মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা | মাম্পস হলে যে খাবার খাওয়া যাবে

মাম্পস্ বা কর্ণমূল প্রদাহ মাম্পস্ একটা মারাত্মক ব্যধি। এতে জ্বর হয়। প্যারোটিড গ্ল্যান্ড (চোয়াল ও থুতনির তলাকার লালাগ্রন্থি) ও গাল ফুলে যায়।

মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

মাম্পস এর লক্ষণ

শিশুর মাম্পস হয়েছে জ্বর, মাথা ধরা, গলার ব্যথা, কানের নিচে বা ভেতরে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণের সঙ্গে এ ব্যাধি শুরু হয়। এর পরে এক দিকের প্যারোটিড গ্ল্যান্ড ফুলে উঠে এবং খুব ব্যথা হয়। দু' একদিনের মধ্যেই অপর দিকের প্যারোটিড প্ল‍্যান্ড ফুলে ওঠে এবং খুব ব্যথা হয়। (কারও কারও শুধুমাত্র একদিকের গ্ল্যাণ্ডও ফুলে এবং ভালো হয়ে যায়। আবার কারও একদিকের প্ল্যান্ড আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর অপরদিকের চ্যাণ্ডটি আক্রান্ত হতে পারে)। রোগী কোন জিনিস চিবানোর সময় বা গিলতে ব্যথা অনুভব করে। টক জাতীয় কোন খাবার খেলে এই ব্যথা আরও বাড়ে।

আরও পড়ুন: শিশুদের হাম হলে কি করনীয়।  

মাম্পস কেন হয়

মাম্পস ভাইরাস নামে একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। ভাইরাসটি প্যারামাইক্সোভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ভাইরাসটি লালা গ্রন্থিগুলিকে লক্ষ্য করে এবং কাজ করে, বেশিরভাগ কানের কাছে প্যারোটিড গ্রন্থিগুলি, যা কালশিটে হয়ে যায় এবং ফুলে যায়।

মাম্পস সংক্রামিত ব্যক্তির লালায় উপস্থিত সংক্রামক শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা দ্বারা ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে প্রেরণ করা হয়, উদাহরণস্বরূপ, কথা বলা, হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে লালা। এমন ঘটনাও ঘটতে পারে যখন কোনও ব্যক্তি সংক্রামিত ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যবহৃত মাম্পস ভাইরাসযুক্ত পদার্থ বা বস্তু স্পর্শ করে মাম্পসের সংস্পর্শে আসে।

মাম্পস প্রাথমিকভাবে শিশুদের প্রভাবিত করে, যদিও প্রাপ্তবয়স্করাও এই রোগে আক্রান্ত হন। টিকা দেওয়ার মাধ্যমে মাম্পস প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এমএমআর (হাম, মাম্পস এবং রুবেলা) টিকা সাধারণত শৈশবকালে এই রোগগুলি থেকে রক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বাচ্চাদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা 

মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মাম্পস লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ব্যথা কমানোর জন্য রোগীকে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যাবে। তবে এ মাম্পস এর ঔষধ খাওয়াতে হবে শিশুর বয়স ও শারীরিক ওজন অনুযায়ী।

ফোলা সম্পূর্ণ না কমে যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুকে বিছানায় শুইয়ে রাখতে হবে। ফোলা কমে যাওয়ার পরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলে না পাঠানো ভাল।

মাম্পস্ হলে পেটের উপরের দিকে কারও কারও ব্যথা হয়। সাধারণত এই ব্যথা হয় মৃদু এবং নির্দিষ্ট কোন ঔষধ ছাড়াই যথাসময়ে কমে যায়। তা সত্ত্বেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

মাম্পস এর লক্ষণ দেখা দিলে শিশুর গিলতে ও চিবুতে খুব কষ্ট হয় এবং খুব বেশি ব্যথা হয়। মাম্পস হলে কি খাওয়া যাবে না অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন মূলত কয়েকটি বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত যেমন টক জাতীয় কোন খাবার খেলে এই ব্যথা আরও বাড়ে। তা ছাড়া শিশুর কোন খাবারে নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে যেহেতু গিলতে বা চিবিয়ে খাওয়ার সময় বেশি ব্যথা হয়, তাই শক্ত কোন খাবার না খেয়ে তরল জাতীয় খাবার যেমন দুধ, হরলিকস, স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ব্যথা কমে গেলে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক সব খাবারই শিশু খেতে পারবে।

মাম্পস রোগীর খাবার যে খাবার খাওয়া উচিত। 

মাম্পস আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য, নরম, সহজে গিলতে পারে এমন খাবার খাওয়া উচিত এবং মাম্পস রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ যা ফোলা লালা গ্রন্থিগুলিকে বেশি জ্বালাতন থেকে রক্ষা করে। যেমন -

  • নরম ফল : আপেল জুস্, কলা এবং রান্না করা।
  • নরম সবজি : সিদ্ধ করা আলু, ভালোভাবে সেদ্ধ করা গাজর এবং মটর।
  • স্যুপ: ঝোল-ভিত্তিক বা বিশুদ্ধ স্যুপ।
  • দুগ্ধ: দই।
  • নরম প্রোটিন : সিদ্ধ ডিম ইত্যাদি। 

মনে রাখা উচিত : মশলাদার বা শক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যা অনেক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। প্রচুর তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করাই বাঞ্চনীয়।

আরও পড়ুন: স্ক্যাবিস চুলকানি দূর করার উপায় ও ঔষধের নাম

মাম্পস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে মাম্পস রোগীর খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন -

  • অম্লীয় খাবার : সাইট্রাস ফল, টমেটো এবং জুস, কারণ এগুলো ফুলে যাওয়া গ্রন্থিগুলোকে জ্বালাতন করতে পারে।
  • মশলাদার খাবার : মশলা অস্বস্তি এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  • কঠিন বা খসখসে খাবার : বাদাম, চিপস এবং কাঁচা শাকসবজি চিবানো কষ্টদায়ক তাই না খেয়ে উত্তম।
  • মাংস: স্টেক বা অন্যান্য শক্ত মাংস চিবানো অস্বস্তিকর হতে পারে।
  • চিনিযুক্ত খাবার : অতিরিক্ত চিনি জ্বালাতনে সাহায্য করে এবং সেই সাথে ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দিতে পারে।

ক্রমবর্ধমান মাম্পস রোগের লক্ষণগুলি এড়াতে এবং খাওয়াকে আরও আরামদায়ক করতে সহায়তা করার জন্য নরম, হালকা খাবার বেছে নিন।

মাম্পস হলে কি গোসল করা যায়

হ্যাঁ, মাম্পস হলে গোসল করা যায়। আপনি মাম্পস নিয়ে গোসল করতে পারেন। গোসল, সাধারণভাবে, নিরাপদ এবং একজনকে সুস্থ ও সুন্দর মন বোধ করতে সাহায্য করে। তবে শুধু উষ্ণ পানি ব্যবহার করুন এবং এমন বেশি তাপমাত্রা পানি  এড়িয়ে চলুন মাম্পস ফুলে যেতে পারে।  একই সাথে বিশ্রাম এবং প্রচুর তরল পান  করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url