বাংলাদেশের মানুষের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয়

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের মানুষের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় বাঙালি একক কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী নয়। তাই বাঙালি মানুষের বাহ্যিক দৈহিক আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনায় কোন বিশুদ্ধ নরগোষ্ঠীর অস্তিত্ব দেখা যায় না। মূলত প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ বিরোধ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগে দ্রাবিড়রা ও আর্যরা খ্রিষ্ট পূর্ব ১৫০০ অব্দে আফগানিস্তানের পথ ধরে এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে মঙ্গোলীয়রা ভারতে প্রবেশ করে। দ্রাবিড়রা সিন্ধু অঞ্চলে এবং আর্যরা ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। এ মানবগোষ্ঠীই বর্তমান বাঙালির পূর্বপুরুষ বলে অনেকে মনে করেন।

বাংলাদেশের মানুষের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয়

বাংলাদেশের মানুষের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয়

ড. আর.সি. মজুমদারসহ অনেক গবেষক ও পণ্ডিতরা মনে করেন যে, নিষাদ বা নিগ্রিটো জাতির মানুষ বাংলাসহ ভারতের অনেক অঞ্চলের আদি মানুষ ছিল। তারপর ইন্দোচীন থেকে অস্টিক জাতির মানুষ আসামের উপত্যকা দিয়ে বাংলা অঞ্চলে প্রবেশ করে। এর পর আসে দ্রাবিড় ভাষাভাষী আলপাইন জাতির লোক। অনেক ঐতিহাসিক এদেরকেই বাঙালি জাতির আদি পুরুষ বলে মনে করেন।


ঐতিহাসিক নীহারঞ্জন রায় তাঁর বাঙালির ইতিহাস গ্রন্থে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির উৎপত্তি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি মনে করেন, অনেক পরিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলীয় ও দ্রাবিড় নৃগোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার-বিশ্বাস হিন্দু সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে। এদেশে নৃ-গোষ্ঠী গঠনে আদি অস্ট্রেলীয় ও দ্রাবিড় জাতির প্রভাব বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

নৃবিজ্ঞানী বিরাজ শংকরগুহ বাঙালিদের দ্রাবিড়ীয়, অস্ট্রেলীয়, মঙ্গোলীয় ও ককেশীয় এ চার ভাগে ভাগ করেছেন। দক্ষিণ ভারতে উৎপাদিত কতিপয় অন্যান্য উপাদানসহ প্রধানত দ্রাবিড়ীয় শ্রেণি অন্তর্গত। এরা মূলত সিলেটের অধিবাসী। প্রধানত আদি অস্ট্রেলিয় আগত সাঁওতাল ও খালিয়ারা বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী এর নাচোল ও পোরশা এবং ঠাকুরগাঁও এর হরিপুর, ও রানীশংকৈলে দেখতে পাওয়া যায়।


উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক গঠন ও বৈশিষ্ট্যের সাথে বিভিন্ন নর গোষ্ঠীর রক্তধারা এমনভাবে সংমিশ্রিত হয়েছে যে, বাঙালির নিজস্ব দেহ বৈশিষ্ট্য হিসেবে আর কিছুই বজায় নেই। কারণ বাঙালির দেহের প্রতিটি অংশে ভিন্ন ভিন্ন নরগোষ্ঠীর পরিচয় পাওয়া যায়। আর এই ধারাই বাঙালির খাদ্য, কৃষি, শিল্প, পোশাক, ভাষা, লিপি, ধর্ম, দর্শন, চিন্তা, বিজ্ঞান, কলা ও চেতনাকে প্রভাবিত করেছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url