নামাজের ফরজসমূহ ১৩ টি (আহকাম ৬ টি ও আরকান ৭ টি)
নামাজের ফরজ কয়টি ?
নামাজের ফরজসমূহ আহকাম ও আরকান দুইভাগে বিভক্ত। নামাজের আহকাম ৬ টি ও নামাজের আরকান ৭ টি। মোট নামাজের ফরজ সমূহ ১৩ টি। এখানে ১৩ টি ফরজ সমূহ বিস্তারিত রয়েছে।
নামাজের ফরজসমূহ
নামাজের আহকাম
নামাজের আহকাম হল নামাজের পূর্ব শর্ত বা নামাজ পড়ার আগে করণীয় কাজ। নামাজ পড়া বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রথম যেই শর্ত পালন করা প্রয়োজন তা হল নামাজ পড়ার জন্য সঠিক সময় হওয়া। নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোন নামাজ আদায় করলে তা সেই ওয়াক্ত নামাজের ফরজ আদায় হয় না। নামাজ পড়ার জন্য নামাজের বাহিরে নামাজের ছয়টি ফরজ সমূহ রয়েছে। যেগুলার কোনো একটি ভঙ্গ হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। যা নামাজের আহকাম।
আরো পড়ুন: জুমার দিনের বিশেষ আমল ও ফজিলত।
১. শরীর পরিশুদ্ধকরণ বা শরীর পাক : গোসল করা ফরজ এমন অপবিত্র অবস্থায় বা অযু না করে নামাজ পড়া জায়েয নয়। যদি ওযুর জন্য পানি না থাকে, অথবা যদি এমন কোন ওজর থাকে যে পানি ব্যবহার করা যায় না, তাহলে তায়াম্মুম করা: শরীর শুকিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে যে, নাপাকির কারণে গোসল করা ফরজ, তা হল 'হাদছে আকবর' বড় নাপাকী বা বড় অপবিত্রতা এমন অবস্থা হলে গোসল করতে হবে। এবং যদি ছোট নাপাকি 'হাদছে আছগার' বা ছোট অপবিত্রতা, থেকে পাক হওয়ার জন্য ওযু করতে হয়। নাপাকি ছোট বা বড় কোন প্রকার অপবিত্রতার সাথে নামাজ পড়া সঠিক নয়।
২. জামাকাপড় পাক : নামাজের সময় যে সমস্ত কাপড় পরেন তা অবশ্যই পাক হতে হবে। যদি কাপড় নাপাক হয় এবং অন্য কোন পরিচ্ছন্ন বা পাক কাপড় সম্ভব না হয় তবে, তার উচিত নামাজ পড়ার আগে কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে নেওয়া। যদি এমন কোনো ওজর হয় যে, কাপড় পরিষ্কার করার জন্য পানি না পাওয়া সম্বব নয় ও অন্য কোনো পরিষ্কার কাপড় সংগ্রহ করা সম্ভব নয় তাহলে সেই নোংরা কাপড় দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। যা শুধুমাত্র এমন ওজরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আরো পড়ুন: সাহু সিজদার নিয়ম ও সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার কারণ।
যদি এমন হয়, কাপড় এবং শরীর দুটোই নাপাক। তাহলে উত্তম রূপে শরীর ও কাপড় পাক করে নিতে হবে। যদি এমন কোনো পরিস্তিতি ঘটে যে, পানি সল্পতার কারণে শরীর পাক করলে কাপড় পরিষ্কার করা সম্বব নয়। সেক্ষেত্রে, প্রথমে কাপড় পাক করতে হবে। ওযু ও গোসল না করে তায়াম্মুম করবে।
৩. পরিষ্কার স্থান বা জায়গা পাক : অপরিষ্কার জায়গা বা অপরিষ্কার বিছানায় নামাজ পড়া জায়েজ নয়। যে স্থানে নামাজ পরিবে সে স্থান পাক পবিত্র হওয়া বাঞ্চনীয়। হাঁটু, হাত ও কপাল যা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মাটি, ফ্লোর স্পর্শ করে তা পাক হতে হবে। হাঁটু, হাত ও কপাল যা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে স্পর্শ করে তা ব্যাতিত অনন্য স্থান নাপাক হলে নামাজ সঠিক হবে।
৪. ছতর ঢাকা : পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ছতর ঢাকতে হবে, নারীর ক্ষেত্রে মুখমণ্ডল, কব্জি ও পা ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশ ঢাকতে হবে এবং এটা ফরজ। দাসীর ক্ষেত্রে নাভি থেকে পা ও পেট ও পিঠ পর্যন্ত ঢাকতে হবে এবং দাসীদের ক্ষেত্রে এটা ঢাকা ফরজ। এই নিয়ম থেকে বিচ্যুত হওয়ার অর্থ হবে নামাজ শুদ্ধ নয়।
৫. কেবলামুখী হইয়া নামাজ পড়া : কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া ফরজ। কা'বা শরীফ বাংলাদেশ হতে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। তাই পশ্চিম দিকে মুখ করে নামাজ পড়া আমাদের জন্য ফরজ।
আরো পড়ুন: জুমার দিনের ১৫ টি সুন্নত।
মনে রাখা জরুরি, কেউ নতুন জায়গায় যাওয়ার ফলে যদি দিক নির্ণয় করা সম্বব না হয় এবং কাউকে জিজ্ঞেস করার মতো কাউকে পাওয়া না যায়। এ ক্ষেত্রে নিজের মন থেকে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেই দিককে কেবলা বলিয়া সাক্ষ্য দিবে সেইদিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়বে। এভাবে নামাজ পড়ার পর যদি কেউ জানতে তার কেবলা সঠিক ছিল না তাহলে সেই নামাজ আবার পড়তে হবে না।
৬. নিয়ত করা : নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে নিয়ত অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত করার ক্ষেত্রে মনের নিয়তই আসল। কোন সময় কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়বে, কোন ধরনের নামাজ পড়বে এবং কত রাকাত পড়বে তা নির্ধারণ করা ফরজ। নিয়ত মৌখিকভাবে উচ্চারণ করা ভাল। নিয়ত করার ক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন, মনে নিয়ত না করে শুধু মাত্র মুখে নিয়ত করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না সাথে সাথে মনে মনে নিয়ত করতে হবে।
নামাজে আরকান
নামাজের ফরজসমূহের আরকান সাতটি। নামাজের ভিতরে সমূহকে নামাজের আরকান' বলা হয়।
১. তাকবিরে তাহরিমা বলা : নামাজ শুরু করার পূর্বে 'আল্লাহু আকবার' বলে নামাজ শুরু করা। যা হল তাকবিরে তাহরিমা। ধরুন, জামাত হচ্ছে আপনি এসে নামাজ দেখছেন ইমাম রুকুতে চলে গিয়েছেন তাড়াতাড়ি নামাজ ধরার জন্য আপনিও রুকুতে চলে গিয়েছেন এ ক্ষেত্রে আপনার নামাজ শুদ্ধ হবে না। প্রথমে আল্লাহু আকবার' বলে নামাজ শুরু করতে হবে।
আরো পড়ুন: কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত।
২. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া : দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ। নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। তবে, রোগ বা অসুস্তহতার কারণে এমন ওজর হলে বসে নামাজ পড়া যেতে পারে বা যেইভাবে নামাজ পড়া সম্বব সে ভাবে নামাজ পড়া যেতে পারে।
৩. কোরান তেলাওয়াত বা কেরাত পাঠ করা : সূরা ফাহিতা বা আলহামদু সূরা পড়ার পর কোরান শরীফের কিছু আয়াত বা কোন সূরা পাঠ করা।
৪. রুকু করা : নামাজের ফরজ সমূহের একটি হলো রুকু করা। ইমাম যেভাবে রুকু করে নামাজ পড়ার আগে সেদিকে খেয়াল রাখা এবং সেভাবে রুকু করা। খেয়াল রাখা প্রয়োজন রুকুতে গিয়ে ঝুঁকে না পড়ে এবং হাঁটুতে হাত দেওয়ার পরই সিজদায় চলে না যাওয়া। এটা করা যাবে না এবং এটি করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
আরো পড়ুন: সালাতের দৈহিক ও মানসিক উপকারিতা।
৫. সেজদা করা : সেজদার ক্ষেত্রে আগে দুই হাত মাটিতে তারপর নাক স্পর্শ তারপর কপাল স্পর্শ করবে। না বুঝলে ইমাম কে জিজ্ঞাস করা বাঞ্চনীয় ও শিখে নেওয়া প্রয়োজন।
৬. শেষ-বৈঠক করা : যে কয়েক রাকাত পড়বে সেই কয় রাকাত নামাজ শেষ হলে শেষ-বৈঠক করবে এবং এটি ফরজ।
৭. নামাজ থেকে বাহির হওয়া : শেষ-বৈঠক শেষ জিকির করে দোয়া বা প্রার্থনা করে মসজিদে বা নামাজে করা যায় না এমন কাজ থেকে বিরত থেকে মসজিদ থেকে বাহির হওয়া উত্তম।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url