প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

কান পাকা প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুরা যেসব রোগে প্রায় ভোগে এর মধ্যে কান পাকা হল অন্যতম। নানা কারণে শিশুর কান পাকতে পারে। যেমন কানে পানি বা দুধ যাওয়া। প্রাপ্তবয়স্করা যদিও শিশুদের তুলনায় কান পাকা রোগে কম ভুগছেন। সাধারণতঃ গোসল করানোর সময় কানে পানি যেতে পারে। চিৎ হয়ে শিশু খাওয়ার সময় ইউস্টেশিয়ান নালী (গলা ও কানের সংযোগ নালী) দিয়ে দুধ কানে যেয়ে কান পাকা রোগ হতে পারে। শিশু শুইয়ে ফিডারে দুধ খাওয়ার সময় মুখের দু'পাশ থেকে দুধ গড়িয়ে কানে যেতে পারে। চিৎ হয়ে কাঁদলেও চোখের পানি শিশুর কানে যেতে পারে।

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

তা ছাড়া শ্বাসনালীর উপরিভাগের কোন রোগ হতে কান পাকতে পারে। সর্দির কারণেও কোন কোন ক্ষেত্রে কান পাকতে পারে।

আরও পড়ুন: স্ক্যাবিস চুলকানি দূর করার উপায় ও ঔষধের নাম। 

কানের সংক্রমণ, যা ওটিটিস নামেও পরিচিত, সংক্রমণের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের কান পাকা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিচে  কিছু কান পাকা রোগের সাধারণ লক্ষণ রয়েছে:

শিশুদের জন্য কান পাকা রোগের লক্ষণ :

  • বিড়ম্বনা : বিড়ম্বনা হল অস্বাভাবিক অস্থিরতা বা কান্না, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে দেখা দেওয়া।
  • কান টানানো : কান টানানোর মাধ্যমে শিশুরা এটি কানের অস্বস্তি নির্দেশ করে।
  • ঘুমতে সমস্যা : কানে ব্যথার কারণে শিশুদের ঘুমানো ঘন ঘন বা জেগে উঠতে অসুবিধা হয়ে।
  • শ্রবণ সমস্যা : কোনো শব্দে শিশুদের সাড়া না দেওয়া শুনতে অসুবিধা হচ্ছে এটা বাচ্চার কান পাকার লক্ষণের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 
  • ভারসাম্য নষ্ট : হাঁটার সময় অস্থিরতা এবং প্রায়ই কান চুলকানো।
  • জ্বর : 100°F (37.8°C) বা তার বেশি তাপমাত্রা সাধারণ।
  • তরল নিষ্কাশন : কান থেকে পুঁজের মতো তরল বের হতে পারে। যা শিশুদের কান পাকা রোগের লক্ষণ একই বিশেষ লক্ষণ প্রকাশ পায়। 
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া : গিলতে গিয়ে অস্বস্তির কারণে খাওয়া বা পান করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করা।

প্রাপ্তবয়স্কদের কান পাকা রোগের লক্ষণ :

  • কানে ব্যথা: কানে তীক্ষ্ণ, আকস্মিক বা নিস্তেজ, অবিরাম ব্যথা অনুভুত হওয়া।
  • শ্রবণশক্তি হ্রাস: আক্রান্ত কানে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া।
  • নিষ্কাশন: তরল হলুদ, পরিষ্কার বা রক্তাক্ত, কান থেকে গড়িয়ে বের হওয়া।
  • চাপ : কানে চাপ অনুভব করা।
  • মাথা ঘোরা : মাথা ঘোরানো বা ভারসাম্য হারানোর অনুভূতি অনুভুত হওয়া।
  • জ্বর : মাঝে মাঝে, হালকা জ্বর হতে পারে।
  • টিনিটাস : কানে বাজছে বা গুঞ্জন শব্দ  কানে অনুভুত হওয়া।

যদি এই উপরোক্ত লক্ষণগুলি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কান পাকা রোগের লক্ষণ দেখা যায়। যার মাধ্যমে খুব সহজেই প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুর কান পাকা রোগ হয়েছে কিনা তা বোঝা সম্বব। যদি এই লক্ষণ অব্যাহত থাকে বা আরও খারাপ হয়, তবে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চিকিত্সা না করা কানের সংক্রমণ জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

শিশুর কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা 

কানের সংক্রমণের চিকিৎসা তাড়াতাড়ি করা দরকার। তা না হলে এর থেকে অন্য কোন জটিলতা হতে পারে। কান থেকে পুঁজ বেরুলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা মেনে চলা উচিত। কানের পূজ পরিষ্কার করে দেয়া উচিত। সর্দি থাকলে শিশুর নাকও পরিষ্কার রাখা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

কানের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াবেন। তা ছাড়া ব্যথা কমানোর জন্য কানের পাশে ওম্ গরম সেঁক দিলে উপকার হয়। 

একবার কান পাকা রোগ হয়ে ভাল হয়ে যাওয়ার পরও সাবধান হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: শিশুদের হাম হলে কি করনীয়

কান পাকা রোগ প্রতিরোধের উপায়

১। সাধারণতঃ গোসলের সময় কানে পানি যেতে পারে। তাই গোসলের আগে ছোট্ট তুলো ভিজিয়ে চিপে নিয়ে দু'কানে দেয়া উচিত এবং গোসলের পর পরই তা খুলে ফেলতে হবে। এতে কানে পানি যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

২। শিশুকে বোতলে বা ফিডারে দুধ বা পানি খাওয়াবেন না। তা ছাড়া শিশুকে চিৎ করে শুইয়ে খাওয়াবেন না। কারণ এতে গলার সাথে কানের যে যোগাযোগ রয়েছে সেই ইউস্টেশিয়ান নালী দিয়ে দুধ কানে যেতে পারে। 

৩। সর্দি হলে বা কান বন্ধ হলে নাক বন্ধ করে কান ফুলোনো উচিত নয়। নাক পরিষ্কার রাখা উচিত। 

8। শিশুদেরকে নাক মুছতে শেখান।

কান পাকার ঘরোয়া চিকিৎসা

গোসল করার সময় অথবা শিশুকে গোসল করানোর সময় অসাবধানতায় অনেকের কানে পানি যায়। কানে পানি গেলে সংগে সংগে তা গড়িয়ে বের হতে পারে না। কারণ কানের ভেতরটা ইংরেজি 'এস' (S) আকৃতির। কানে পানি গেলে অনেকেই কানে আরও পানি দিয়ে কান ঝাঁকিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু যাদের কানে বারে বারে পূঁজ হয় কিংবা খৈল জমে (wax) থাকে, তাদের এতে বিপত্তি ঘটতে পারে। পানি তো বের হয়-ই না বরং কান ভারী হয়ে যেতে পারে। কিংবা আরও ইনফেকশান হতে পারে। পরিষ্কার কানে পানি গেলে কিছুই করার দরকার হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি বাষ্প হয়ে উঠে যায়। কানের ভারী ভাবটা কমে যায়। যদি না কমে বা বাড়তে থাকে তা হলে বুঝতে হবে কানে আগেই খৈল বা ময়লা ছিল, পানি পেয়ে সেই খৈল ফুলে ওঠে কানের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কানের খৈল বের করার ব্যবস্থা না করলে এই ভারী ভাবটা কাটবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url