তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয় | moner ischha puroner doya
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়—এই প্রশ্নটা আমাদের অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। কারণ, তাহাজ্জুদ নামাজের সময়টা তো একেবারে বিশেষ, একান্তই আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার মুহূর্ত। এই সময়ে আল্লাহর কাছে মন খুলে চাওয়া, নিজের সব ইচ্ছা, সব আকুতি তাঁর কাছে জানানো—এটা তো আমাদের হৃদয়ের গভীর থেকে আসে। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আপনি যেকোনো দোয়াই পড়তে পারেন, যেকোনো ভাষায়। আল্লাহ তো আপনার মনের কথাও জানেন, আপনার আবেগও বুঝেন। তবে কিছু দোয়া আছে, যা পড়লে আপনার মনের ইচ্ছা পূরণের আশা করা যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর ইবাদত করার একটি বিশেষ সুযোগ। এই সময়টা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, আল্লাহ নিজেই কুরআনে বলেছেন, "রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো, এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে মাকামে মাহমুদে (উচ্চ মর্যাদায়) পৌঁছে দেবেন।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৯)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়লে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
এই সময়টা এতই পবিত্র এবং বিশেষ যে, এই সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, 'কে আছো যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দেব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?'" (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে আপনি আল্লাহর কাছে যা চাইবেন, তিনি তা পূরণ করবেন, ইনশাআল্লাহ।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কোন দোয়া পড়বেন ?
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আপনি যেকোনো দোয়াই পড়তে পারেন। তবে কিছু বিশেষ দোয়া আছে, যা পড়লে আল্লাহর রহমত আপনার দিকে ধেয়ে আসবে। এই দোয়াগুলো নবী-রাসুলগণও পড়েছেন, এবং আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেছেন।
১. ইউনুস (আ.)-এর দোয়া
"লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালিমিন।"
(সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭)
এই দোয়াটি ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। তিনি মাছের পেটে অন্ধকারে থাকা অবস্থায় এই দোয়া পড়েছিলেন, আর আল্লাহ তাঁর সব কষ্ট দূর করেছিলেন। এই দোয়া পড়লে আল্লাহর রহমত আপনার দিকে ধেয়ে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
এই দোয়ার অর্থ হলো: "তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।"
এই দোয়া পড়লে আপনি আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন, আর তাঁর রহমত কামনা করছেন। আল্লাহ তো গুনাহগারদের দোয়া কবুল করেন। তাই এই দোয়া পড়লে আপনার মনের ইচ্ছা পূরণের আশা করা যায়।
২. মুসা (আ.)-এর দোয়া
"রাব্বি ইন্নি লিমা আনজalta ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।"
(সূরা কাসাস, আয়াত ২৪)
এই দোয়াটি মুসা (আ.)-এর দোয়া। তিনি যখন সব হারিয়ে ফেলেছিলেন, তখন আল্লাহর কাছে এইভাবে সাহায্য চেয়েছিলেন। এই দোয়া পড়লে আল্লাহ আপনার মনের ইচ্ছা পূরণের পথ তৈরি করে দেবেন, ইনশাআল্লাহ।
এই দোয়ার অর্থ হলো: "হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।"
এই দোয়া পড়লে আপনি আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন, আর তাঁর রহমত কামনা করছেন। আল্লাহ তো অসহায়দের ডাকে সাড়া দেন। তাই এই দোয়া পড়লে আপনার মনের ইচ্ছা পূরণের আশা করা যায়।
৩. আয়ুব (আ.)-এর দোয়া
"আন্নি মাসসানিয়াদ দুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমিন।"
(সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৩)
এই দোয়াটি আয়ুব (আ.)-এর দোয়া। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন আল্লাহর কাছে এইভাবে সাহায্য চেয়েছিলেন। এই দোয়া পড়লে আল্লাহ আপনার সব কষ্ট দূর করবেন, ইনশাআল্লাহ।
এই দোয়ার অর্থ হলো: "নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট স্পর্শ করেছে, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।"
এই দোয়া পড়লে আপনি আল্লাহর কাছে নিজের কষ্টের কথা জানাচ্ছেন, আর তাঁর দয়া কামনা করছেন। আল্লাহ তো দয়ালু, তিনি আপনার কষ্ট দূর করবেন।
৪. নিজের ভাষায় দোয়া করা
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আপনি নিজের ভাষায়ও দোয়া করতে পারেন। আল্লাহ তো আপনার মনের কথাও জানেন, আপনার আবেগও বুঝেন। আপনি যা চাইবেন, আল্লাহ তা পূরণ করবেন, ইনশাআল্লাহ।
নিজের ভাষায় দোয়া করার সময় আপনি এইভাবে বলতে পারেন:
"হে আল্লাহ, তুমি তো আমার সব জানো। তুমি তো আমার হৃদয়ের গভীরের কথাও জানো। আমি যা চাই, তুমি তা আমাকে দাও। আমার সব ইচ্ছা পূরণ করো। তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তুমিই আমার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী।"
এইভাবে নিজের ভাষায় দোয়া করলে আপনি আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। আর আল্লাহ তো আপনার ডাকে সাড়া দেবেন, ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুন : জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া কবুল হওয়ার শর্ত
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া কবুল হওয়ার কিছু শর্ত আছে। এই শর্তগুলো মেনে চললে আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন, ইনশাআল্লাহ।
১. ইখলাস: দোয়া করতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে দোয়া করা যাবে না।
২. হালাল রুজি: হালাল উপার্জন থেকে খাবার খেতে হবে। হারাম খাবার খেলে দোয়া কবুল হয় না।
৩. ধৈর্য ধরা: দোয়া করার পর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আল্লাহর সময় আসার আগেই হতাশ হওয়া যাবে না।
৪. গুনাহ থেকে দূরে থাকা: গুনাহ করা থেকে দূরে থাকতে হবে। গুনাহ করলে দোয়া কবুল হয় না।
৫. নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া: নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত ইবাদত করলে আল্লাহ খুশি হন, আর দোয়া কবুল করেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া কবুল হওয়ার গল্প
ইতিহাসে অনেক গল্প আছে, যেখানে মানুষ তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া করেছে, আর আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেছেন।
একবার এক যুবক নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ত। সে আল্লাহর কাছে একটি বিশেষ ইচ্ছা জানাত। একদিন সে খুব কষ্টে পড়ল, আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইল। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন, আর তার সব কষ্ট দূর করলেন।
এই গল্প থেকে বোঝা যায়, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তো আমাদের চেয়েও আমাদের ভালো জানেন। তিনি আমাদের জন্য যা ভালো, তাই দেবেন। শুধু তাঁর উপর ভরসা রাখুন, আর নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন।
শেষ কথা,
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে আপনি আল্লাহর কাছে যা চাইবেন, তিনি তা পূরণ করবেন, ইনশাআল্লাহ। তাই, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এই দোয়াগুলো পড়ুন, আর নিজের মনের ইচ্ছাগুলো আল্লাহর কাছে জানান। আল্লাহ তো আমাদের চেয়েও আমাদের ভালো জানেন। তিনি আমাদের জন্য যা ভালো, তাই দেবেন। শুধু তাঁর উপর ভরসা রাখুন, আর নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আপনার সব ইচ্ছা পূরণ করুন, আমিন। ❤️
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url