দাগ থাকে তা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়।
আরো পড়ুন: নবজাতক শিশুর যত্ন - শিশুর জন্মের পর প্রয়োজনীয় টিপস্।
হাম রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
হাম রোগ হলে শিশুর খাওয়ার তেমন কোন বিধি নিষেধ নেই। তবে শিশু সব ধরণের খাবার খেতে চায় না। তাই তরল জাতীয় খাবার যেমন দুধ, স্যুপ, দুধ-সুজি এসব শিশুকে খাওয়ানো যাবে। একটু বড় শিশুকে নরম ভাত, খিচুড়ি খাওয়ানো যাবে। এ সময়ে বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে। পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। জ্বর থাকাকালীন শিশু এমনিতেই খেতে চায় না। তাই জোর করে তাকে কোন কিছু খাওয়াতে চেষ্টা করবেন না।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url